বিদেশি লগ্নির সমর্থনে সোচ্চার প্রধানমন্ত্রী
নিষ্ফল সর্বদল বৈঠকের পর নতুন করে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে সোচ্চার হলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। মঙ্গলবার দিল্লিতে যুব কংগ্রেসের সম্মেলন মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি জানালেন, কৃষক এবং ক্রেতাদের স্বার্থেই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
নিষ্ফল সর্বদল বৈঠকের পর নতুন করে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে সোচ্চার হলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। মঙ্গলবার দিল্লিতে যুব কংগ্রেসের সম্মেলন মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি জানালেন, কৃষক এবং ক্রেতাদের স্বার্থেই অনেক চিন্তাভাবনা করে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে সেই সঙ্গেই তাঁর ঘোষণা, অনিচ্ছুক রাজ্যগুলিকে মাল্টিব্র্যান্ড খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ এবং সিঙ্গল ব্র্যান্ড রিটেলে ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির অনুমোদন দেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বলবত্ করার জন্য জোর করবে না কেন্দ্র। যুব কংগ্রেসের ওই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেন, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কোনও সম্ভাবনাই নেই।
এদিন যুব কংগ্রেসের সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ এলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন কৃষকরা। তাঁরা ফসলের উপযুক্ত দাম পাবেন। সেই সঙ্গে বিদেশি পুঁজি আসার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হবে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ। তাঁর দাবি, কয়েক বছরের মধ্যেই অন্তত ৫০ লক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে এর ফলে। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে উপযুক্ত সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও অন্যান্য পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রও প্রস্তুত হবে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, এর ফলে কৃষিজাত পণ্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। কৃষিপণ্যের দামও কমবে।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজির অনুপ্রবেশের প্রশ্ন ঘিরে সংসদে অচলাবস্থার সময়ে ৭ রেসকোর্স রোডের বাসিন্দার এই বক্তব্যকে বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সম্মিলিত বিরোধী পক্ষ, ডিএমকে-তৃণমূলের মতো জোটশরিক, মায় কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁর সরকার যে এ ব্যাপারে পিছু হঠবে না, মঙ্গলবার বিকেলে যুব কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে সেটাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মনমোহন সিং।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগে ছাড়পত্র দিতে অনিচ্ছুক রাজ্যগুলির উপর চাপ না তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিষয়টিতে তেমন অভিনবত্ব নেই। সংবিধান অনুযায়ী এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের।
বস্তুত, ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ অধিকাংশ রাজ্যই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। প্রথম দফার ১০ লক্ষ বা তার বেশি জনসংখ্যার শহরগুলিতে মাল্টিব্র্যান্ড খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ এবং সিঙ্গল ব্র্যান্ড রিটেলে ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। দেশে এমন শহরের সংখ্যা ৫৩। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দিতে অস্বীকার করায় এর মধ্যে ২১টি শহরের ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত কার্যকর করার বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সর্বদল বৈঠকে এনডিএ, বাম শিবিরের পাশাপাশি ইউপিএর অন্যতম শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পৌরহিত্যে আয়োজিত সর্বদল বৈঠকে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি পুঁজির অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করে ইউপিএ শরিক ডিএমকে`ও। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহৃত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ চলতে দেওয়া হবে না বলেও বিরোধী দলগুলির তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় সরকারকে।
সিপিআইএমের রাজ্যসভার নেতা সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, চলতি শীতকালীন অধিবেশনে লোকপাল বিল-সহ একাধিক অস্বস্তিকর ইস্যু এড়িয়ে যেতে চায় সরকার। তাই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির মতো বিতর্কিত ইস্যুতে এক তরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদের পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃতভাবে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে সরকার। সেই সঙ্গে বিরোধী দলগুলির কাঁধে সংসদ পণ্ড হওয়ার দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে।
অন্য দিকে সর্বদলীয় বৈঠকে হাজির বিজেপি নেতা কীর্তি আজাদ জানান, তাঁরা সংসদ সচল রাখতেই আগ্রহী। কিন্তু নানা বিতর্কিত ইস্যু এড়াতে বদ্ধপরিকর সরকারই সংসদ সচল রাখতে আগ্রহী নয়।
এফডিআই বিতর্কের জেরে এদিনও অচল ছিল সংসদ। এদিন সর্বদলীয় বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন তিনি। তার পর কেন্দ্রের তরফে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সর্বদল বৈঠক শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নয়াদিল্লির রোহিণীতে যুব কংগ্রেসের 'বুনিয়াদ' সম্মেলনের মঞ্চ থেকে এ ব্যাপারে অনড় অবস্থান নেওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গেই আরও প্রকট হল শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে অচলাবস্থা জারি থাকার সম্ভাবনা।