চলে গেলেন বিলাসরাও দেশমুখ

চলে গেলেন কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী এবং মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখ। লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন তিনি। মঙ্গলবার চেন্নাইয়ের গ্লোবাল হসপিটালে মারা যান তিনি। চলতি মাসের ৬ তারিখ তাঁকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতাল থেকে চেন্নাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। চেন্নাইয়ের মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি।

Updated By: Aug 14, 2012, 04:24 PM IST

চলে গেলেন কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী এবং মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখ। লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন তিনি। মঙ্গলবার চেন্নাইয়ের গ্লোবাল হসপিটালে মারা যান তিনি। চলতি মাসের ৬ তারিখ তাঁকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতাল থেকে চেন্নাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। চেন্নাইয়ের মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি।
বিলাসরাও দেশমুখের মৃত্যুতে গভীর শোকজ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যু দলের কাছে বিশাল ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।
পঞ্চায়েতের সদস্য হয়ে সক্রিয় রাজনীতির বৃত্তে এসেছিলেন বিলাসরাও দেশমুখ। তারপর থেকে এগিয়েই গিয়েছে তাঁর রাজনৈতিক জীবন। কেন্দ্রে একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। দু-দুবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ২৬/১১ মুম্বই হামলার পর বিলাসরাওয়ের রাজনৈতিক জীবনে ছন্দপতন শুরু। বিতর্ক আর দুর্নীতি, সমান্তরাল ভাবে তাড়া করে গিয়েছে এই মরাঠি নেতাকে।
বিলাসরাও দাগাদোজিরাও দেশমুখ। রাজনীতির ময়দানে বিলাসরাও নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৪৫ সালের ২৬ মে লাটুরের বভলগাঁওয়ে এই মরাঠি নেতার জন্ম। পুণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি এবং বিএ পাস করার পরই রাজনীতির সান্নিধ্যে আসেন বিলাসরাও। যে বভলগাঁওয়ে জন্মেছিলেন, সেখানকার পঞ্চায়েত সদস্য হয়েই সক্রিয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় বিলাসরাও দেশমুখের।
ওসমানাবাদ জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার পর তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বের নজরে আসেন। ১৯৮০, ১৯৮৫ এবং ১৯৯৫, তিনটি নির্বাচনে জিতে ১৫ বছর মহারাষ্ট্র বিধানসভার সদস্য ছিলেন বিলাসরাও। ১৯৮২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্র সরকারে বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন। মসৃণ যাত্রাপথ ধাক্কা খায় ১৯৯৫ সালের নির্বাচনে। ৩৫ হাজার ভোটে হেরে যান তিনি। কিন্তু ১৯৯৯ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে লাটুর কেন্দ্র থেকে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হন বিলাসরাও। সেবারই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন। 
তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রথম জমানার শেষ দিকে মহারাষ্ট্র কংগ্রেসে অন্তর্কলহ এবং বিভাজন চরম আকার নেয়। যাঁর খেসারত দিতে হয় এই মরাঠি নেতাকে। বিলাসরাওকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দলিত নেতা সুশীল কুমার শিন্ডেকে তখন মুখ্যমন্ত্রী করেছিল কংগ্রেস। ২০০৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিতে ফের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দখল করেন বিলাসরাও। কিন্তু সেবারও শেষটা মধুর হয়নি। ২০০৮ সালের ২৬/১১ মুম্বই হামলা সারা দেশের সঙ্গে বিলাসরাও দেশমুখকেও নড়িয়ে দিয়েছিল। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
এরপর মহারাষ্ট্র থেকে রাজ্যসভার প্রতিনিধি হন। ২০০৯-এ বিলাসরাও দেশমুখকে ভারি শিল্পমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী করে কংগ্রেস। কেন্দ্রে গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকেরও দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে এবং পরে, বরাবরই ক্ষমতার অলিন্দে থেকেছেন। হয়তো সেকারণেই বির্তক তাঁর পিছু ছাড়েনি। মুম্বই হামলার পর ছেলে রীতেশ দেশমুখ ও পরিচালক রামগোপাল ভার্মাকে নিয়ে সন্ত্রাস বিধ্বস্ত তাজ হোটেলে গিয়েছিলেন বিলাসরাও। তখন বিজেপি তাঁর কড়া সমালোচনা করেছিল। পদের প্রভাব খাটিয়ে পরিচালক সুভাষ ঘাইকে জমি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই মরাঠি নেতার বিরুদ্ধে। ওই বিষয়ক একটি মামলায় মহারাষ্ট্র হাইকোর্ট তাঁকে ভর্ত্সনাও করেছিল। 
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে একবার দশ লক্ষ টাকা জরিমানা করে। তখন তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে যাতে এফআইআর না নেয়, তার জন্য পুলিসকে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছিল বিলাসরাওয়ের বিরুদ্ধে। বিদর্ভে কৃষকদের ওপর অত্যাচারে অভিযুক্ত হন এক কংগ্রেস বিধায়ক। তাঁকে আড়াল করার অভিযোগে বিলাসরাওয়ের বিরুদ্ধে পুলিসি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। ২০১২-র ক্যাগ রিপোর্টে জমি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হন বিলাসরাও। আর সবশেষে আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারি। এভাবেই বারবার বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছে বিলাসরাও দেশমুখের নাম।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে বিলাসরাও দেশমুখের দেহ লাটুরে তাঁর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে।

.