সেনাবাহিনীর `সন্দেহজনক গতিবিধি`, খবর অস্বীকার কেন্দ্রের

সেনাপ্রধানের সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সংঘাতের আবহের মধ্যেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে হিসার এবং আগ্রা থেকে দিল্লি পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সন্দেহজনক তত্পরতার `খবর` ঘিরে তৈরি হল প্রবল চাঞ্চল্য। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর তরফে পুরো ঘটনার কথা অস্বীকার করা হলেও সরকার ও সেনার সমন্বয়ের অভাব নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠেছে।

Updated By: Apr 4, 2012, 02:03 PM IST

সেনাপ্রধানের সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সংঘাতের আবহের মধ্যেই ফের সামনে এল নতুন বিতর্ক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখেই হিসার এবং আগ্রা থেকে দিল্লি পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সন্দেহজনক তত্পরতার `খবর` ঘিরে প্রবল চাঞ্চল্য তৈরি হল রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে। এদিন সকালেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর তরফে পুরো ঘটনার কথা অস্বীকার করা হলেও সরকার ও সেনার সমন্বয়ের অভাব নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠেছে।
বুধবার সকালে একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়, গত ১৬ জানুয়ারি রাতে আগ্রা এবং হিসারের ক্যান্টনমেন্ট থেকে দিল্লি যায় সেনাবাহিনীর মেকানাইজ্‌ড ইনফ্যান্টি ও প্যারাট্রুপার রেজিমেন্টের দু`টি ইউনিট। অত্যাধুনিক সাঁজোয়া গাড়ি, অস্ত্রশস্ত্র এবং রাত্রিকালীন যুদ্ধের সরঞ্জাম নিয়ে রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে হাজির হন ফৌজের এলিট স্ট্রাইকিং গ্রুপের অফিসার ও জওয়ানরা। গোটা ঘটনা সম্পর্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে কোনও তথ্যই ছিল না। অন্ধকারে ছিল গোয়েন্দা বিভাগও।
প্রকাশিত সংবাদটিতে জানান হয়েছে, রাজধানীর দিকে দুই বাহিনীর অগ্রসর হওয়ার খবরে চরম সতর্কতা গ্রহণ করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। খবর দেওয়া হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে। রাইসিনা হিলের রাষ্ট্রপতি ভবনেও শুরু হয় তত্‍পরতা। দিল্লি জুড়ে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। দিল্লিমুখী সমস্ত গাড়িকে বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে সেনা সদর দফতরের তরফে আগুয়ান সেনা ইউনিট দু`টিকে ছাউনিতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ততক্ষণে অবশ্য হিসারের ৩৩ নম্বর আর্মাড ডিভিশনের মেকানাইজ্‌ড ইনফ্যান্টি বাহিনী দিল্লির নজফগড় পর্যন্ত এসে পৌঁছেছিল। আগ্রার ৫০ নম্বর প্যারাট্রুপার ব্রিগেডের ইউনিটটি এসে পৌঁছেছিল পালম বিমানবন্দরের কাছে।

সেনা ইউনিটগুলি ফিরে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিদেশ সফররত প্রতিরক্ষা সচিব শশীকান্ত শর্মাকে দ্রুত দেশে ফেরার নির্দেশ দেয় প্রতিরক্ষামন্ত্রক। ১৭ তারিখ সকালে গোটা বিষয়টি জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। পুরো ঘটনা সম্পর্কে ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন`স (ডিজিএমও), লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে চৌধুরির কৈফিয়ত তলব করা হয়। প্রসঙ্গত, আগ্রার ৫০ নম্বর প্যারা ব্রিগেড সরাসরি ডিজিএমও-র নিয়ন্ত্রণাধীন। অন্যদিকে হিসারের ৩৩ আর্মাড কোরের কমান্ড রয়েছে মথুরা-স্থিত ১ নম্বর কোর-এর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে সিংয়ের হাতে। দুই ফৈজি কর্তাই সেনাপ্রধান ভি কে সিংয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অফিসার হিসেবে পরিচিত।
সেনাবাহিনীর বক্তব্য, কুয়াশায় সেনা অভিযানের মহড়া দিতেই রাশিয়ায় নির্মীত অত্যাধুনিক সাঁজোয়া গাড়ি (ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকল্‍) এবং প্যারাট্রুপার ইউনিট নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অথচ এ ধরনের তত্পরতার কথা জানতো না বায়ুসেনাও। যদিও আগ্রা-স্থিত ৫০ নম্বর আর্মি প্যারা-ব্রিগেড মূলত বিমানবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমেই যুদ্ধাভ্যাস করে থাকে। প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই পুরো ঘটনার তদন্ত করে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে আইবি।
১৫ জানুয়ারি দিল্লিতে সেনাদিবস অনুষ্ঠান পালনের পর ক্যান্টনমেন্টে ফিরে গিয়েছিল সেনার সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলি। পরদিন, ১৬ জানুয়ারি বয়স বিতর্ক মামলায় সুপ্রিম কোর্টে প্রথম শুনানি ছিল সেনাপ্রধান ভি কে সিংয়ের। সেদিন রাতেই সেনাবাহিনীর এই নজিরবিহীন তত্পরতায় নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। এই ঘটনার জন্য সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করেছে সেনা অফিসারদের একাংশ। সরকার-সেনাপ্রধান সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রেক্ষিতে বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে।

যদিও মেকানাইজ্‌ড ইনফ্যান্টি ও প্যারাট্রুপার রেজিমেন্টের দু`টি ইউনিটের এই নজিরবিহীন তত্‍পরতার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই দ্রুত ড্যামেজ কন্ট্রোল-এ নামে সাউথ ব্লক। সাংবাদিক বৈঠক করে প্রতিরক্ষা সচিব শশীকান্ত শর্মা জানান, সেনাবাহিনীর রুটিন মহড়ার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে অবহিত করার বিধি নেই। তাঁর অভিযোগ, পুরো ঘটনা বিকৃত করেছে মিডিয়া। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টেকে `ভিত্তিহীন` বলে বণর্না করেছেন। এদিন বিশাখাপত্তনমে নৌবাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ভারতীয় সেনা এমন কোনও পদক্ষেপ করবে না যা তার ঐতিহ্য ও মর্যাদার পরিপন্থী। জাতীয় নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে খবর প্রচারের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও দায়িত্ববোধ থাকা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাঁর সচিবালয়ের তরফে জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতে কেন্দ্রকে না জানিয়ে দিল্লির উপকণ্ঠে দু`টি এলিট আর্মি ইউনিটের হাজির হওয়ার খবর উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে কোনও সমন্বয়ের অভাব বা ভুল বোঝাবুঝি নেই। রাজনৈতিক বিতর্ক কিন্তু তাতে থেমে থাকছে না। গোটা ঘটনার জন্য ইউপিএ সরকারের কর্তৃত্বের অভাবকে দায়ী করার পাশাপাশি, গোটা ঘটনার যথাযথ ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা না দিতে পারায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির পদত্যাগ চেয়েছে বিজেপি।

.