কার দখলে কর্ণাটক? রাজ্যপালের কোর্টে বল
রীতি অনুযায়ী, একক বৃহত্তম দল সরকার গড়ার ডাক পায়। কিন্তু, কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে সেক্ষেত্রে কী হবে?
নিজস্ব প্রতিবেদন: ত্রিশঙ্কু কর্ণাটক বিধানসভা। ইতিমধ্যে সরকার গড়ার দাবি নিয়ে রাজভবনের দরজায় কড়া নেড়েছে তিন দলই। কিন্তু, কার কপালে ছিঁড়বে শিকে? ৫ বছরের জন্য কার দখলে যাবে মহীশূরের মসনদ, এই প্রশ্নগুলিই এখন সবচেয়ে দামি।
২২২ আসন বিশিষ্ট কর্ণাটক বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগারের থেকে ৮ আসন দূরে ১০৪-এই থামতে হয়েছে মোদী-শাহ-ইয়েদুরাপ্পা ব্রিগেডকে। সরকার গড়ারমতো পুঁজি নেই কংগ্রেস কিংবা জেডিএস-এর হাতেও। কংগ্রেস, জেডিএস ও অন্যান্যদের ঝুলিতে যথাক্রমে ৭৮, ৩৮ ও ২টি আসন। ফলে, বল এখন রাজ্যপাল বাজুভাই বালার কোর্টে। কিন্তু কী করবেন রাজ্যপাল? এ বিষয়ে সংবিধানই বা কী বলছে?
বিধানসভা ভোটে নির্দিষ্ট কোনও দল ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে না পারলে, বল যায় রাজ্যপালের কোর্টে। সংবিধানের ১৬৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্যপাল একজন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যদের নিয়োগ করেন। কিন্তু, কোনও দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে, রাজ্যপাল কাকে ডাকবেন তার কোনও স্পষ্ট উল্লেখ সংবিধানে নেই। আর ঠিক এই জায়গাতেই তৈরি হয়েছে শূন্যতা। সংবিধানের এই শূন্যতার জন্যই বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয়েছে একাধিক বিতর্ক। আরও পড়ুন- দাক্ষিণাত্যে রুদ্ধশ্বাস নাটক, সরকার গঠনের মরিয়া ইয়েদুরাপ্পা-কুমারস্বামী
রীতি অনুযায়ী, একক বৃহত্তম দল সরকার গড়ার ডাক পায়। কিন্তু, কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে সেক্ষেত্রে কী হবে? এসব ক্ষেত্রে সাকারিয়া কমিশনের কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক সেই পর্যবেক্ষণগুলি-
রাজ্যপাল নিজের বিবেচনা অনুযায়ী এমন একজনকে বাছবেন যিনি বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পাবেন।
সেই ব্যক্তিকে ডাকার আগে কয়েকটি শর্ত মাথায় রাখবেন রাজ্যপাল-
ভোটপূর্ববর্তী কোনও জোট হয়ে থাকলে সেই জোট আগে ডাক পাবে।
তেমন জোট না হয়ে থাকলে, ডাক পাবে একক বৃহত্তম দল।
ভোট পরবর্তী জোটও সরকার গড়ার জন্য ডাক পেতে পারে।
সাকারিয়া কমিশনের সুপারিশ থাকলেও সাম্প্রতিক অতীতে বেশকয়েকটি ঘটনা এই প্রথা অনুসরণ করেনি। বিশেষত, বিজেপি যখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় আর সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল গেরুয়া শিবিরের পছন্দের প্রতিনিধি তখন অনেকক্ষেত্রেই প্রথা লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। উদাহরণস্বরূপ মেঘালয়, মণিপুর ও গোয়ায় এমন ঘটনা দেখা গিয়েছে নিকট অতীতে। আরও পড়ুন- ‘সমর্থনের বিনিময়ে মন্ত্রিত্ব দিতে চায় বিজেপি’, দাবি কর্ণাটকের কংগ্রেস বিধায়কের
মেঘালয়, ২০১৮
কংগ্রেসের চেয়ে কম আসনে জয়ী হয়েও ভোট পরবর্তী জোটকে ঢাল করে সরকার গড়ার ডাক পায় বিজেপি।
মণিপুর ও গোয়া, ২০১৭
এই দুই রাজ্যেও কংগ্রেসের চেয়ে কম আসন পেয়ে সরকার গড়ে বিজেপি।
এখন তাহলে কর্নাটকে কী হবে? কাকে ডাকবেন রাজ্যপাল বাজুভাই বালা? সাকারিয়া কমিশনের সুপারিশ ধরে এগোবেন? না কি সাংবিধানিক রীতি মানবেন? সাংবিধানিক রীতি মানলে ডাক পাওয়ার কথা ইয়েদুরাপ্পা ব্রিগেডের। তাতে আবার পথের কাঁটা কংগ্রেস-জেডিএস জোট। কারণ, সাম্প্রতিক অতীতে বিজেপি-ই সেই পথে হেঁটে সরকার গড়েছে তিন রাজ্যে। আবার কর্নাটকে এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কংগ্রেসের কাছেও ধর্মের কল বাতাসে নড়ার দশা। কারণ, ২০১৩ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপিকে আটকাতে আপকে সমর্থন করে কংগ্রেস। সেবার সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও ক্ষমতা দখল করতে পারেনি বিজেপি। তাছাড়া, মণিপুর, মেঘালয় ও গোয়ায় বিজেপি কম আসন পেয়েও সরকার গড়ায়, গেরুয়া ব্রিগেডকে 'নীতিহীন ক্ষমতালোভী' বলে আক্রমণ করেছিল রাহুল গান্ধীর দল। তাই, এখন কর্ণাটকে কম আসন পেয়ে সরকার গড়লে, 'নৈতিক বিচ্যুতি'র সমালোচনা শুনতে হবে কংগ্রেসকেও, এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। আরও পড়ুন- নাটক জমজমাট কর্ণাটকে, ঘর ভাঙার আতঙ্কে ৩৮ বিধায়ককে কোচিতে নিয়ে যাচ্ছে জেডিএস!
এমতাবস্থায় আবার ঘোড়া কেনাবেচা শুরু হলে সব সমীকরণ মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। আর সেই আশঙ্কা থেকেই ইতিমধ্যে জেডিএস বিধায়কদের কোচিতে 'নিরাপদ দূরত্বে' সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে দলীয় নেতৃত্ব, এমনটাই জানাচ্ছে বিভিন্ন সূত্র। ফলে দক্ষিণের এই রাজ্যে জনতা রায় জানিয়ে দিলেও, চূড়ান্ত উত্তরের অপেক্ষায় ক্ষমতার অলিন্দ।