প্রধানমন্ত্রীর দফতরে হাই-প্রোফাইল জালিয়াতির তালিকা পাঠিয়েছিলাম, রাজনের মন্তব্যে বিপাকে বিজেপি-কংগ্রেস
মুরলীমনোহর যোশীর নেতৃত্বাধীন কমিটিকে দেওয়া জবাবে অনাদায়ী ঋণের পাহাড় জমার কারণ হিসাবে ব্যাঙ্কগুলির অতিরিক্ত ইতিবাচক মনোভাব, সরকারের ইতস্তত বোধ এবং বৃদ্ধির ধীর গতিকে চিহ্নিত করেছেন রঘুরাম রাজন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: পিএনবি কাণ্ডে নীরব মোদী বা মেহুল চোকসিকে এখনও দেশে ফেরাতে হিমসিম খাচ্ছে সিবিআই। অন্যদিকে, ঋণ খেলাপ করে বিদেশে বহাল তবিয়তে দিন কাটাচ্ছে বিজয় মালিয়া। আর এর মধ্যেই সংসদীয় কমিটির কাছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন জানালেন, "প্রাধানমন্ত্রীর দফতরে হাই-প্রোফাইল জালিয়াতির তালিকা পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু, সে বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে কি না জানা নেই"। মুরলীমনোহর যোশীর নেতৃত্বাধীন কমিটিকে দেওয়া জবাবে অনাদায়ী ঋণের পাহাড় জমার কারণ হিসাবে ব্যাঙ্কগুলির অতিরিক্ত ইতিবাচক মনোভাব, সরকারের ইতস্তত বোধ এবং বৃদ্ধির ধীর গতিকে চিহ্নিত করেছেন রঘুরাম রাজন। তিনি আরও বলেন, "আমি গভর্নর থাকাকালীন জালিয়াতি নজরদারির জন্য আরবিআই বিশেষ ব্যবস্থা (মনিটরিং সেল) গ্রহণ করেছিল। এই সেলটি জালিয়াতির ঘটনা গোড়াতেই তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠানোর বিষয়ে মধ্যস্থতা করত। এছাড়া আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বড় জালিয়াতির ঘটনাগুলির তালিকা পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানা নেই...এই ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল"। এর পাশাপাশি তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কগুলিতে জালিয়াতির আকার ক্রমশ বড় হচ্ছে, তবে তা সামগ্রিক নন পারফর্মিং অ্যাসেট (এনপিএ)-এর তুলনায় অনেকটাই কম।
রঘুরাম রাজনের এই রিপোর্টে রীতিমতো উজ্জীবিত বোধ করেছে কংগ্রেস। তারা মনে করছে, প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর আসলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দফতরকেই ইঙ্গিত করেছেন। এরপরই রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, "প্রধানমন্ত্রী কেন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন না"? এরপরই তিনি যোগ করেছেন, কংগ্রেস যখন সরকার থেকে গিয়েছিল তখন এনপিএ-র মোট পরিমাণ ছিল ২.৮৩ লক্ষ কোটি। অথচ এই চার বছরে অনাদায়ী ঋণের মোট অঙ্ক কেন ১২ লক্ষ কোটিতে ঠেকল? তবে, রঘুরাম রাজনের সামগ্রিক রিপোর্টে কংগ্রেসের জন্যও যথেষ্ট বিড়ম্বনার কারণ রয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। রাজন বলেছেন, ২০০৬-০৭ সাল থেকেই 'বদ ঋণ' সংস্কৃতির সূচনা হয়েছে। এ সময় দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি দৃঢ় ছিল এবং পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি নির্দিষ্ট সময় ও বাজেটের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। ২০০৬-০৭ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউপিএ সরকার। ফলে, এর দায় কংগ্রেসের উপরও বর্তায়।
দেশের প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম এদিন নন পারফর্মিং অ্যাসেট-এর সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে রাজনের দৃষ্টিভঙ্গির তারিফ করার পর মুরলীমনোহর যোশীর নেতৃত্বাধীন কমিটির সামনে হাজির হয়েছিলেন প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর।