লকডাউনের জের! পরকীয়াতে জল ঢেলে পতিরা এখন আস্তাবলে!

সেই ঝড়স্নাত দুপুর, সেই আলাপ, সেই পরকীয়ার চৌকাঠে পা রাখা দুই নর-নারী ভিন্নতর প্রেমে ভেসে যাওয়া। বলাই বাহুল্য

Updated By: Apr 3, 2020, 11:51 AM IST
লকডাউনের জের! পরকীয়াতে জল ঢেলে পতিরা এখন আস্তাবলে!
অলঙ্করণ- সৌমিক মজুমদার

দিব্যেন্দু ঘোষ

 

সেই কবে, সেই গোঁফ-না-ওঠা হাইস্কুল আপার ক্লাস। দুষ্টুমি-ভরা দুপুর। ক্লাসের জানলা গলে দৃষ্টি আছড়ে পড়ত ক্লাস টুয়েলভের ব্যালকনিতে। নীল পাড় সাদা শাড়ির একঝাঁক প্রজাপতি কার্নিশের আলসেমি-ধরা ভরন্ত যৌবনে বুকের অলিন্দে হাতুড়ি মারত। সেই কবে, নিস্তরঙ্গ পাড়ার মাটির সোঁদা গন্ধে মিশে থাকত অনাঘ্রাত যৌবনের কুহুকুজন।

পাড়ার ওই কোণের বাড়িটায় সবে বিয়ে হয়ে এসেছে স্থিতধী। আধুনিকা। কাঁধ-খোলা চুল। স্লিভলেস ব্লাউজ। আটপৌড়ে পাটভাঙা শাড়িতে স্নান-পরবর্তী সুষমা। পাড়াময় নিষেধের অদৃশ্য বেড়াজালে ঘুরে ফিরে বেড়ায় তন্বী। সৌপ্তিকও এ পাড়ারই স্মার্ট, ঝকঝকে, কুড়ি-শেষের হ্যান্ডসাম। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির উঁচু পদ। বিশাল মাইনে। পেল্লায় বাড়ি। গ্যারাজে দামি গাড়ি। বউ পল্লবীর অবশ্য পার্টি, সোশ্যায়ালাইজিংয়ে বিশেষ মতি নেই। গতিও নেই। উঠোনের তুলসীমঞ্চ, শ্বেতপাথরের মোড়া ঠাকুরঘরেই তার আনাগোনা। নিত্য যাপন। সৌপ্তিক একটু একটু করে বুঝে উঠতে থাকল খোলা হাওয়া বারান্দার নৈঋত কোণ দিয়েই বয়ে যায়। এক বিকেলে সবে ঝড় উঠব উঠব করছে। কার্নিশে কনুই সৌপ্তিকের, এলিয়ে থাকা শরীর নিস্পলক চেয়ে আকাশনীল বাড়িটার ছাদে। ছাদের নাইলনের দড়িতে বেসামাল হাওয়ায় উথালপাথাল ভিজে ভিজে জামাকাপড়। হিমশিম স্থিতধী। হলুদ ডোরা শাড়ি উড়ে যেতে চায় উত্তরে। শরীর জোড়া নরম রং, আলতো অভিপ্রায়ে সৌপ্তিকের চোখে যেন কামিনীর ছায়া...

-হাই, ভাল আছেন?

-দেখুন না, কী দুষ্টু হাওয়া।

-আমি আরও দুষ্টু। সৌপ্তিকের সরস কথায় স্থিতধীর ঠোঁটে খিলখিল হাসি।

-পল্লবীদি কোথায়?

-যেখানে থাকে, ঠাকুরঘরে। আর আপনার কর্তা?

-অফিস ট্যুরে। আপনার অফিস নেই?

-ছিল। আজ অতীত। জানতাম ঝড় উঠবে, জানতাম আপনি কাপড় তুলতে আসবেন, জানতাম কথা হবে, জানতাম সব ওলটপালট হয়ে যাবে। জানতাম ঝড় থেমে নতুন ভোর উঠবে। জানতাম আপনি থেকে তুমি হতে বেশি সময় লাগে না।

-আপনি তো দারুণ কথা বলেন।

-পল্লবীদি ভেরি লাকি অ্যাজ ইয়োর ওয়াইফ।

-বাট আই অ্যাম নট লাকি। বাট টুডে অনওয়ার্ডস আই থিঙ্ক মাই লাকি ডেজ ইজ অন দ্য ডোরস্টেপ অফ মাই লাইফ।

