পায়ে পায়ে শান্তিনিকেতন...
হাসতে হাসতে, ভালবাসতে-বাসতে, বাউন্ডুলে প্রাণে, অল্প ছুটিকে সঙ্গী করে আমরা এবার শান্তিনিকেতনে।
হাসতে হাসতে, ভালবাসতে-বাসতে, বাউন্ডুলে প্রাণে, অল্প ছুটিকে সঙ্গী করে আমরা এবার শান্তিনিকেতনে।
কলকাতার খুব কাছে রুক্ষ লাল মাটি আর ঘন সবুজের অনন্য মেলবন্ধনের ঠিকানা। বীরভূমের বোলপুরের ছোট্ট জনপদ। বসন্ত নামের ঋতুটার সঙ্গে শান্তিনিকেতনের বাৎসরিক প্রেমটা বেশ জমাটি। শিমুল,পলাশের ডালে ডালে লাল আগুন জালিয়ে শান্তিনিকেতনের বুকে বসন্ত নেমে আসে। দোলের রঙিন আবিরে শান্তিনিকেতন তাকে কাছে টেনে নেয়। উৎসব আর প্রকৃতির জোড়া টানে শান্তিনিকেতনে আসার সেরা সময় তাই বসন্তই।
তবে ভিজতে যদি ভাল লাগে বর্ষাতেও প্রকৃতি সুন্দরীর অন্য এক রূপের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে এখানে। শ্যাওলা-সবুজ পাতা চুঁইয়ে পড়া জলের টুপটাপ শব্দ, মাঝে ঝুপঝাপ বৃষ্টির অকারণ উল্লাস সঙ্গে ব্যাঙ দম্পতির সমবেত সঙ্গীত। বর্ষার রাত খুঁজে নেবে অন্যমাত্রা।
ঝরা-পাতা আর হাড় কাঁপানো শুকনো ঠান্ডা। সঙ্গতে তিন দিনের পৌষ মেলা। এই নিয়ে শীতের শান্তিনিকেতন। প্রতি ডিসেম্বর মাসের ঠিক ২৩ তারিখ থেকে প্রচুর আলো বাজির রোশনাই সঙ্গে নিয়ে ভুবন ডাঙার মাঠে সূচনা হয় পৌষালী এই মেলার। তবে মেলার সময়কার ভিড় যদি হয় না পসন্দ ২৬ ডিসেম্বরের পর থেকে ফেব্রুয়ারি অবধি যখন তখন চলে আসা যায় এখানে। এই গোটা সময়টাই শীতবুড়ো হাত পা ছড়িয়ে এখানে আরামসে রোদ পোহায়। আর মেঘ মুক্ত আকাশে মাঝরাতে এই বুড়োর সঙ্গে আলাপ করতে চাঁদের বুড়ি ঝুপঝুপে জোৎস্না গায়ে মেখে নেমে আসে শান্তিনিকেতনের চিলেকোঠায়। এপ্রিলের গোড়া থেকে অক্টোবর অবধি এখানে না আসাই ভালো। এই সময়টার কাঠফাটা রোদ আর গরমের অসহ্য দহন শান্তিনিকেতনকে ঠিক করে ভালবাসতেই দেবে না।
লাল মাটির রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে কোন এক একলা বিকেলে পৌঁছে যাওয়া যায় খোয়াইয়ে। এবড়ো খেবড়ো খোয়াইয়ে সোনাঝুরী গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যটা টুক করে পালিয়ে যাওয়ার আগে আকাশের মুখে ঢেলে দিয়ে যায় এক বালতি কমলা রং। সেই কমলা রঙে হারিয়ে যেতে যেতে একটু এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে ক্যানাল পার আর ভাঙ্গা খালের। এই পথ ধরে এগিয়ে গেলে পৌঁছে যাওয়া যায় আমার কুঠীতে। যদিও বর্ষা ছাড়া শান্তিনিকেতনের বুক চিরে বয়ে চলা কোপাই নদীতে জলের সন্ধান মেলে না তবুও কোপাইয়ের ধারে কেটে যেতে পারে অনাবিল আড্ডার একটা গোটা বন্ধু সন্ধে। আশেপাশের নাম না জানা সাঁওতাল গ্রামগুলোও কিন্তু কম সুন্দর নয়। না, প্রথাগত টুরিস্ট্য স্পট গুলোর সঙ্গে এসব জায়গার মোটেও মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং এর সঙ্গে তুলনা চলে কোন সাঁওতাল সুন্দরীর বন্য রূপের। হাতে সময় যদি আর একটু বেশি থাকে তাহলে চলে যাওয়াই যায়ে সবুজবনে। রবি সাঁই-এর বিশ্বভারতী তো সঙ্গে আছেই। বিশ্বভারতীর এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নন্দলাল বসু আর অবন ঠাকুরের তৈরী মুর্যাল বা উত্তরায়ণের প্রতি কোনায় জড়িয়ে থাকা ঠাকুর সংসারের ইতিকথার মাঝে বার বার হারিয়ে যেতে একই রকম ভাল লাগবেই। কেনাকাটার শখ যদি কিঞ্চিৎ উঁকি মেরে যায় মনে শান্তিনিকেতনের একান্ত বাটিক আর কাঁথা স্টীচের হাজারো পসরাতে মন এবং পকেট উভয়ই খুশ হবে। এছাড়াও রয়েছে ডোকরার সাজু-গুজুর সামগ্রী থেকে ঘর সাজাবার হরেক পুতুল। আর তারপর ইতিউতি ঘোরার শেষে যখন কলকাতা কলকাতা মন কেমন তখন ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ফিরে আসা। ফেরার পথের সঙ্গী হবে আবার করে শান্তিনিকেতনে ফিরে আসার একরাশ ইচ্ছে।
যাওয়ার পথ: হাওড়া থেকে গণদেবতা, ইন্টারসিটি, শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস, শহীদ এক্সপ্রেস সহ বেশ কিছু ট্রেনে চেপে ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় বোলপুর স্টেশনে। সেখান থেকে রিক্সা চেপে মিনিট কুড়ির মধ্যেই হাতের মুঠোয় শান্তিনিকেতন।
থাকার হদিশ: ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যুরিজিমের একটি বেশ ভালো অতিথি নিবাস রয়েছে এখানে। ৫০০ থেকে ২০০০ টাকার ঘর মিলবে এখানে। এছাড়াও শান্তিনিকেতনে এখন বহু হোটেল আর রিসর্ট। পৌষ মেলা আর বসন্ত উৎসবে এখানে আসতে গেলে কিন্তু অন্তত পক্ষে ৩ মাস আগে বুকিং করে আসাই উচিৎ। এই দুই সময়ে এখানে হোটেল ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে শুরুই হয়। মাঝারি মাপের হোটেলগুলোতেও ২-৩ হাজারের কমে ঘর পাওয়া ভার হয়। চলে ৩ দিনের প্যাকেজ সিস্টেম। তবে এই দুই বিশেষ উৎসব ছাড়া ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে এখানে বেশ চলনসই হোটেল রয়েছে।