শরীরে দানা বেঁধেছে ক্যানসার, নিজের স্কুলেই তাই অচ্ছুত্ শিক্ষিকা
ক্যানসার হয়েছিল। এটাই অপরাধ। যে অপরাধে চাকরি থেকেই বসিয়ে দেওয়া হল স্কুল শিক্ষিকাকে। এ যুগেও এমন ঘটনার সাক্ষী কলকাতার কাশীপুর ইংলিশ স্কুল। প্রাইমারি সেকশনের শিক্ষিকা শবরী চ্যাটার্জি প্রায় ষোলো বছর পড়িয়েছেন এই স্কুলে। গতবছর জুলাইতে তাঁর জিভের ক্যানসার ধরা পড়ে। সেপ্টেম্বরে অপারেশন হয়। এরপর চিকিত্সকের দেওয়া ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে স্কুলে ফের পা রাখেন শবরী চ্যাটার্জি। কিন্তু সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল আরেক ধাক্কা।
ব্যাপারে প্রিন্সিপালের বক্তব্য জানতে কাশীপুর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে গিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু কথা বলা তো দূরস্ত, আমাদের সঙ্গে দেখাই করেননি প্রিন্সিপাল ঝুমুর বাজপেয়ী। গেট থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় আমাদের। পরে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও, অভিজ্ঞতা সেই এক। এই ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলতে নারাজ স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এখন পুরোপুরি সুস্থ। কিন্তু তবু স্কুলে ঢোকা বারণ শবরী চ্যাটার্জির। কারণটাও মারাত্মক। শিক্ষিকার দাবি, প্রিন্সিপাল নাকি সবাইকে বোঝাচ্ছেন যে ক্যানসার অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে যেতে দেওয়া উচিত নয় তাঁকে। সুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাই বাড়িতে বসে শবরী চ্যাটার্জি। যদিও তাঁকে কোনওরকম টার্মিনেশন লেটার দেওয়া হয়নি। শুধু মৌখিকভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর আর স্কুলে পড়ানোর দরকার নেই। ইতিমধ্যে গ্র্যাচুইটির টাকাও তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা করিয়ে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। যদিও সে টাকা তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে রাজ্য মহিলা কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন শবরী চ্যাটার্জি। কমিশনের তরফে একাধিকবার তলব করা হয়েছে স্কুলের প্রিন্সিপালকে। যদিও কোনওবারই হাজির হননি তিনি।
অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে এই একই স্কুলে, এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল আরেক শিক্ষিকা স্বপ্না পালিতের। তিনি ওই স্কুলে বাংলা পড়াতেন। তাঁর গলায় ক্যানসার ধরা পড়েছিল দু হাজার সাতে। চিকিত্সা হয়। ফিট সার্টিফিকেটও দেন চিকিত্সক। কিন্তু পড়ানো আর হয়নি। কারণ সেই এক, প্রিন্সিপাল ঝুমুর বাজপেয়ী। অভিযোগ, স্বপ্না পালিতকেও কাজে যোগ দিতে দেননি তিনি।
ষোলো বছরের শিক্ষকতা জীবন এক নিমেষে শেষ। কারণ, ক্যানসার। স্রেফ ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার অপরাধে স্কুল থেকেই তাড়িয়ে দেওয়া হল শিক্ষিকাকে। এমন ঘটনার সাক্ষী কলকাতার কাশীপুর ইংলিশ স্কুল। কাঠগড়ায় খোদ প্রিন্সিপাল।