Manipur Violence: অশান্ত মণিপুর! কিন্তু কেন? জেনে নিন...
জানা গিয়েছে, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া মণিপুরের কুকি অধ্যুষিত জেলায় প্রচুর পরিমাণে পেট্রোলিয়াম মজুদ এবং অন্যান্য খনিজ খুঁজে পেয়েছে। কুকি সম্প্রদায়ের মানুষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অভিযোগ যে মেইতেইদের দখলে থাকা সরকার তাদের সবকিছু কেড়ে নিতে চায়।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: জাতিগত হিংসা উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট রাজ্য মণিপুরকে ঘিরে ফেলেছে। একে অনেকেই গৃহযুদ্ধের রাজ্য হিসেবে অভিহিত করেছে। এই রাজ্যের দুটি বৃহত্তম গোষ্ঠী, সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতি এবং সংখ্যালঘু কুকি-র মধ্যে ক্রমাগত বাড়ছে সমস্যা। সম্প্রতি এই অঞ্চলে মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এরমধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল মেইতেই পুরুষদের হাতে দুই কুকি মহিলাকে নগ্ন করে সকলের সামনে প্যারেড করানো। মে মাসে এই আক্রমণের ঘটনা ঘটে এবং এই সপ্তাহে এই ঘটনার একটি মর্মান্তিক ভিডিয়ো ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়।
দেশের কোন অংশে মণিপুর?
ভারতের উত্তর-পূর্বের পার্বত্য অংশের রাজ্য হল মণিপুর। ভারতীয় এই রাজ্যটি বাংলাদেশের পূর্বে এবং মায়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত। এই রাজ্যে আনুমানিক ৩৩ লক্ষ মানুষের বাস। এই জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। অন্যদিকে প্রায় ৪৩ শতাংশ কুকি এবং নাগা। এরাই রাজ্যের প্রধান সংখ্যালঘু উপজাতি।
কী ঘটছে?
মে মাসে শুরু হওয়া হিংসার ঘটনায় কমপক্ষে ১৩০ জন নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ৪০০ জন আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং পুলিস এই হিংসা দমন করতে লড়াই করছে এবং এর ফলে ৬০,০০০ এরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হতে বাধ্য হয়েছেন।
পাশপাশি পুলিসের অস্ত্রাগার লুট করা হয়েছে। শতাধিক গির্জা এবং এক ডজনেরও বেশি মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে এবং বহু গ্রামে আক্রমণ করা হয়েছে।
কীভাবে এই ঘটনার সূত্রপাত?
মেইতেইরা সরকারিভাবে নিজেদের উপজাতি ঘোষণা করার দাবি জানায়। এরপরেই মেইতেইদের এই দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করে কুকিরা। এরপরেই উত্তেজনা বেড়ে যায়। মেইতেইদের এই দাবির বিপক্ষে কুকি সম্প্রদায়ের প্রধান যুক্তি ছিল যে সরকার ও সমাজের উপর মেইতেইদের ইতিমধ্যেই শক্তিশালী প্রভাবকে আরও জোরদার করবে তাদের উপজাতি স্ট্যাটাস। পাশপাশি তাদের উপজাতি হিসেবে ঘোষণা করলে সেটা তাদের কুকি প্রধান অঞ্চলে বসতি স্থাপনের বা জমি কেনার সুযোগ দেবে।
কিন্তু এছাড়াও অন্যান্য কারণ রয়েছে এর পিছনে। কুকিদের দাবি মেইতেই-নেতৃত্বাধীন সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের আড়ালে আসলে কুকি সম্প্রদায়কে উপড়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে।
পাশাপাশি মায়ানমার থেকে আসা অবৈধ অভিবাসন সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা জমি ব্যবহারের উপর চাপ বাড়িয়েছে এবং বেকারত্ব যুবকদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: Ram Mandir, Ayodhya: লোকসভা ভোটের আগেই রামমন্দির উদ্বোধন? প্রাণপ্রতিষ্ঠায় আমন্ত্রণ মোদীকে!
কারা মেইতেই? কারা কুকি?
