রিনচেনপং কলিং
পাইন-ওক-দেওদারের ঘন সামিয়ানা। অনাবিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর জানা-অজানা অসংখ্য রং-বেরং -এর পাখি।
পাইন-ওক-দেওদারের ঘন সামিয়ানা। অনাবিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর জানা-অজানা অসংখ্য রং-বেরং -এর পাখি। এই নিয়ে একটা কবিতার নাম রিনচেনপং। ১৭০০ মিটার উচ্চতায় পশ্চিম সিকিমের ছোট্ট এই গ্রাম শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ১২৫ কিমি দূরে। পেলিং থেকে দূরত্ব ৪৫ কিমি। সুন্দরী সিকিমের সবুজ-নীল হিমালয় ঘেরা এই গ্রাম নির্জনে ২-৩ দিন ছুটি কাটাবার আদর্শ ডেসটিনেশন। এখানে নেই দোকান পাটের ভিড়, নেই ব্যস্ততা, গাড়ির ধোঁয়া। তার বদলে আছে মেঘমুক্ত দিনে সপার্ষদ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব উপস্থিতি। আছে সবুজের ছায়ায় পাখির ডাক শুনতে শুনতে পাহাড়ি পথে হেঁটে বেড়ানো। পায়ের নিচে সবুজ ঘাসের নরম গালিচা। এদিক-ওদিক ফুটে থাকা নাম না জানা বুনো ফুলের উদ্ধত চাহনি। জানা-অজানা পাখিদের রঙিন পালকে ভালবাসায় তৈরি রিনচেনপং আসলে একটা মায়াবী স্বপ্নের নাম। পাকদণ্ডী বেয়ে ঘণ্টা দেড়েকের ছোট্ট একটা ট্রেকে খুব সহজে পৌঁছে যাওয়া যায় ৬৫০০ ফুট উঁচু রিশম মনস্ট্রিতে। আর একটু ভোরের দিকে যদি ভগ্নপ্রায় এই বহু পুরনো মনস্ট্রির দোরগোড়ায় হাজির হওয়া যায়, রূপসী কাঞ্চনজঙ্ঘার নগ্ন পিঠের উপর সূর্যের লাল আলোর নরম আদরের সাক্ষী থাকার বিরল অভিজ্ঞতা সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে। এছাড়াও অল্প হাঁটাপথে ঘুরে নেওয়া যায় রিনচেনপং মনস্ট্রি, পয়জন লেক, রবীন্দ্র স্মৃতি ভবন। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কিলোমিটার দুয়েক হেঁটে পৌঁছে যাওয়া যায় লেপচা হেরিটেজ হাউসে।
হাতে যদি ১ দিন সময় বেশি থাকে তাহলে এখান থেকে ৩ কিমি দূরে কালুকে চলে যাওয়া যায়। রিনচেনপং-এর তুলনায় দোকানপাট, জনসংখ্যা কিছু বেশি। কিন্তু প্রকৃতির অকৃপণ উজাড় করা ভালবাসার পরিমানটা এখানে একই রকম। শহুরে ব্যাস্ততার ইঁট-কাঠ-পাথরের সীমানা ছাপিয়ে এবারের সফরটা তাহলে হয়েই যাক হিমালয়ের নির্জনতা আর পাহাড়ি সারল্যের মাঝখানে।
যাওয়ার পথ- হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পৌঁছনোর জন্য এখন বেশ কয়েকটা ট্রেন রয়েছে। নিজের সময় সুযোগকে সামলে নিয়ে যে কোনও একটাতে চেপে বসতে পারলেই হল। এছাড়া এসি, নন-এসি কলকাতা-শিলিগুড়ি বাসের সংখ্যাও অসংখ্য। শিলিগুড়ির সিকিম জিপ স্ট্যান্ড থেকে গাড়িতে জোড়থাং হয়ে রিনচেনপং পৌঁছতে সময় লাগে কম বেশি ৫ ঘণ্টা। শেয়ার জিপে জোড়থাং হয়ে আবার সেখান থেকেও শেয়ার গাড়িতে এখানে পৌঁছে যাওয়া যায়।
থাকার হদিশ- রিনচেনপং ও কালুকে থাকার জন্য আছে বেশ কিছু হোটেল, রিসর্ট ও হোম স্টে। ভাড়া ৮০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। প্রয়োজনের তুলনায় থাকার জায়গা খুব বেশি নেই। ভরা সিজনে আগাম বুকিং করে যাওয়াই উচিত।