ট্রাইডেন্ট লাইট বিতর্কে কলকাতা পুরসভা
কলকাতা পুরসভার নগর সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধল। অভিযোগ, শহরকে সাজাতে গঙ্গার তীর, রাস্তা, অলিতে-গলিতে বহু ব্যয়ে বাতিস্তম্ভ লাগানো হলেও মিটছে না নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের নূন্যতম প্রয়োজন। পাশাপাশি এক্ষেত্রে বরাত বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগ মিলেছে।
কলকাতা পুরসভার নগর সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধল। অভিযোগ উঠছে, শহরকে সাজাতে গঙ্গার তীর, রাস্তা, অলিতে-গলিতে যে বাতিস্তম্ভ লাগানো হচ্ছে তাতে পুরসভার কোষাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। অথচ অনেক জায়গাতেই মিটছে না নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের নূন্যতম প্রয়োজন।
মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে মেনে লন্ডনের আদলে সেজে উঠেছে শহর কলকাতা! রাস্তায় উঁচু উঁচু বাতিস্তম্ভ থাকলেও তা ছিল শুধুই প্রয়োজনের। তাই সৌন্দর্য বাড়াতেই এই নতুন ডিজাইনের বাতিস্তম্ভ। পোশাকি নাম ট্রাইডেন্ট। আলোয় ভাসা শহরে, প্রদীপের নিচের অন্ধকারের মতো সমালোচনার ঢেউ ও আছড়ে পড়তে শুরু করেছে।
বিরোধী দল, তাঁদের অভিযোগ তো থাকতেই পারে, রাজনৈতিক তরজার বাইরে আর্থিক হিসাব কিন্তু বলছে অন্য কথা। এখনও পর্যন্ত আলো বসেছে ১৫,০০০। খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। আরও ৪৫,০০০ হাজার আলো বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার। যার জন্য আনুমানিক ৭৫ কোটি টাকা খরচ হবে। ট্রাইডেন্ট লাইট বসানোর ক্ষেত্রে পদ্ধতি মেনে টেন্ডার না ডাকার অভিযোগ উঠেছে পুরসভার বিরুদ্ধে।
পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী কোনও কাজের ক্ষেত্রে বাজেট ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হসে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানরা তা অনুমোদন করতে পারেন। তার বেশি হলে টেন্ডার কমিটিতে প্রস্তাব পাস কতরাতে হয়। ট্রাইডেন্ট লাইটের ক্ষেত্রে আইন ফাঁকি দিতে টুকরো টুকরো করে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। ১৫,০০০ আলোর জন্য তৈরি হয়েছে প্রায় ৫৫০টি বিল। পাশাপাশি পুরসভার নিজস্ব এন্টালি ওয়ার্কশপ থেকে ৩,১২৫ টাকার ট্রাইডেন্ট লাইট পোস্ট না কিনে বাইরে থেকে ৫৯১৮ টাকার অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পোস্ট কোনারও অভিযোগ উঠেছে।
এর পাশাপাশি রয়েছে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুত্ খরচ! ২০১১-র ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরসভার বিদ্যুতের বিল ছিল ১৬ কোটি টাকা। ২০১২-র জানুয়ারি থেকে বাড়তে বাড়তে মে মাসে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটিতে। সব আলো লাগানো হলে আশঙ্কা তা বেড়ে ৩০ কোটিতে দাঁড়াবে!
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বাড়তি বোঝা আর নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যে টান পড়ার কথা মানতে নারাজ। তাঁর মতে, শহরের সৌন্দর্য্য বাড়ানোটাও জরুরি। সেই সঙ্গে দুর্নীতির অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তাতে কিন্তু নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যে টান পড়া আর দুর্নীতি ঘিরে আলোর নিচে ঘনীভূত অভিযোগের অন্ধকারটা কাটছে না।