-বুঝলাম না।

-বুঝিয়ে দেব। নিড ইয়োর নাম্বার।

-ওকে।

সেই ঝড়স্নাত দুপুর, সেই আলাপ, সেই পরকীয়ার চৌকাঠে পা রাখা দুই নর-নারী ভিন্নতর প্রেমে ভেসে যাওয়া। বলাই বাহুল্য। এক পাড়া, গোপন অভিসার, উথাপাথাল জীবনের চোরাবালিতে ঘাই মেরে যাওয়া পরকীয়ার নিত্যনতুন পাঠে আদ্যন্ত ডুবসাঁতারে খেই হারাত সৌপ্তিক-স্থিতধী। এপার-ওপার বারান্দায় নিছকই জীবনের আটপৌরে গল্প। আর ফোনে রোম্যান্সিত কথালাপ। শরীরী, অশরীরী, আপামর আজানু কামনা। পল্লবী জানতেও পারত না সৌপ্তিক কোথায়। অফিসে, নাকি স্থিতধীর হাত ধরে পার্কের নরম ঘাসে আধশোয়া। নাকি দামি রেস্তোরাঁর আলোআঁধারিতে মুখোমুখি, চোখাচোখি, আঙুলে আঙুল রেখে হাত ধরায় না-বারণ। নাকি নামেই অফিস ট্যুর, স্থিতধীকে নিয়ে দুদিনের জন্য ডুয়ার্সে সৌপ্তিক। না জানে পল্লবী, না জানে তমোনাশ।

আরও পড়ুন- করোনা থেকে বাঁচতে বার বার হাত ধুচ্ছেন! জলের অপচয় রুখতে কিছু ভেবেছেন?

কিন্তু আচমকাই, অনেকদিন পর স্থিতধী-সৌপ্তিকের পরকীয়ার গেটে তালা পড়ল। লক ডাউন। আশ্চর্যের কী! কদমফুলের গায়ে কাঁটা কি দেখেছে কেউ? না সৌপ্তিক, না স্থিতধী। তাই পৃথিবীর পথে-প্রান্তরে, পরিবহণে ইয়াব্বড় তালা। এক সিরিয়াল কিলার ছুটে বেড়াচ্ছে দুনিয়াদারির গভীরে ঘাই মেরে। এক দেশ থেকে আরেক দেশ। যত বড়ই সিরিয়াল কিলার হোক করোনা, অপরাধী যখন, তখন ক্লু তো রেখে যাবেই। নিজে আদর করে সেধে বাড়িতে না ঢোকালে এই সিরিয়াল কিলারের ক্ষমতা নেই বাড়িতে ঢোকে। নিঃশব্দে খুন করে দিয়ে পালাতে পারবে না কিলার-করোনা। তাই লকডাউনে হেড আপ। পরকীয়া ডাউন। সৌপ্তিক যতই স্থিতধীর বাহুডোরে বাঁধা পড়ুক, যতই মনে মন ঘষাঘষি খাক, লক ডাউনে প্রেমটি নট। পল্লবীর মোবাইল থেকে উড়ে এল হোয়াটসঅ্যাপ, সৌপ্তিকের মোবাইলে, First time in history, everywhere in the world, every woman knows where the husband is.

পরের দিন ফের পল্লবীর হোয়াটসঅ্যাপ, পরকীয়াতে জল ঢেলে পতিরা এখন আস্তাবলে।

একটা চরিত্র মুখে মুখে মুখোশ হল,

ক্যাপশন জুড়ে ছবিটা মুহূর্ত দিল,

আবেগ পেল পলিথিনের বাড়তি পাঁচআনা হিসেব

আর পরকীয়া প্রেম নিল ক্যাকটাসের

যৌনতার ছেঁকা।

বউয়ের অধিক দু-তিনটে গার্লফ্রেন্ড রাখাটা যে সৌপ্তিকের স্ট্যাটাসের মধ্যে পড়ে, সে এখনও প্রেম সেঁকে নিচ্ছে। বিয়ের তিয়াত্তর মাস পরে পল্লবীতে নতুন করে মজছে। গৃহবন্দি বিকেলে ছেলেবেলায় শোনা নচিকেতার সেই গানটা নতুন করে মনে পড়ছে,

বউকে লাগবে ভাল আগের মতন

দৃষ্টিভঙ্গিটা শুধু বদলাও।

করোনা নামক সিরিয়াল কিলারকে খতম করতে অফিস আর বাহির-প্রেম ভুলে সৌপ্তিকরা পল্লবীদের আরও বেশি কাছে আসছে। কাছে টানছে। স্বামী-স্ত্রীর বাঁধন আরও মজবুত হচ্ছে। ঘটি-বাটি ঠোকাঠুকি লাগলেও আলটিমেট উইনার হ্যাপি ফ্যামিলি। পরকীয়া আপাতত ব্যাকফুটে। সৌজন্যে লকডাউন। দুরন্ত দাম্পত্য।

.