বেহালা রহস্য মৃত্যুতে দু'জনকে আটক করল পুলিস

ঠাকুরপুকুর হত্যা রহস্যের তদন্তে নেমে সন্ধ্যা গোস্বামী ও শঙ্কর সিংহ নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করল পুলিস। সন্ধ্যা গোস্বামী ওই বাড়িতে আয়ার কাজ করতেন। শরীর অসুস্থ থাকায় বুধবার কাজে আসেননি তিনি। তাঁর জায়গায় বুধবার রাতে কাজে আসেন ময়না রায়।

Updated By: Sep 6, 2012, 11:43 PM IST

ঠাকুরপুকুর হত্যা রহস্যের তদন্তে নেমে সন্ধ্যা গোস্বামী ও শঙ্কর সিংহ নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করল পুলিস। সন্ধ্যা গোস্বামী ওই বাড়িতে আয়ার কাজ করতেন। শরীর অসুস্থ থাকায় বুধবার কাজে আসেননি তিনি। তাঁর জায়গায় বুধবার রাতে কাজে আসেন ময়না রায়। ঘটনাস্থল থেকে বাকি ৩ জনের সঙ্গে ময়না রায়ের দেহও উদ্ধার করেছে পুলিস। বাড়ির দোতলার বেসিনে রক্তের দাগ পেয়েছে পুলিস। তাদের ধারণা খুনের পর রক্তের দাগ ধোয়ার চেষ্টা করেছে খুনিরা। এমন কী পুলিসকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও করেছে বলে জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যেই দেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় ফরেনসিক দল। বাড়ির বিভিন্ন জিনিসের সঙ্গেই ঘরের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া একটি চায়ের কাপেরও ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। বাইরে থেকে কেউ এসেছিল কি না তা জানতে পায়ের ছাপ খুঁজে দেখবেন ফরেনসিক দলের গোয়েন্দারা। জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ফিজিও থেরাপিস্ট অরুণ প্রসাদকেও।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে শুরু থেকেই ছিল ধোঁয়াশা। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে। পুরনো শত্রুতার জেরে পেশাদার খুনিকে কাজে লাগানোর সম্ভবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিস। নিহত দীপক ভট্টাচার্যের খুড়তুতো ভাই অশোক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস। জমি কেনাকে কেন্দ্র করে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ চলছিল বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, নিহত গৌরী ভট্টাচার্যের জামাই ও নাতনিকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে পুলিস।
বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ৮৭/১ বীরেন রায় রোড ওয়েস্টের একটি বাড়ি থেকে গলার নলি কাটা অবস্থায় উদ্ধার হয় ৪টি মৃতদেহ। অশীতিপর বৃদ্ধা গৌরী ভট্টাচার্য্য (৮২) এবং তাঁর ছেলে দীপক ভট্টাচার্য্যের (৫২) সঙ্গে উদ্ধার হয় বাড়ির এক পরিচারিকা ও এক আয়ার দেহ। গৌরীদেবী ও তাঁর ছেলের দেহ উদ্ধার হয় বাড়ির দোতলার দুটি ঘর থেকে। নিচে খাবার ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল আয়া ময়না রায়ের দেহ। রান্নাঘরের মেঝেতে মেলে পরিচারিকা অনিমা মন্ডলের দেহ।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে এখও অনেক বিষয় নিয়েই ধন্দে রয়েছে পুলিস। চারটি মৃতদেহ বাড়ির চারটি পৃথক ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে। ফলে আততায়ীরা সংখ্যায় একাধিক হতে পারে বলে তাদের অনুমান। মৃত প্রত্যেকের বাড়ি ফেরার সময় ভিন্ন ছিল। ফলে এমন কী খুনের সময়ও ভিন্ন বলে ধারণা করছে পুলিস। তবে ঘটনাস্থলে কোন ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মেলেনি কোনও ডাকাতি বা লুঠের প্রমাণও। ঘটনাস্থল থেকে কোনও অস্ত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনজনকে খুন করে কোনও একজন আত্মঘাতী হয়েছেন, প্রথমে এমন সন্দেহ থাকলেও প্রমাণের অভাবে তা খারিজ করা হয়েছে। নিজের গলা কেটে আত্মহত্যার সম্ভবনা ক্ষীণ বলে মনে করছে পুলিস।
হত্যার ধরণ দেখে পরিচিত কেউ এই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিস। প্রত্যেকের গলায় একবারই ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এখনও কোন সুলুক সন্ধান মেলেনি এই হত্যা রহস্যের।
বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, নগরপাল আর কে পচানন্দা সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ অফিসাররা।
বীরেন রায় রোডের যে ফ্ল্যাটে ঘটনাটি ঘটে, সেখানে বহুদিন ধরেই ছোট ছেলে দীপককে নিয়ে থাকতেন গৌরী দেবী। ছেলে দীপকের ইলেকট্রিক সরঞ্জামের সাথে কেবলের ব্যাবসা ছিল। প্রসঙ্গত, কিছুদিন যাবত মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন দীপক বাবু। বহুদিন ধরেই বয়সজনিত কারণে হাঁটাচলার শক্তি হারিয়েছিলেন গৌরী দেবী। হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় ফিজিওথেরাপিস্ট অরুণ প্রসাদ বাড়িটিতে পৌঁছালে বাড়ির সদর দরজা বন্ধ পান। অনেক ডাকাডাকির পরেও কেউই দরজা না খোলায় দীপক বাবুর দোকানে ফোন করেন তিনি। সেখান থেকে লোক এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকলে ঘটনাটি সবার নজরে আসে।

.