অমৃতসর ট্রেন দুর্ঘটনা : প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দিতে উঠে আসছে হাড় হিম করা তথ্য
অমৃতসরের মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনার পর চারপাশে শুধু হাহাকারের ছবি।
নিজস্ব প্রতিনিধি : কাটা মাথার ছবি পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। হোয়াটস অ্যাপে। ধরহীন মাথাটা দেখেই আঁতকে ওঠেন বিজয় কুমার। কপাল চাপড়ে শুধু বলে ওঠেন, ''মণীশ। এটা আমার ছেলে।'' একাদশ শ্রেণীতে পাঠরত মণীশ দশেরার রাবণের কুশপুতুল পোড়ানো দেখতে গিয়েছিল। মণীশের আর বাড়ি ফেরা হয়নি। বাবা বিজয় কুমার গোটা দিন হন্যে হয়ে ছেলেকে খুঁজে বেরিয়েছিন। কিন্তু হদিশ পাচ্ছিলেন না। অবশেষে, হোয়াটস অ্যাপে তাঁকে ছেলের ধরহীন মুণ্ডুর ছবি পাঠানো হয়। মণীশের এমন মর্মান্তিক পরিণতি মানতে পারছেন না বিজয়বাবু। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন তিনি। অমৃতসরের মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনার পর চারপাশে শুধু হাহাকারের ছবি।
আরও পড়ুন- অমৃতসর ট্রেন দুর্ঘটনার দায় নিল না কেউ, রাবণ দহনের আয়োজক কংগ্রেস কাউন্সিলর বেপাত্তা
কিমতি লাল চেয়েছিলেন, এবার মেয়ে ও নাতনি তাঁদের সঙ্গে দশেরার উত্সব পালন করুক। মেয়ের বাড়ি লুধিয়ানায়। তিনিই আমন্ত্রণ জানিয়ে মেয়ে ও ১৮ মাসের নাতনি নুরকে নিজের বাড়িতে এনেছিলেন। গুরু নানক দেব হাসপাতালে গুরুতর আহত হয়ে ভর্তি কিমতি লাল। তাঁর মেয়ে ও নাতনির দেহ পাওয়া গিয়েছে রেললাইন থেকে কয়েকশো মিটার দূরে। শোকাতুর গলায় কিমতি লাল বলছিলেন, ''আমার জন্যই তো ওদের এমন পরিণতি হল। আমিই ওদের ডেকে এনেছিলাম। আমার জীবনে বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে আসছিল পাশের বেডে শুয়ে থাকা গুরজিতের। বলছিলেন, বাবা ও বোনকে হারিয়েছি আমি। বাড়িতে বৃদ্ধা মা ক্ষণে ক্ষণে জ্ঞান হারাচ্ছে। আমরা অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিছুক্ষণ আগেই সেন্ট্রাল ট্র্যাক দিয়ে একটা ট্রেন গেল ধীর গতিতে। তার পর আমরা যে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেটার উপর ট্রেন চলে এল। আমি অনেকটা দূর থেকেই দেখতে পেয়েছিলাম ট্রেন আসছে। তড়িঘড়ি সরে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছু মানুষ আমাদের গায়ে এসে পড়ল। প্রচণ্ড ঠেলাঠেলিতে আর সরতে পারলাম না। তার পর আর কিছুই মনে নেই।''
আরও পড়ুন- এলাহাবাদ এবার প্রয়াগরাজ, নির্দেশিকা জারি যোগী সরকারের
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী অজয় কুমার দিলেন হাড় হিম করা তথ্য। তিনি আবার বললেন, ''আমি চোখের সামনে কিছু মানুষকে ট্রেনর ধাক্কায় শূন্যে উড়ে যেতে দেখলাম। বাচ্চা, বুড়োসহ অনেকেই ছিটকে গিয়ে পড়েছিল কয়েকশো মিটার দূরে। আমি আমার বোনের নিথর দেহ লাইন থেকে অনেকটা দূরে উদ্ধার করি। ট্রেনটা একটু আস্তে গেলে এতগুলো মানুষ এভাবে মারা যেত না।''