সাহারা সাম্রাজ্যের পতনের কারণ
কোথায় গেল লগ্নিকারীদের কুড়ি হাজার কোটি টাকা? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের দেড় বছর পরও সাহারা টাকা ফেরত না দেওয়ায় উঠছে এই প্রশ্ন। সারদা গোষ্ঠীর মতোই সেবির নিয়মকানুন না মেনে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল সাহারা। সারদার মতোই সাহারার দুই শাখা সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরতের কথা উঠেছে আদালতে। অনিয়মের সাতকাহনে বহু জায়গায় মিলে যাচ্ছে সারদা আর সাহারা।
কোথায় গেল লগ্নিকারীদের কুড়ি হাজার কোটি টাকা? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের দেড় বছর পরও সাহারা টাকা ফেরত না দেওয়ায় উঠছে এই প্রশ্ন। সারদা গোষ্ঠীর মতোই সেবির নিয়মকানুন না মেনে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল সাহারা। সারদার মতোই সাহারার দুই শাখা সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরতের কথা উঠেছে আদালতে। অনিয়মের সাতকাহনে বহু জায়গায় মিলে যাচ্ছে সারদা আর সাহারা।
২০০৮ থেকে ২০১১-র মধ্যে মূলত গো-বলয়ের গ্রাম, মফ্ফস্বল থেকে টাকা তুলেছিল সাহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট কর্পোরেশন এবং সাহারা হাউজিং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড। সেবির নির্দেশ অগ্রাহ্য করেই তোলা হয়েছিল টাকা। ভারতীয় ক্রিকেট দলকে সাহারার স্পনসরশিপ, সংস্থার অন্যান্য লাভজনক ব্যবসার প্রচার -এ সবই আস্থা জুগিয়েছিল সাধারণ মানুষকে। ঠিক যেমনভাবে সারদা গোষ্ঠীও সেবির নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তুলেছিল হাজার হাজার কোটি টাকা। সুদীপ্ত সেনের মতোই গ্রেফতার হয়েছেন সাহারা কর্তা সুব্রত রায়।
২০১১-র জুনে লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে সাহারা গোষ্ঠীর দুই সংস্থাকে নির্দেশ দেয় সেবি।
জুলাইয়ে সেবির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় সাহারা।
২০১১-র অগস্টে সুপ্রিম কোর্ট সুদ সহ ২০ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেয় সাহারাকে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মানায় ২০১২-র নভেম্বরে সাহারার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে সেবি।
ডিসেম্বরে টাকা মেটাতে বাড়তি সময় চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে সাহারা। সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেয় সেবি।
২০১৩-র নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় দেশ ছাড়তে পারবেন না সাহারা কর্তা সুব্রত রায়।
অবশেষে গত বুধবার সুব্রত রায়ের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট।
গ্রেফতারের পর আগামী চৌঠা মার্চ সুব্রত রায়কে তোলা হবে আদালতে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে সেবির সঙ্গে আইনি লড়াই চলছে সাহারা গোষ্ঠীর। এই লড়াই আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যার জেরে অনিশ্চিত প্রায় চার কোটি বিনিয়োগকারীর ভাগ্য। এখানেও সাহারার সঙ্গে মিল রয়েছে সারদার। শ্যামল সেন কমিশনে ক্ষতিপূরণ চেয়ে জমা পড়া আবেদনের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। এঁদের মধ্যে মাত্র কয়েক লক্ষ লগ্নিকারী সরকারি টাকায় ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। বাকিদের ভবিষ্যত বিশ বাঁও জলে। সাহারার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে গিয়ে আইনি জটিলতার মুখে পড়েছে সেবি।
একইভাবে সারদার সম্পত্তি নিলাম করে আমানতকারীদের টাকা মেটানোর কাজ সঠিক পথে এগোচ্ছে কিনা, তা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। কেলেঙ্কারির ধরনে বহু জায়গায় সাহারা ও সারদা মিলে গেলেও সারদার লগ্নিকারীদের যে ক্ষোভ আমরা দেখেছি, সাহারার ক্ষেত্রে তেমনটা চোখে পড়েনি। এর কারণ হিসাবে উঠে আসছে নানা মত। অনেকের মতে কারণটা হল, চরম অসহায়তায় গো-বলয়ের গরিব মানুষের চাপা পড়ে যাওয়া কণ্ঠস্বর আর সাহারার দুটি শাখা সংস্থায় বিশাল অঙ্কে কালো টাকার বিনিয়োগ।