ঠাকুমার সঙ্গে চলন-কথনে মিল কি অ্যাডভান্টেজ প্রিয়ঙ্কার?
আসব আসব করে অবশেষে তিনি এলেন। প্রিয়ঙ্কাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে নিয়ে এসে ট্রাম্প কার্ডটা খেলে দিলেন রাহুল। কংগ্রেসে রব উঠেছে ফিরে এলেন ইন্দিরা। সুদিনের আশায় গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আসব আসব করে অবশেষে তিনি এলেন। প্রিয়ঙ্কাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে নিয়ে এসে ট্রাম্প কার্ডটা খেলে দিলেন রাহুল। কংগ্রেসে রব উঠেছে ফিরে এলেন ইন্দিরা। সুদিনের আশায় গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি।
সেই হাসি। একই ঢঙে শাড়ি-ব্লাউজ। একইরকম ছোট করে কাটা চুল। জনতার উদ্দেশ্যে হাতের ভঙ্গি। নাতনির মধ্যে ঠাকুমার ছায়াই দেখেন দলের কর্মী, পুরনো কংগ্রেসিরা। দু-জনের বক্তৃতার মধ্যেও মিল রয়েছে বলে দাবি কংগ্রেস কর্মীদের। খোলা মাঠে আসর জমানো চড়া ভাষণ নয়। সেই একইরকম থেমে থেমে সংযত শব্দচয়ন।প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরই লখনউয়ের কংগ্রেস অফিসে পোস্টার পড়েছে, ইন্দিরা ইজ ব্যাক!
৯৯ সালে আমেঠিতে প্রচারে নেমে সনিয়াকে ৩ লক্ষ ভোটে জেতান প্রিয়াঙ্কা। দু-দশক পর, ৪৭ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে এলেন তিনি। মাঝের বছরগুলোয়, নানা নির্বাচনে অন্তত প্রকাশ্যে নিজেকে আমেঠি-রায়বরেলিতেই সীমাবদ্ধ রাখেন ইন্দিরার নাতনি।
১৯৯৭ সালে রবার্ট বঢ়রার সঙ্গে বিয়ে। দম্পতির রয়েছে দুই সন্তান। ছেলেমেয়েদের নিয়ে ব্যস্ত, সংসারি প্রিয়াঙ্কাকে তারপর ভোট ছাড়া খুব বেশি জনসমক্ষে দেখা যায়নি। গত লোকসভা ভোটের প্রচারে সংবাদমাধ্যমকে প্রিয়াঙ্কা বলেছিলেন,''বাবা ও ঠাকুরমাকে নৃশংসভাবে মরতে দেখেছি''। তিনি চান, তাঁর সন্তানরা যেন স্বাভাবিক শৈশব থেকে বঞ্চিত না হয়। সেদিন প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছিলেন, ছেলেমেয়েরা বড় হলে তারপর ভাবা যাবে...। ছেলেমেয়েরা এখন কৈশোরে পা দিয়েছে। তারা বড় হয়ে যেতেই আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয়
রাজনীতিতে এলেন রাজীব তনয়া। কংগ্রেসের অন্দরের খবর, সেভাবে সামনে না এলেও বরাবরই দলের নানা সিদ্ধান্তের সঙ্গে জুড়ে থেকেছেন প্রিয়াঙ্কা।
২০০৪ থেকে আমেঠি-রায়বরেলিতে সোনিয়া-রাহুলের প্রচার সামলেছেন ইন্দিরার নাতনি। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে দলের রণকৌশল তৈরিতে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। কর্নাটকে কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্তে রাহুলকে সাহস জোগান প্রিয়াঙ্কা। গত মাসে ৩ রাজ্যে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঠিক করতেও বড় ভূমিকা নেন তিনি।
কপ্টার থেকে নেমে গরিব মানুষের মাঝে বক্তৃতা দিয়ে, আবার আকাশেই মিলিয়ে যেতেন ইন্দিরা। ছোঁয়া যেত না। সামনে এসেও ধরা না দেওয়ার আভিজাত্যেই ছিল তাঁর আকর্ষণ। প্রিয়াঙ্কাও অনেকটা এরকমই। অন্তরালেই তাঁকে নিয়ে উত্সাহ বেড়েছে দলীয় কর্মীদের। ইন্সটাগ্রামে তাঁর ফলোয়ার ৫৭ হাজার। ফেসবুকে ফলো করেন, প্রায় ৪ লক্ষ নেটিজেন। লোকসভা ভোটের আগে এহেন বোনকে রাজনীতিতে এনে মোদীর মোকাবিলায় ট্রাম্প কার্ডটা খেলে দিয়েছেন রাহুল। ফের ইন্দিরা যুগের আশায় নিবেদিতপ্রাণ কংগ্রেস কর্মীরা। তবে, এর মধ্যেই কেউ কেউ বলছেন, দলে এবার ক্ষমতার দুটো ভরকেন্দ্র তৈরি হয়ে যাবে না তো!
আরও পড়ুন- লোকসভা ভোটে রাজ্যে বাম-কংগ্রেস নয়, শাসককে ধাক্কা বিজেপির, বলছে জনমত সমীক্ষা
আরও একটা তথ্য উঠে আসছে, ১৯৮০ সালে শেষবার লোকসভা ভোটে লড়েছিলেন ইন্দিরা। আজ থেকে ৩৯ বছর আগে। হিসেব বলছে, তখনও ২১ বছরের যে যুবক (তখন ভোটাধিকারের ন্যূনতম বয়স ২১) ইন্দিরা গান্ধীকে ভোট দিয়েছিলেন, তিনি এখন ৬০ বছরের। বর্তমানে অধিকাংশ ভোটারাই ইন্দিরাকে পড়েছেন পাঠ্যবইয়ে। তাঁদের কাছে ইন্দিরা আবেগ কতখানি কাজ করবে, তা নিয়ে থাকছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন- প্রিয়ঙ্কার অন্তর্ভূক্তি মাস্টারস্ট্রোক নাকি উত্তরপ্রদেশ বিজেপির হাতে তুলে দিলেন রাহুল?
গো-বলয়ের হৃদয়পুরেই আগামী কয়েকমাসে মিলবে সব প্রশ্নের জবাব।