বাঁচতে মোদীর শরণে! ব্যাঙ্কের ২০ হাজার-সেচে ৭০ হাজার কোটির দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অজিত
অজিত পাওয়ারের বিদ্রোহের কারণ কী?
নিজস্ব প্রতিবেদন: পরিষদীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে দিলেও অজিত পওয়ারকে দল থেকে বহিষ্কার করলেন না শরদ পওয়ার। আজ বিকেলে এনসিপির বৈঠকে অজিতকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ৫৪ জন এনসিপি বিধায়কের মধ্যে শরদ পওয়ারের ডাকা বৈঠকে হাজির হন ৩৭ জন। ছিলেন অজিত ঘনিষ্ঠ বিধায়ক ধনঞ্জয় মুণ্ডেও। তবে ভাইপো অজিতের বিদ্রোহের নেপথ্যে 'চাচা'র কৌশল দেখছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার বলছেন, দুর্নীতির জুজু থেকে বাঁচতেই বিজেপির চাপে পড়ে 'বিবাগী' হয়েছেন অজিত।
কাকার হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা। মন্ত্রিত্ব লাভ। দলের নীচুতলায় দাদা বলে পরিচিতি। সেই ভাইপো অজিত পওয়ারের কাছেই ধাক্কা খেলেন বহু যুদ্ধের ঘোড়া শরদ পওয়ার। শুক্রবার রাতেও শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের বৈঠকে ছিলেন অজিত পওয়ার। তখনও কেউ ভাবতে পারেননি রাত কাটার আগেই নিজের অনুগামীদের নিয়ে পদ্মশিবিরে যোগ দেবেন তিনি। ২০১০ সালে, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এনসিপি জোট সরকারে উপমুখ্যমন্ত্রী হন অজিত। পদ না পেলে অজিতের নির্দেশে দলীয় বিধায়করা সরকারের ওপর সমর্থন তুলে নিতে পারেন।আর সেক্ষেত্রে তাঁর কিছু করার নেই বলে সেদিন মন্তব্য করেন শরদ পওয়ার।ফলে এনসিপিতে শরদ পওয়ারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার অজিত পওয়ারই পাবেন বলে মনে করা শুরু হয়। যদিও, শরদ পওয়ার নিজে চান, মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেকেই দলের দায়িত্ব দিতে চান বলে খবর।
দলে ভাঙনের পর হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে সুপ্রিয়া সুলে লিখেছেন,''দল এবং পরিবার ভেঙে গেল। কাকে বিশ্বাস করবেন? কখনও এত বড় প্রতারণার শিকার হইনি। ওকে সমর্থন করেছি, ভালবাসা দিয়েছি, দেখুন প্রতিদানে কী পেলাম!'' বোনের হাতে দলের ব্যাটন। কাকার গোপন ইচ্ছার কথা জেনেই কি, দল ভাঙার রাস্তায় গেলেন অজিত? রাজনৈতিক মহলের মতে থাকতে পারে অন্য কারণও। যে জন্যই নাকি সম্প্রতি বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান অজিত। উঠে আসছে অজিতের বিরুদ্ধে দুর্নীতিকাণ্ডও।
কেলেঙ্কারি
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে, মহারাষ্ট্র সমবায় ব্যাঙ্কে ২০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর নাম জড়ায়। শুরু হয় ইডি-র তদন্ত। ২০১৪ সালে ৭০ হাজার কোটি টাকার সেচ দুর্নীতিতে নাম জড়ানোয় উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন অজিত। মৌচাকে ঢিল মেরেছেন শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। তাঁর কথায়,''জেলযাত্রার হাত থেকে বাঁচতে বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছেন অজিত পাওয়ার।''
সমবায় ব্যাঙ্ক দুর্নীতিতে ইডি তদন্তের আওতায় আছেন শরদ পওয়ারও। বিজেপি ঘনিষ্ঠতা আছে বলে ভবিষ্যতে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারেন এমন জল্পনাও রয়েছে। ফলে ভাইপোর শিবির বদলে, কাকার হাত আছে কিনা, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপমের প্রশ্ন, শরদ পাওয়ার জানেন না। অথচ বিধায়কদের সমর্থন জুটিয়ে নিলেন অজিত। এটা কীভাবে সম্ভব? বিজেপি সরকার গঠনের সুযোগ পেয়ে যাওয়ায়, সঞ্জয় নিরুপমের মতো আর এক কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি, শরদ পওয়ার এবং নিজের দলের দিকেই আঙুল তুলেছেন।
মহারাষ্ট্রের অঙ্ক
অজিতের কুর্সিলাভের পরই, তাঁকে বিধানসভার দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেন, শরদ পওয়ার। কিন্তু, তিনি এনসিপি সুপ্রিমো হলেও পরিষদীয় নেতা নির্বাচন করেন বিধায়করা। ফলে তাঁরা পাশে থাকলে, কাকার পক্ষে ভাইপোকে বাগে আনা এখন বেশ কঠিন। বলে রাখি, ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ১৪৫. শিবসেনার ৫৬, এনসিপি-র ৫৪ এবং ছোট দল-নির্দল মিলিয়ে আরও ২৯ জন বিধায়ক রয়েছেন। বিজেপি সূত্রে দাবি, নিজেদের ১০৫, এনসিপি-র ৩৬ এবং ১৪ জন নির্দল বিধায়ক নিয়ে অনায়াসেই ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে যাবে তারা। ২০ জন শিবসেনা বিধায়কও যোগাযোগ রাখছেন তাদের সঙ্গে। অজিত পওয়ারের অনুগামী ১৮ জন বা তার বেশি বিধায়ক এনসিপি ছেড়ে বেড়িয়ে গেলে দলত্যাগ আইনের আওতায় পড়বেন না। ফলে, রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে আস্থাভোটের আগে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নেমেছে বিজেপি। ৯০ মিনিটে মধ্যে হারানো না গেলে, টাইব্রেকারে যাদের হারানো ইদানীং প্রায় অসম্ভব!
আরও পড়ুন- ইডেনে গ্যালারিতে বসেই চলছিল বেটিং, ৫ জনকে পাকড়াও করল কলকাতা পুলিস