সেরে ওঠো মেয়ে, প্রার্থনায় সারা দেশ

কখনও কমে যাচ্ছে পালস রেট। কখনও প্রবল শ্বাসকষ্ট। মেডিক্যাল বুলেটিন আবার কখনও জানিয়েছে রক্তে কমে গিয়েছে অনুচক্রিকা। গত ১৬ তারিখের পর থেকে এরকমই হাজারো প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে নির্যাতিতা তরুণী। তিন তিনবার অস্ত্রোপচারও তাঁর অদম্য প্রাণশক্তিকে এতটুকুও দমাতে পারেনি। তরুণীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের প্রহর কাটিয়েছে গোটা দেশ। গতকাল ওই তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরে। মেয়েটির সঙ্গে রয়েছে গোটা দেশের শুভকামনা। সবার চাহিদা এখন একটাই। মেয়েটি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

Updated By: Dec 27, 2012, 08:50 AM IST

কখনও কমে যাচ্ছে পালস রেট। কখনও প্রবল শ্বাসকষ্ট। মেডিক্যাল বুলেটিন আবার কখনও জানিয়েছে রক্তে কমে গিয়েছে অনুচক্রিকা। গত ১৬ তারিখের পর থেকে এরকমই হাজারো প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে নির্যাতিতা তরুণী। তিন তিনবার অস্ত্রোপচারও তাঁর অদম্য প্রাণশক্তিকে এতটুকুও দমাতে পারেনি। তরুণীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের প্রহর কাটিয়েছে গোটা দেশ। গতকাল ওই তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরে। মেয়েটির সঙ্গে রয়েছে গোটা দেশের শুভকামনা। সবার চাহিদা এখন একটাই। মেয়েটি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
১৬ ডিসেম্বর
দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হলেন এক তরুণী। পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় তাঁকে। মুখে ও পেটে লোহার রড দিয়ে নৃশংসভাবে মারে দুষ্কৃতীরা।
১৭ ডিসেম্বর
অন্ত্রে মারাত্মক আঘাত নিয়ে ভর্তি সফদরজং হাসপাতালের আইসিইউতে। রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। হয় পরপর অস্ত্রোপচার।
১৮ ডিসেম্বর
সকাল থেকেই অবনতি হয় অবস্থার। বেলার দিকে চিকিত্সকদের দাবি, কিছুটা ভাল আছেন তরুণী। একই সঙ্গে জানানো হয় বিপদ কাটেনি। পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে ৪৮ থেকে ৭২ঘণ্টা।
১৯ ডিসেম্বর
পাঁচটি অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয় ক্ষুদ্রান্ত্রের পচন ধরা অংশ। জানানো হয় অবস্থা সঙ্কটজনক।
২০ ডিসেম্বর
রক্তে অনুচক্রিকা এবং অন্য কণিকা মাত্রা কমতে শুরু করে। নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস নিলেও ভেন্টিলেশন থেকে বের করার ঝুঁকি নেননি চিকিত্সকেরা।
২১ ডিসেম্বর
স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেওয়ায় বেশ কিছুক্ষণ রাখা হয় ভেন্টিলেটর ছাড়াই। কিছুটা বাড়ে অনুচক্রিকার সংখ্যাও। কিন্তু বেড়ে যায় বিলিরুবিন ও শ্বেতকণিকাও। দেখা দেয় সেপসিসের আশঙ্কা।
২২ ডিসেম্বর
আবার একটু ভাল খবর। ভেনিটিলেটর ছাড়া শ্বাসপ্রশ্বাস। ডাল আর আপেলের রস খাচ্ছেন তরুণী। এমনটাই জানান চিকিতসকেরা।
২৩ ডিসেম্বর
ফের অবস্থার অবনতি। শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা হওয়ায় ফের ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। সংক্রমণ রুখতে দেওয়া হয় কড়া অ্যান্টিবায়োটিক।
২৪ ডিসেম্বর
পেটের ভিতর শুরু হয় রক্তক্ষরণ। অনুচক্রিকা কমে যাওয়ায় দেওয়া হয় চার বোতল প্লাজমা।
২৫ ডিসেম্বর
শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি। পেটের মধ্যে রক্তক্ষরণ কমেছে। তবে রাখা হয় ভেন্টিলেশনেই। রাতে পালস রেট নেমে যায় পঞ্চাশের নীচে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অবস্থার উন্নতি হয়।
২৬ ডিসেম্বর
শেষপর্যন্ত সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ষোলো তারিখ রাত থেকে সফদরজং হাসপাতালের আইসিইউতে শুয়ে নিজের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের লড়াইটা শুরু করেছিলেন ওই তরুণী। আর শনিবার সকাল থেকে তাঁর প্রতিবাদে ভাষা যোগ করেছিল রাজধানী  দিল্লি। নজিরবিহীন প্রতিবাদ। শুধু এই গণধর্ষণকাণ্ড নয়, প্রতিবাদে উঠে এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হওয়া মহিলাদের সম্মিলিত কণ্ঠ। আর এই সম্মিলিত স্বরই হয়তো সকলের অলক্ষ্যে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ওই তরুণীকে জুগিয়ে গিয়েছে হার না মানার শক্তি। ভেন্টিলেটরে থাকা প্যারা মেডিক্যালের ওই ছাত্রীর সেই অদম্য প্রাণশক্তিকে কুর্নিশ করেছেন চিকিত্সকেরাও। দেশজুড়ে প্রতিবাদের জেরে তরুণীর চিকিত্সার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। ধর্ষণকাণ্ডকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এসেছে শীলা দীক্ষিত সরকার এবং পুলিস প্রশাসনের চরম দ্বন্দ্ব। কিন্তু, সবকিছু ছাপিয়ে সামনে চলে এসেছে নির্যাতিতার আরোগ্য কামনায় প্রার্থনা। তাই বুধবার রাতে যখন সিঙ্গাপুরে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নির্যাতিতা তরুণীকে তখন তাঁর সঙ্গে ছিল গোটা দেশের শুভকামনা।

.