বিজেপি-র কোন্দল, ক্রিকেট রাজনীতিতে ঘেঁটে ললিত বিতর্ক আরও গভীরে

কবার সামনে এসেছে বিজেপির ঘরের কোন্দল। যার সঙ্গে জুড়ে গেছে ক্রিকেট রাজনীতিও।  

Updated By: Jun 17, 2015, 10:36 PM IST
বিজেপি-র কোন্দল, ক্রিকেট রাজনীতিতে ঘেঁটে ললিত বিতর্ক আরও গভীরে

ওয়েব ডেস্ক: ললিত মোদীর ভিসার জন্য তদ্বির করে বিপাকে পড়েছেন সুষমা স্বরাজ। আর সেই সূত্রেই আরও একবার সামনে এসেছে বিজেপির ঘরের কোন্দল। যার সঙ্গে জুড়ে গেছে ক্রিকেট রাজনীতিও।  

বিজেপিতে মোদী-বিরোধী শিবিরের মুখ সুষমা স্বরাজ। তবুও নটবর সিংয়ের দশা হয়নি তাঁর। একটা কারণ অবশ্যই বিরোধীদের চাপে সুষমাকে সরালে মুখ পুড়বে মোদীরও। আর অন্যটা?

ললিত মোদীর ভিসার জন্য সুষমা স্বরাজ তদ্বির করেছেন, এ খবর সামনে আসার পর থেকেই তাঁর ইস্তফার দাবিতে সরব কংগ্রেস। আর প্রথম দিন থেকেই সুষমার পাশে আরএসএস। কারণটা সহজ। মন্ত্রিসভায় সুষমা না থাকলে মোদী আরও সঙ্ঘের হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে
পারেন। তাই, ইচ্ছে থাকুক বা না থাকুক, আপাতত নাগপুরের চাপে সুষমাকে সরাতে পারছেন না মোদী।  

বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সাপটা কে আন্দাজ করুন। আমি সুষমার পাশে আছি। সোমবার বিজেপি নেতা কীর্তি আজাদের এই টুইটে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ললিত মোদীকে যাতে ব্রিটেন ভিসা দেয়, সে জন্য সুষমা  যে তদ্বির করেছিলেন তার প্রমাণ মিলেছে একাধিক ই-মেলে। এই ই-মেল ফাঁসের নেপথ্যে কে? জল্পনা আগেই ছিল। কীর্তি আজাদের টুইটের পর ইঙ্গিতটা আরও জোরালো হয়।  

কানাঘুষোয় উঠে আসে অরুণ জেটলির নাম। দলীয় রাজনীতিতে জেটলি এমনিতেই সুষমার বিরোধী। আর, BCCI-এর রাজনীতিতে তিনি বরাবরই ললিত মোদীর বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, শ্রীনি বিদায় নেওয়ার পর ললিত মোদী ফের ক্রিকেট প্রশাসনে সক্রিয় হতে চাইছিলেন, যা পছন্দ করছিলেন না  জেটলি। বিজেপি নেতারা শুরু থেকেই সুষমার পাশে দাঁড়ালেও জেটলি মুখ না খোলায় জল্পনা বাড়ে।
সূত্রের খবর, আরএসএসের চাপে মঙ্গলবার সুষমার সমর্থনে মুখ খোলেন জেটলি। কিন্তু, সেখানেও কৌশলে গোটা ঘটনার দায়  বিদেশমন্ত্রীর ঘাড়ে চাপিয়ে দেন তিনি।

দিল্লি হাইকোর্টের রায় বিপক্ষে যাওয়ার পর, ললিত মোদীর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করতে চেয়ে কেন সুপ্রিমকোর্টে গেল না কেন্দ্র? জেটলির কৌশলী জবাব, এটা পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়। সরাসরি কিছু না বলেও জেটলি বুঝিয়ে দিলেন, পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ বিদেশমন্ত্রকের অধীনে থাকায় সব দায় সুষমার।

সুষমার মতো বসুন্ধরা রাজেও মোদীর বিরোধী শিবিরের নেত্রী। ললিত মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যায় পড়েছেন তিনিও। সুষমা-বসুন্ধরার সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতার কথা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বলে বেড়িয়ে তাঁদের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছেন ললিত মোদী। জেনেবুঝে হঠাত কেন এ কাজ করলেন তিনি? উত্তর খুঁজতে বড় মোদীর সঙ্গে ছোট মোদীর সুসম্পর্কের কথাও দিল্লির রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে।

যা করা উচিত ছিল, তা তিনি করেননি। যা করা উচিত ছিল না, সেটাই তিনি করেছেন। ললিত মোদীর ভিসা নিয়ে সুষমা স্বরাজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগই করছে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দল। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক নিয়ম ভাঙার সেই সাতকাহন।    

কয়েকশো কোটি টাকার আর্থিক তছরূপে অভিযুক্ত ললিত মোদীর সাহস হয় কি করে বিদেশমন্ত্রীকে ফোন করার? এই প্রশ্নটাই শুধু নয়, আছে আরও প্রশ্ন। ললিত মোদী না হয় বেশ সাহসী। কিন্তু, বিদেশমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে সুষমা স্বরাজ কী করলেন? সুষমার নিজের কথায়, প্রাক্তন আইপিএল কর্তার ভিসা নিয়ে তিনি ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি কিথ ভাজের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন, ব্রিটিশ হাই-কমিশনারের সঙ্গেও। আর এখানেই উঠছে নিয়ম ভাঙার প্রসঙ্গ।

ললিত মোদীর ভিসার অনুরোধ ব্রিটেনে ভারতীয় হাই-কমিশনারের অফিস মারফত্‍ ব্রিটিশ অভিবাসন দফতরের কাছে যাওয়া উচিত ছিল। সুষমা স্বরাজ নিয়ম মানেননি।

ব্রিটেনে ভারতীয় হাই-কমিশনারের কাছে এই ধরনের অনুরোধ এলে তা বিদেশমন্ত্রকের যুগ্ম-সচিবের (পশ্চিম ইউরোপ) কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।

যুগ্ম-সচিবের কাছে ফাইল এলে তিনি তা পাঠিয়ে দেবেন বিদেশসচিবের কাছে। এ ক্ষেত্রে তা হওয়ার কোনও সুযোগ ছিল না।

বিদেশসচিব তাঁর নোট-সহ ফাইল পাঠিয়ে দেবেন বিদেশমন্ত্রীর কাছে। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।

বিদেশমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর হবে সচিবদের মাধ্যমে। কোনও ভুলভ্রান্তি যাতে না হয় সে জন্য বিদেশমন্ত্রীর ফেরত পাঠানো ফাইলেও চোখ বুলিয়ে নেবেন সচিবরা। এ ক্ষেত্রে সুষমা স্বরাজ নিয়ম মানেননি।

ললিত মোদীর ভিসার আবেদনের মতো ব্যাপারে বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে আইনমন্ত্রকের সচিব স্তরে আলোচনা হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বিদেশমন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব তা ভারতীয় হাই-কমিশনারকে জানিয়ে দেবেন। হাই-কমিশনার নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করবেন। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।

পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ সুষমা স্বরাজ কি এইসব নিয়ম জানতেন না?

 

 

.