সর্বদল বৈঠক শেষ, মিলল না সমাধান সূত্র
সর্বদল বৈঠকেও জট কাটল না। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ইস্যুতে মিলল না সমাধানসূত্র।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আজকের সর্বদল বৈঠকেও পাওয়া গেলনা সমাধানসূত্র। সংসদের অচলাবস্থা কাটাতে আজ সকালে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সংসদে বসে সর্বদল বৈঠক। প্রণব মুখোপাধ্যায় জানান তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বৈঠকের রিপোর্ট জানাবেন।
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ইস্যুতে সোমবার ফের উত্তাল হল সংসদ। কংগ্রেস এবং বিরোধী শিবিরের প্রবল বাদানুবাদের জেরে মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন।
মূল্যবৃদ্ধি, কালোটাকা, দুর্নীতি ইস্যুতে শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহে বলতে গেলে কোনও কাজই হয়নি। দ্বিতীয় সপ্তাহের গোড়া থেকে খুচরো ব্যবসায়ে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি ইস্যুতে সরকারকে কোণঠাসা করার উদ্যোগ নিয়েছে বিরোধীরা। এনডিএ শরিক জনতা দল (ইউনাইটেড) লোকসভায় গতকাল মুলতুবি প্রস্তাব আনার জন্য একটি নোটিস দেওয়া হয়েছিল।
এই ইস্যুতে বিরোধীরা একজোট বলেই জনতা দল ইউনাইটেড নেতা শরদ যাদব জানিয়েছিলেন। কার্যক্ষেত্রে শরদ যাদবের এই দাবির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। এনডিএ শিবিরের পাশাপাশি বামেরাও মাল্টি ব্র্যান্ড খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ এবং সিঙ্গল ব্র্যান্ড রিটেলে ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নির তীব্র বিরোধিতা করে সংসদে।
এদিন লোকসভা অধিবেশনের শুরুতে এই ইস্যুতেই মুলতুবি প্রস্তাব জমা দেন বিরোধীরা। তবে স্পিকার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার অনুমতি না দিলে বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে প্রথমে বেলা বারোটা পর্যন্ত পরে দিনের মতো মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন। একই ইস্যুতে বিরোধী বিক্ষোভের জেরে মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভার অধিবেশনও।
এদিন এফডিআই ইস্যুতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন এআইএডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা। এই ইস্যুতে ইউপিএ শরিক তৃণমূল কংগ্রেস এবং ডিএমকে-ও বিরোধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এনডিএ-র শরিক শিরোমনি অকালি দলের তরফে ইতিমধ্যেই মাল্টি ব্র্যান্ড এবং সিঙ্গল ব্র্যান্ড রিটেলে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কেন্দ্রীয় প্রস্তাব সমর্থন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অবস্থান বদলের জন্য অকালি দল সুপ্রিমো প্রকাশ সিং বাদলের কাছে আবেদন জানিয়েছে বিজেপি।
বামেদের তরফে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহৃত না হলে কোনও রকম আলোচনায় অংশগ্রহণ করা হবে না। সিপিআই সাংসদ গুরুদাশ দাশগুপ্তর সাফ কথা, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে সংসদ চলতে দেওয়া হবে না।
অন্য দিকে সিপিআইএমের রাজ্যসভার নেতা সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, চলতি অধিবেশনে লোকপাল বিলসহ একাধিক অস্বস্তিকর ইস্যু এড়িয়ে যেতে চায় সরকার। তাই লগ্নি নীতির মত বিতর্কিত ইস্যুতে এক তরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদের পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃতভাবে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে সরকার। সেই সঙ্গে বিরোধী দলগুলির কাঁধে সংসদ পণ্ড হওয়ার দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে।
শুধু বিরোধী কিংবা জোটশরিক নয়, এফডিআই বিতর্ক নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে কংগ্রেসের মধ্যেও। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি পাঠিয়েছেন কেরল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রমেশ চেন্নিথালা। বিষয়টি নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী ওমান চণ্ডীর সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে আগামিকাল সর্বদল বৈঠক ডাকছে সরকার। রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনাও করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন সংসদের অধিবেশন পণ্ড হওয়ার পর ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে জট কাটানোর দিশানির্দেশিকা নিয়ে আলোচনা করেন। অন্য দিকে বিরোধী শিবিরের মুড বুঝতে লালকৃষ্ণ আডবাণী ও লোকসভায় বিজেপির নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবনকুমার বনশল।