‘অভ্যর্থনা জানাচ্ছি তৃণমূলকে, শিলচরের ‘ভুল শুধরে’ নিল সোনোয়াল সরকার!

অসমের বিজেপি সরকারের এমন দ্বৈত অবস্থানে রীতিমতো জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। অসমের ৫ বাঙালিকে কে বা কারা হত্যা করল এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়

Updated By: Nov 4, 2018, 03:15 PM IST
‘অভ্যর্থনা জানাচ্ছি তৃণমূলকে, শিলচরের ‘ভুল শুধরে’ নিল সোনোয়াল সরকার!
নিজস্ব চিত্র। কমলিকা সেনগুপ্ত

কমলিকা সেনগুপ্ত

চলতি বছরে ২ অগস্ট। নাগরিকপঞ্জি বিতর্কে অসম গিয়েছিল তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। সে দিনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা ছিল, নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া ৪০ লক্ষ মানুষের পাশে রয়েছেন তিনি। যার মধ্যে সিংহভাগই রয়েছে বাঙালি। শিলচর বিমানবন্দরে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল পৌঁছতেই বাধা দেয় সোনোয়াল সরকারের পুলিস। টুঁ শব্দটি করতে দেওয়া হয়নি। বিমানবন্দর থেকেই কার্যত জোর করে দলটিকে ফেরত্ পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতায়। কাকলি ঘোষদস্তিদারদের সঙ্গে পুলিসের রীতিমোত ধস্তাধস্তি হওয়ার অভিযোগও ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফিরতে হয় সুখেন্দু-কাকলি-ফিরহাদ হাকিমদের।

আরও পড়ুন- ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নাও হতে পারেন রাহুল, মন্তব্য শশীর

সে দিনের শিলচরের ঘটনার উলটপুরাণ দেখা গেল রবিবারের ডিব্রুগড় বিমানবন্দরে। দুষ্কৃতীদের হাতে নিহত ৫ বাঙালির পরিবারদের সঙ্গে দেখা করতে আসে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। আগেই মমতা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, ওই বাঙালি পরিবারদের পাশে রয়েছেন তিনি। বিমানবন্দরে পুলিসের সঙ্গে কথা বলে ডেরেক ও'ব্রায়েন, নাদিমুল হক, মমতা ঠাকুর ও মহুয়া মৈত্রের প্রতিনিধি দল। বাধা দেওয়া তো দূরাস্ত, তাঁদের কড়া নিরাপত্তা দিয়ে তিনসুকিয়া নিয়ে গেল সোনোয়ালের পুলিস। এমনকি নিহতদের পরিবারে বাড়িতে উপস্থিত থাকা বিজেপি বিধায়ক বোলেন চেতিয়ার গলায় শোনা গেল নরম সুর। তিনি বলেন, এটা রাজনীতি করার সময় নয়। ওদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছি। অসম সরকার আগেই জানিয়ে দেয়, তৃণমূল এলে বাধা দেবে না তার সরকার। তবে, তৃণমূল বিধায়ক মহুয়া মৈত্র বলেন, “ওরা এখানে জন্মেছে। বড় হয়েছে এখানে। ওদের হত্যার পিছনে বিষ ঢোকাল কে? তদন্ত করা উচিত।”

আরও পড়ুন- অসমে নিহতদের পরিবার পিছু ১ লক্ষ টাকা সাহায্যের ঘোষণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

অসমের বিজেপি সরকারের এমন দ্বৈত অবস্থানে রীতিমতো জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। অসমের ৫ বাঙালিকে কে বা কারা হত্যা করল এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। উলফা-ও এই হত্যাকাণ্ডের দায় নেয়নি। স্বভাবতই ফুঁসছে অসমের কয়েক লক্ষ বাঙালি। এর আগে আলোচনাপন্থী আলফা নেতারা হুঁশিয়ারি দেয়, ঘরে ঘরে ঢুকে বাঙালিদের খুন করা হবে। নাগরিকপঞ্জির খসড়া বেরনোর পর থেকেই অসমে বাঙালিদের ভবিষ্যত্ প্রশ্নের মুখে পড়ে। ফের ‘বাঙালি খেদাও’ জল্পনা প্রবল হয়ে ওঠে।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে অসমের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, দেশজুড়ে একটা অশুভ শক্তি কাজ করছে। গুজরাটে বিহারি খেদাও চলছে। অসমে চলছে বাঙালি খেদাও। সারা দেশের মানুষ সন্ত্রস্ত। প্রশ্ন উঠছে,  রবিবার, অসমের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজেপি সরকারের সমালোচনা তৃণমূল যে করবে, এ কথা নিশ্চিত হয়েও  কেন বাধা দিল না সোনোয়াল সরকার? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের যুক্তি, লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করতে চাইছে না বিজেপি। একেই বাঙালি নিধন নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে বিজেপি। পাশাপাশি বিজেপির অন্দরে অনেকে মনে করছেন, নাগরিকপঞ্জির সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। হত্যার রহস্যের কিনারা যত দিন হচ্ছে, ভোটের আগে নরম সুরেই গলা মেলাবে বিজেপি। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের একাংশ।

.