ভোটের মুখে উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ! লাভবান হবেন কারা?

কেন্দ্র বলছে সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সংরক্ষণ রয়েছে। কিন্তু এই সংরক্ষণ আনা হচ্ছে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য

Updated By: Jan 7, 2019, 09:38 PM IST
ভোটের মুখে উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ! লাভবান হবেন কারা?
ফাইল চিত্র

জ্যোতির্ময় কর্মকার

কল্পতরুই বলা যায়। ভোটের মুখে উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষণের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাশ করিয়ে প্রচারের হাতিয়ারে ধার বাড়াল বিজেপি। ওই বিল সংসদে শেষমেশ পাশ না হলেও ভোটের ময়দানে ফায়দা তোলা যাবে তা বিলক্ষণ জানেন মোদী- শাহরা। তাই বিরোধীদের কটাক্ষ, এই প্রস্তাব আসলে ‘গিমিক’। কেউ বলছেন ‘জুমলা’।

আদৌ কি ‘জুমলা’! যদি শীতকালীন অধিবেশনে এই বিল পাশ হয়, তা হলে কারা প্রকৃতপক্ষে উপকৃত হবেন? উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষণের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছিল উত্তর প্রদেশের ঠাকুর, রাজস্থানের রাজপুত, হরিয়ানার জাঠ, গুজরাটের প্যাটেল পতিদার, মহারাষ্ট্রের মারাঠা সম্প্রদায়ের মানুষ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজয় সামপ্লা দাবি করেন, “এই সংরক্ষণের আওতায় পড়বে ব্রাহ্মণ, বেনিয়া, খ্রিস্টান, মুসলিম সম্প্রদায়ও।” আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া জাতির সংরক্ষণের পথে হাঁটছে মোদী সরকার। কিন্তু প্রশ্ন থাকছেই, আদৌ কি ভোটের আগে বাস্তব রূপ পাবে এই বিল?

আরও পড়ুন- ‘বাতিল’ তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার করলে জেল হবে অফিসারেরই, জানাল সুপ্রিম কোর্ট

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে সরকারি চাকরি ও ভর্তির ক্ষেত্রে সংরক্ষণে ৫০ শতাংশ উর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়। সংবিধানের ১৬(৪) অনুচ্ছেদে তফশিলি জাতি ১৫ শতাংশ, তফশিলি উপজাতি ৭.৫ শতাংশ এবং ওবিসি ২৭ শতাংশ সংরক্ষিত রয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে তফশিলি জাতি ১৬.৬৬ শতাংশ এবং ওবিসি ২৫.৮৪ শতাংশ বাড়িয়ে মোট ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রের এই ১০ শতাংশ উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ কতটা গ্রাহ্য হবে সে বিষয়ে সন্দিহান রয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবারই বিলটি পেশ করা হবে সংসদে। সংবিধানের ১৫ এবং ১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে ওই বিল পেশ করা হবে। তবে, আগামিকালই শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন। আদৌ কি সম্ভব হবে দুই কক্ষ থেকে ওই বিল পাশ করানো!

ফেব্রুয়ারিতে শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। সেখানেও বিলটিকে পাশ করানোর মরিয়া প্রচেষ্টা চালাবে সরকার। এর মধ্যে অধিকাংশ রাজ্যের বিধানসভা থেকে বিলটি পাশ করানোর অনুমতিও প্রয়োজন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ওই বিল পাশ কার্যত অসম্ভব। আর কোনওভাবে যদি এই বিল আদালতের দরজায় গিয়ে পৌঁছয়, তাহলে অন্তত লোকসভা নির্বাচনের আগে তা পাশ করানোর সম্ভবনাই নেই। জানা যাচ্ছে, শীতকালীন অধিবেশন আরও ২ দিন বাড়ানো হতে পারে।

আরও পড়ুন- হ্যাল নিয়ে দেশকে বিভ্রান্ত করছেন রাহুল, সংসদে বললেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

সূত্রের খবর, কেন্দ্র বলছে সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সংরক্ষণ রয়েছে। কিন্তু এই সংরক্ষণ আনা হচ্ছে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য। উল্লেখ্য, বেশ কয়েকটি রাজ্যে ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ করা হয়েছে। তামিলনাড়ুতে ৬৯ শতাংশ সংরক্ষণ রয়েছে। তেমনই তামিলনাড়ু মডেল অনুসরণ করে ৬৬ শতাংশ সংরক্ষণ করার ঘোষণা করে মহারাষ্ট্র। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে একটি রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, যুক্তিসম্পন্ন ভাবনায় সংরক্ষণের উর্ধ্বসীমা বাড়াতে পারে রাজ্যগুলি। সেই জন্যই কী আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সংরক্ষণ চাইছে কেন্দ্র। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এই সংরক্ষণের প্রস্তাব এনে এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন মোদী। একদিকে লোকসভা নির্বাচনে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ বিল। অন্য দিকে রামমন্দির নিয়ে কিছু করতে না পারলেও এই প্রস্তাবে সঙ্ঘ পরিবারের জন্য কিছুটা খুশির হাওয়া আনতে পেরেছেন তিনি। কারণ, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সংরক্ষণ প্রথম থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিল সঙ্ঘ পরিবার।

.