রাহুল কি কংগ্রেসের 'বাহাদুর শাহ'!
১৯ বছর পর কংগ্রেস সভাপতির পদে পরিবর্তন এল। তবে পরিবর্তন হয়নি পরিবারতন্ত্রে। ফের গান্ধী-নেহেরু পরিবারের সদস্যই কংগ্রেসের সভাপতি হলেন। সোমবার সর্বসম্মতিক্রমে রাহুল গান্ধীকে স্থলাভিষিক্ত করা হল কংগ্রেস সভাপতির পদে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ১৯ বছর পর কংগ্রেস সভাপতির পদে পরিবর্তন এল। তবে পরিবর্তন হয়নি পরিবারতন্ত্রে। ফের গান্ধী-নেহেরু পরিবারের সদস্যই কংগ্রেসের সভাপতি হলেন। সোমবার সর্বসম্মতিক্রমে রাহুল গান্ধীকে স্থলাভিষিক্ত করা হল কংগ্রেস সভাপতির পদে।
২০১৯ লোকসভায় রাহুলকে সামনে রেখে লড়তে চায় কংগ্রেস। গুজরাট নির্বাচনের ফলাফলের আগেই পুত্র রাহুলের হাতে তাই ব্যাটন তুলে দিলেন সনিয়া গান্ধী। রাহুলের হাতে ব্যাটন আসার পাশাপাশি কংগ্রেস অন্দরে কিন্তু একটি 'কাল্পনিক প্রশ্ন' ঘোরাঘুরি করছে। এবার তো না হয় রাহুল হলেন, এর পর কে? আগামী দিনে রাহুল গান্ধী-নেহেরু পরিবারের কোন সদস্যের হাতে ব্যাটন তুলে দেবেন? সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই গান্ধী ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতাদের কাছে। কেউ কেউ তো মুঘল সম্রাজের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ-র সঙ্গেও তুলনা করছেন রাহুল গান্ধীকে।
আরও পড়ুন- যুবরাজই এবার মহারাজ
কিন্তু হঠাত্ এমন তুলনা কেন?
বাবরের হাত ধরে ১৫২৬-তে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর প্রায় ৩০০ বছর রাজত্ব করেছে ওই বংশ। কিন্তু মুঘল সম্রাজ্যের সলতে নিভে যায় ১৮৫৭-তে বাহদুর শাহ জাফরের আমলে। অন্যদিকে কংগ্রেসে গান্ধী-নেহেরুর শাসন একশো বছর পূর্ণ করবে ২০১৯ সালে। সেদিক থেকে বছর সাতচল্লিশের অবিবাহিত রাহুলই এই মুহূর্তে শেষ 'বাদশা' বলা চলে। কংগ্রেসের কেউ কেউ বলছেন, রাহুল এই মুহূর্তে অবিবাহিত। আগামী দিনে রাহুলের পরবর্তী প্রজন্মকে যদি সভাপতি পদে বসতে হয় তাহলে ১৮ বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা বংশানুক্রিমকভাবে দাবিদার হতে পারেন। তবে প্রিয়ঙ্কার দুই সন্তান রাজনীতিতে আসবে কিনা তা সময়ই বলবে। তবে ব্যবসায়ী বঢরার পরিবারকে সেভাবে সরাসরি রাজনীতিতে দেখা যায়নি এতদিন। ফলে সংশয় থাকছেই।
এদিকে রাহুলের সভাপতি পদ নিয়ে এখনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাহুল যে সময় দলের দায়িত্ব পেলেন, ততদিনে কংগ্রেসের 'স্বর্ণযুগ' অতিক্রান্ত। ১৯৯৭ সালে সনিয়া সভাপতি হওয়ার পর দু-দফায় (২০০৪, ২০০৮) কেন্দ্রে সরকার গড়েছে কংগ্রেস। কিন্তু মোদী ঝড় আসার পর সরকার থেকে তো বটেই দেশের সিংহভাগ রাজ্যেই ক্ষমতা হারিয়েছে শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি। মোদী এবং বিজেপির কৌশলী প্রচারে অনেকটাই কোণঠাসা তৃণমূল স্তরের কংগ্রেস। ফলে খাদ থেকে দলকে তুলে আনা রাহুলের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে রয়েছে, দলের অভ্যন্তরেই 'বিক্ষুদ্ধ' কংগ্রেস নেতাদের কাঁটা। রাহুল সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ঠিকই, তবু শেহজাদ পুনওয়ালার মতো বেশ কয়েকজন বিক্ষুদ্ধ নেতা ইতিমধ্যেই অস্বস্থিতে ফেলেছে কংগ্রেসকে।
আরও পড়ুন- সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন রাহুল, পারফরম্যান্স ছাড়াই প্রোমোশন কটাক্ষ বিজেপির
সভাপতি ঘোষণা হওয়ার পরই শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটিতে বড়সড় অদবদল আনতে চলেছেন সনিয়া পুত্র। প্রবীণ কংগ্রেস নেতাদের সরিয়ে নতুন মুখ আনতে মরিয়া তিনি। যদি রাহুল এই পদক্ষেপ করতে চান, স্বভাবতই দলের অভ্যন্তরে কন্দোল বাড়বে বই কমবে না! সবকিছু নিয়ে রাহুল গান্ধীর সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সভাপতির পদে বসে ইতিমধ্যেই সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেলেছেন রাহুল, এখন দেখার কতটা পরিণত মেজাজে খেলা চালিয়ে যান তিনি!