মণিপুর, মায়ানমার এবং আশপাশের এলাকায় মেইতেই-দের শিকড় রয়েছে। এদের একটি বিশাল অংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু। যদিও কেউ কেউ সানামাহি ধর্মও অনুসরণ করে।
অন্যদিকে কুকিরা মূলত খ্রিস্টান। তাঁরা ভারতের উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি মণিপুরের থাকা কুকিদের অনেকেরই শিকড় মায়ানমারে রয়েছে।
মেইতেই-দের বেশিরভাগই ইম্ফল উপত্যকায় বাস করে। অন্যদিকে কুকিরা আশেপাশের পাহাড়ে এবং অন্যান্য অঞ্চলে বাস করে।
কী বলছে জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সার্ভে
জানা গিয়েছে, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া মণিপুরের কুকি অধ্যুষিত জেলায় প্রচুর পরিমাণে পেট্রোলিয়াম মজুদ এবং অন্যান্য খনিজ খুঁজে পেয়েছে। কুকি সম্প্রদায়ের মানুষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অভিযোগ যে মেইতেইদের দখলে থাকা সরকার তাদের সবকিছু কেড়ে নিতে চায়।
মেইতেই এবং কুকিদের মধ্যে গত কয়েক দশক ধরে একটি অস্বস্তিকর সম্পর্ক রয়েছে। জমি এবং অবৈধ অভিবাসন রয়েছে দ্বন্দ্বের মূলে।
জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার করা সার্ভে থেকে দেখা গিয়েছে মণিপুরে নিকেল, তামা এবং প্লাটিনাম গ্রুপের প্রচুর পরিমাণে খনিজ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ম্যাগনেটাইট, আ্যজুরাইট এবং ম্যালাকাইট গোত্রের খনিজ।
মণিপুরের বেশিরভাগই পাহাড়ি জমি। আর এই সব খনিজ পদার্থ সঞ্চিত অঞ্চলেই বহু যুগ ধরে আদিবাসী মানুষরা বাস করছেন।
বিজেপি-র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি
মণিপুরে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপির ইশতেহারে রাজ্যের ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইন, (AFSPA) ১৯৫৮ বাতিল করার আরেকটি জোরাল দাবির বিষয়ে নীরব ছিল।
রাজ্যের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতির উদ্দেশ্য ছিল দীর্ঘ নাগা সংঘাতের অবসান ঘটাতে স্বাক্ষরিত হতে চলা চূড়ান্ত নাগা চুক্তির দাবি সম্পর্কে মেইতেই সম্প্রদায়ের ভোটারদের মধ্যে থেকে উদ্বেগ দূর করা।
হিন্দু মেইতেইরা উপত্যকার অন্তত ৪০টি নির্বাচনী এলাকায় মূল শক্তি। অন্যদিকে খ্রিস্টান নাগা এবং কুকিরা পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য ২০টি আসনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় ছিল।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করেন যে মণিপুরের ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, বিজেপি মেইতেইদেরকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছিল কারণ তাদেরকে ২০২২ সালের নির্বাচনের বৈতরণী পার করার জন্য নির্বাচন-পরবর্তী জোটের জন্য এনপিএফ-এর উপর ভরসা করতে হতো। পাশাপাশি এতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের কথাও বলা হয়।
কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং?
নিজের বক্তৃতায়, এন বীরেন সিং বলেছিলেন, ‘প্রক্রিয়াটি বিবেচনা করে আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, এই ইশতেহারটি রাজ্যে এই ধরণের প্রথম’। বিজেপি-র নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি ও উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করছি’।
শান্তি ফেরেনি রাজ্যে
যদিও পরবর্তীকালে শান্তি এবং উন্নয়নের প্রশ্নে রাজ্যের অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়েছে বলে জানা যায়নি। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সরকারের উচ্ছেদ অভিযান আদিবাসীদের মধ্যে বিক্ষোভের জন্ম দেয়। ১১ এপ্রিল ইম্ফলের উপজাতি অঞ্চলে তিনটি গির্জার 'অবৈধ নির্মাণ' ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। পাশপাশি নিউ লামকা শহরে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে, জনতা সভাস্থল জ্বালিয়ে দেয়।