লকডাউনে বাড়িয়ে তুলুন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, নিয়মিত পাতে রাখুন এই সব খাবার
এমন কয়েকটা প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সম্পর্কে জানালেন পুষ্টিবিদ অরিত্র খাঁ, ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যেগুলি অবশ্যই রাখতে হবে প্রতিদিনের ডায়েটে...
সুদীপ দে: আবহাওয়ার ভোল বদল হোক বা কোভিড-১৯ সংক্রমণের চোখ রাঙানি, পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে শরীরকে যুঝতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার।
সুস্থ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হল প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস আর ফাইবার। যেসব খাবারে এই সব খাদ্যগুণ রয়েছে, সেগুলিকেই বলে ‘Immune System Boosters’ বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খাদ্য। এই খাবারগুলি শরীরকে চাঙ্গা আর ঝরঝরে করে তুলতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরকে ভিতর থেকে মজবুত আর রোগ প্রতিরোধী করে তোলে।
খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং প্রতিদিনের ডায়েটের জন্যেও অত্যন্ত উপযোগী, এমন কয়েকটা প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সম্পর্কে জানালেন পুষ্টিবিদ অরিত্র খাঁ। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যা অবশ্যই রাখতে হবে প্রতিদিনের ডায়েটে।
১) ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল (সিট্রাস ফল): সুস্থ থাকার জন্য শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান হল ভিটামিন-সি। এই ভিটামিন শরীরে প্রয়োজন মিনারেল শোষণে সাহায্য করে এবং একই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবেও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল অত্যন্ত উপযোগী। শরীরের টক্সিন দূর করতে ও ওজন কমাতেও সাহায্য করে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি র্যাডিকালসের হাত থেকে শরীরকে বাঁচাতে, ত্বক আর চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও ভিটামিন সি-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং, সুস্থ পাতে রাখুন ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল।
২) ব্রোকোলি: ফুলকপির মতো দেখতে এই সবজিটির পুষ্টিগুণ অসাধারণ। ভিটামিন এ, সি, কে, পটাশিয়াম, আয়রনে ভরপুর ব্রকোলিতে ফ্যাট প্রায় নেই বললেই চলে। তাই পুষ্টিবিদরা এই সবজিটি পাতে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ব্রকোলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লিউটেন, ফ্ল্যাভনয়েড, ক্যারোটিনয়েড, বিটা-ক্যারোটিন-সহ একাধিক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উপাদান। ব্রকোলিতে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম থাকায় তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কমায় হৃদরোগের ঝুঁকি। এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৩) লাল ক্যাপসিকাম বা বেলপেপার: বেলপেপার মানেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর! ক্যাপসিকামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৯, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম আর ম্যাঙ্গানিজ। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালোরিও। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। লাল বেলপেপারে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যাপসানথিন (Capsanthin) নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা শরীরের জন্য খুব ভাল।
৪) পালং শাক: এই শাকে রয়েছে একাধিক পুষ্টিগুণ। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বিটা কেরোটিন। মাইগ্রেন, বাত প্রভৃতি অসুখের ডায়েটে পালং শাক রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। এই শাকে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকায় রক্তাল্পতা রুখতেও পালং শাক খুবই উপকারী। এর ফ্যাভোনয়েডরা ক্যানসারের মতো মারণ রোগকে রুখতে সাহায্য করে। মস্তিষ্ক কোষের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে স্মৃতিশক্তি চাঙ্গা রাখতেও সাহায্য করে পালং শাক।
৫) পেঁপে: ভিটামিন আর মিনারেল সমৃদ্ধ পেঁপেতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি। এ ছাড়াও পেঁপেতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন-বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফোলেট। পেঁপেতে থাকা প্যাপাইন নামের উৎসেচক প্রদাহজনিত রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী! তা ছাড়া পেঁপে বীজে থাকা প্রোটিওলাইটিক নামের উৎসেচক শরীরে বাসা বাঁধা একাধিক ক্ষতিকর জীবাণুকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
৬) টক দই: শরীরের টক্সিন দূর করতে টক দই অত্যন্ত উপকারী! টক দইতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি যা শরীরের সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। টক দইয়ের প্রোবায়োটিক উপাদান ল্যাক্টোব্যাকিলাস লিভারকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আর ঝটপট মেদ ঝরাতে টক দই খুবই উপকারী।