Swami Vivekananda: 'এসো, মানুষ হও'! দেশের আত্মাকে ধরে টান দিলেন স্বামীজি!

সেদিন ঘর-ছাড়া সেই তরুণটির হাতে ছিল পরিব্রাজকের সুদৃঢ় যষ্টি, মাথায় হোমানলসদৃশ গৈরিক উষ্ণীষ।

Updated By: Jan 25, 2022, 12:15 PM IST
Swami Vivekananda: 'এসো, মানুষ হও'! দেশের আত্মাকে ধরে টান দিলেন স্বামীজি!

সৌমিত্র সেন

উক্তি ১: '' শক্তি বিনা জগতের উদ্ধার হবে না। আমাদের দেশ সকলের অধম কেন,শক্তিহীন কেন?-- শক্তির অবমাননা সেখানে বলে।''

উক্তি ২: ''ও তোমার পার্লেমেন্ট দেখলুম,সেনেট দেখলুম; ভোট ব্যালট মেজরিটি দেখলুম,...! সব দেশেই ঐ এক কথা। শক্তিমান পুরুষরা যে দিকে ইচ্ছে সমাজকে চালাচ্ছে...।''

এ দু'টি উক্তির পাশাপাশি এবার দু'টি দিনের প্রসঙ্গ টানা যাক। একটি হল 'জাতীয় শিশুকন্যা দিবস', অন্যটি 'প্রজাতন্ত্র দিবস'। প্রথম উপলক্ষটি ২৪ জানুয়ারি, যেটি সদ্য গত; দ্বিতীয় উপলক্ষটি ২৬ জানুয়ারি, যেটি রাত পোহালেই। ঘটনাচক্রে এই দুই তারিখের মধ্যে এবারে এসে পড়েছে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মতিথি দিবস (জন্মদিন নয়, সেটি ১২ জানুয়ারি, দেশ জুড়ে 'যুব দিবস' হিসেবে ইতিমধ্যেই যথাবিহিত পালিত; পৃথিবীর সমস্ত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের শাখায় এবং বিবেকানন্দ ভাবানুরাগীদের-বৃত্তে এই দিনটিই সুগম্ভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে উদযাপিত হয়ে থাকে)।

সমাপতন? তা একরকম বইকী! বিদেশি শাসকের পদানত এই দেশের মেয়েদের অবস্থা ও অবস্থান নিয়ে বিবেকানন্দ তাঁর জীবদ্দশাতেই নানা রকম ভেবেছিলেন, বলেছিলেন, (চিঠিপত্র ইত্যাদিতে) লিখেওছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলতেন, মেয়েদের যথার্থ উন্নতি না হলে দেশেরও যথার্থ উন্নতি হবে না! পাশাপাশি স্বামীজি এই দেশ-সমাজ-মানুষ নিয়েও প্রভূত ভেবেছিলেন। তাঁকে কোনও দিনই তো নিছক সন্ন্যাস-নিবদ্ধ একমুখী মানুষ হিসেবে দেখেনি তার সমকাল তার পরবর্তী কালও; আক্ষরিক অর্থেই বহুমুখী ভাবনা-প্রতিভার মানুষ এই বিবেকানন্দ, যিনি সম্ভবত একজন রাজনীতিবিদ বা সমাজকর্মীদের মতোই (কখনও কখনও তাঁদের চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশিই হয়তো) দরদ ও গুরুত্ব দিয়ে এই দেশের (এই বিশ্বেরও) মানুষের উত্তরণ নিয়ে ভাবতেন। উপরের দুই বিচ্ছিন্ন উক্তি তাঁর সেই নানা বিষয়ে গভীর ও বহুতলিক ভাবনারই ফুলকিমাত্র!

আজ, এই ২৫ জানুয়ারি, তথা (১৪২৮ বঙ্গাব্দের) ১১ মাঘ দিনটি স্বামী বিবেকানন্দের ১৬০ তম জন্মতিথি দিবস। বিবেকানন্দ তাঁর দেশবাসীর জন্য ও বিশ্ব মানবতার জন্য কী বিপুল অবদান রেখে গিয়েছেন তা যথার্থ অধিকারী বিশেষজ্ঞেরা নানা সময়ে ব্য়াখ্যা করেছেন, করবেনও।

আপাতত এটুকু এখানে উল্লেখ থাক যে, তাঁর জীবনভর কাজের কেন্দ্রে ও ভাবনার মর্মে থাকত একটিই বিশেষ লক্ষ্য-- যথার্থ মানুষ তৈরি করা। তিনি বলতেন-- Man Making! মানুষ গড়ার কারিগর এই বিবেকানন্দের আহ্বানই ছিল-- 'এসো, মানুষ হও'! তিনি যখন তাঁর 'যৌবনের উচ্ছ্বসিত সিন্ধুতটভূমে' তখনই তিনি সর্বত্যাগী; সেদিন ঘর-ছাড়া সেই তরুণটির হাতে ছিল পরিব্রাজকের সুদৃঢ় যষ্টি, মাথায় হোমানলসদৃশ গৈরিক উষ্ণীষ। এই নিয়ে গোটা ভারত (পরবর্তীতে প্রায় সারা বিশ্বই) পরিক্রমা করলেন তিনি, ঘুম ভাঙালেন ভারতরূপ এই বিরাট লেভিয়াথানের! উপনিষদের মন্ত্রকে আত্মস্থ করে ডাক দিলেন-- 'Arise, Awake! Stop not untill the goal is reached'! লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগে না থেমে যাওয়ার প্রদীপ্ত গম্ভীর আহ্বানে তিনি একেবারে যেন দেশের আত্মাকে ধরে টান দিলেন! মানুষকে 'অভীঃ' মন্ত্র শোনালেন, বললেন নির্ভীক হতে। বললেন, দুর্বলতাই মৃত্যু। তাঁর নিজের (পূর্বাশ্রমের) সাংসারিক, সামাজিক পরিসরে সঙ্কট কম ঘনায়নি, স্ব-বৃত্তেও কম সমালোচিত হননি, যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়েছেন, ভেঙে পড়েননি। লৌহদৃঢ় স্নায়ুর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, দেশকেও। 

আর নিজের অনন্ত দুঃখ-বেদনা? অন্তরের সেই অপরিমেয় নিরুদ্ধ বেদনাকে উৎসব-প্রদীপের মতোই সযত্নে সাজিয়ে নিয়ে তিনি হাস্যমুখে উত্তরণ করে চলে যান সংসারের ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র কণ্টকের তুচ্ছ উৎপীড়নরাশি। তিনি নিজে আগুনে পুড়ে, আগুনে শুদ্ধ হয়ে, অগ্নিযন্ত্রণা সহ্য করে তবেই অন্যকে দুঃখ-বেদনা-যন্ত্রণা অতিক্রম করে অমৃতপথে যাওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। মানুষ হতে বলেছিলেন। 

Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)  

আরও পড়ুন: #Netaji125: হৃদয়ে রক্তাক্ত ক্ষতের বীভৎসতা নিয়েই মহা-কালের দিকে মৃত্যুহীন এক যাত্রা তাঁর     

.