কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পাকা, কিন্তু মন্ত্রিসভায় কার কতটা দখল?
একটি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ-সহ অর্থ, পূর্ত এবং সেচের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকও নিজেদের হাতেই রাখতে চাইছে জেডিএস।
নিজস্ব প্রতিবেদন: মহীশূরের মসনদ দখলকে ঘিরে ইতিমধ্যে সাম্প্রতিক কালের সেরা রাজনৈতিক নাটকের সাক্ষী থেকেছে দেশ। তবে সেই নাটকের ক্লাইম্যাক্স মিটে গেলেও, নাটক এখনও শেষ হয়নি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পদে দেবগৌড়া পুত্র কুমারস্বামীর নাম পাকা হয়ে গেলেও, জোট সরকারের দফতর বণ্টন নিয়ে ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে প্রবল জল্পনা। প্রতি মহূর্তে শোনা যাচ্ছে নতুন নতুন রফাসূত্রের কথা। এমতাবস্থায় আজ সোমবার দিল্লিতে রাহুল-সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন কুমারস্বামী। জানা যাচ্ছে, সেখানেই চূড়ান্ত হবে আসন বণ্টনের রূপরেখা। অন্যদিকে, এই জোটে কোনও রকম মনোমালিন্য ঘটে কি না, সেদিকে সতর্ক নজর রেখেছে বিজেপি। সেক্ষেত্রে সামন্য সুযোগ পেলেও, গোল দিতে মরিয়া হবে গেরুয়া শিবির। আরও পড়ুন- কর্ণাটকে বিজেপির বিরুদ্ধে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ, উড়িয়ে দিলেন খোদ কংগ্রেস বিধায়ক
সূত্রের খবর, ৩৩ সদস্যের কর্ণাটক মন্ত্রিসভায় অন্তত ২০টি আসন প্রত্যাশা করছে কংগ্রেস। তবে ৭৮ বিধায়কের দল হিসাবে কংগ্রেস ২০টি দফতর পেলে তা শতকরা হিসাবে জেডিএস-এর থেকে কম হবে। কারণ, সেক্ষেত্রে মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব থাকবে ২৬%। আর ৩৭ বিধায়কের দল (রামনগর আসনটি কুমারস্বামী ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন) জেডিএস ১৩টি দফতর পেলে, তাদের প্রতিনিধিত্ব হবে ৩৫%। আরও পড়ুন- ঘরে ফিরতে মরিয়া হোটেলবন্দি কংগ্রেস-জেডিএস বিধায়করা, না করল দল
মন্ত্রকের ক্ষেত্রে জেডিএস-এর উপর তারা কোনও রকম চাপ দেবে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে কংগ্রেস। আপাতত কংগ্রেস ঠিক করেছে, উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদটি দলিত-পরমেশ্বরকে দেবে তারা। কিন্তু, লিঙ্গায়তদের তরফ থেকে আবার উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ দাবি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে লিঙ্গায়তদের দাবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ, কংগ্রেসের ৭৮ জন জয়ী প্রার্থীর মধ্যে ১৬ জনই লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ভুক্ত এবং কোনও একটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের নিরিখে কংগ্রেসের মোট আসন সংখ্যার মধ্যে লিঙ্গায়তরাই শীর্ষস্থানে। জেডিএস-এর ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৪। পাশাপাশি, সিদ্দারামাইয়ার শাসন কালের শেষ ভাগে নিহ্গায়তদের 'সংখ্যালঘু' তকমা দেওয়া হলেও, তাতে ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি সম্প্রদায়টির। ফলে, কংগ্রেসও চাইবে না লিঙ্গায়তদের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দিতে। অন্যদিকে আবার, একটি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ-সহ অর্থ, পূর্ত এবং সেচের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকও নিজেদের হাতেই রাখতে চাইছে জেডিএস। ফলে, পদ বণ্টন নিয়ে ইতিমধ্যেই নিঃশব্দে চাপানউতোর শুরু হয়ে গেছে। আরও পড়ুন- মন্ত্রিসভার বণ্টনে জেডিএসের উপরে চাপ বাড়াল কংগ্রেস
তবে এসবের মধ্যেও জোটের দুই দলের কাছে আপাতত স্বস্তির বিষয় পারস্পরিক সৌজন্য ও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। একদিকে, যেমন যেকোনও মূল্যে বিজেপিকে রুখতে মরিয়া কংগ্রেস। তেমনই অন্যদিকে, কুমারস্বামীও তাঁর দলের জয়ী প্রার্থীদের বুঝিয়েছেন যে জোট গড়ে সরকার গঠন কতটা প্রয়োজনীয়। আর তাই তাঁর বাবা দেবগৌড়া ও তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলীয় বিধায়করা চলতে অনুরোধ করেছেন কুমারস্বামী। এই পরিস্থিতিতে রাজীব গান্ধীর মৃত্যুদিনে নয়া দিল্লিতে বৈঠকে বসতে চলেছেন রাহুল-সনিয়া-কুমারস্বামীরা। কিন্তু, কোন রফা সূত্র বেরিয়ে আসবে শেষ পর্যন্ত, আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই উন্মুখ জাতীয় রাজনীতির কারবারিরা।