রবিনসন রোডের 'সাইকো' হাউস এখন টুরিস্ট স্পট, মিলল না পার্থকে পুলিসি জেরার অনুমতি
টুরিস্ট স্পট এখন রবিনসন রোডের 'সাইকো' হাউস। বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন উৎসুক জনতা। চলছে সেলফি তোলার ধুম।
ওয়েব ডেস্ক: টুরিস্ট স্পট এখন রবিনসন রোডের 'সাইকো' হাউস। বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন উৎসুক জনতা। চলছে সেলফি তোলার ধুম।
বাড়িটিতে তল্লাসি চালিয়ে আরও কিছু সূত্র হাতে এসেছে পুলিসের। সন্ধান পাওয়া গিয়েছে আরও ডায়েরি, চিরকুট ও খাতা। বাড়িটিতে কী কোনও হলো স্পেস আছে? তদন্তকারীরা তারও খোঁজ চালাচ্ছেন। পার্থ দের কাকা অরুণ দেকে জেরা করে পাওয়া তথ্য খতিয়ে দেখতে ফের পার্থ-দেবযানীর বাড়িতে তল্লাসির সিদ্ধান্ত পুলিসের।
অন্যদিকে আজ পার্থর সঙ্গে দেখা করতে যায় মেডিক্যাল বোর্ড। কিন্তু পুলিসি জিজ্ঞাসাবাদের সময় বেঁকে বসেন তিনি। শর্ত দেন মাদার হাউসের প্রতিনিধি ছাড়া তিনি কোনও কথাই বলবেন না। পার্থর নাছোড়বান্দা মনোভাবের জন্য তাঁকে জেরার অনুমতি দিল না পাভলভ কর্তৃপক্ষ।
রবিবার দিনভর তাঁর রকমারি আবদার সামলাতে নাজেহাল হয় পাভলভ কর্তৃপক্ষ। পুলিসের জেরার আগেই তিনদিনের কার্যকলাপ নিয়ে ম্যাপিং করতে আজ সকালে বসে মেডিক্যাল বোর্ড।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, দেবযানীর মৃত্যুর কথা, বাবার কাছে বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন পার্থ। বাবাকে দেবযানীর ঘরে ঢুকতেও দিতেন না। পার্থ বলতেন,দিদি মেডিটেশন করছে। ঘরে যেও না। দেবযানীর হয়ে চিরকুট চালাচালি করতেন সাইকো কাণ্ডের নায়ক। ছেলের হাত দিয়ে রোজ মেয়েকে খাবারও পাঠাতেন অরবিন্দ। উদ্ধার হওয়া চিরকুট ঘেটে অনুমান পুলিসের। এদিকে রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কালটি কার এবং তা কতদিনের পুরনো, তা জানতে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বিশেষ সফট ওয়্যারের। সাইকোকাণ্ডের রহস্য ভেদ করতে ফরেন্সিক তদন্তে জোর দিচ্ছে পুলিস। সাইকো কাণ্ডে চমকে দেওয়ার মতো সূত্র পেল পুলিস। দে পরিবারে উদ্ধার হাজারো চিরকুট খুঁটিয়ে পড়ে পুলিসের সন্দেহ, দেবযানীর মৃত্যু যদি সত্যি হয় তা প্রথমে জানতেনই না বাবা অরবিন্দ দে। প্রায় দেড় থেকে দু মাস চিরকুটের মাধ্যমে দেবযানীর সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। অরবিন্দকে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে নাকি বাধা দিতেন পার্থ। বলতেন দিদি ধ্যান করছে, দিদির হয়ে বাবাকে চিরকুটও দিতেন পার্থ।
রাশি রাশি চিরকুট, ডায়েরি, ধর্মপুস্তক। বেশ কয়েকটি কম্পিউটার। দে পরিবার থেকে উদ্ধার তথ্যপ্রমাণ গোড়া থেকেই ধন্ধে রেখেছিল তদন্তকারীদের। এবার চিরকুটগুলি খতিয়ে দেখেই শিউড়ে উঠছেন তদন্তকারীরা। পুলিসের সন্দেহ, দেবযানী ও পার্থর সঙ্গে সরাসরি কথাবার্তা ছিল না অরবিন্দ দে'র। বাবার সঙ্গে ছেলে মেয়ের কথা হত চিরকুটের মাধ্যমে। পুলিসের সন্দেহ, দেবযানী মৃত্যুর খবর সত্যি হয় তা দীর্ঘদিন পরেও নাকি জানতে পারেননি অরবিন্দ দে। তখন পার্থই নাকি, হাতের লেখা নকল করে বাবাকে দেবযানীর হয়ে চিরকুট দিয়ে গেছেন। তবে এই অনুমানের সঙ্গেই উঠে আসছে বেশ কিছু প্রশ্নও।
একই বাড়িতে বাস। তবু কেন দেবযানীর মৃত্যুর খবর জানতে পারলেন না অরবিন্দ দে? দেবযানীর দেহের গন্ধ কী করে গোপন করলেন পার্থ দে? পার্থ হাতের লেখা নকল করলে অরবিন্দ কেন তা ধরতে পারলেন না? ঘরের কোথাও কি হলো স্পেস রয়েছে? সেখানেই কি প্রথমে দেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল?
অরবিন্দ-র ভাই অরুণ দে-কে জিজ্ঞাসাবাদেও মিলেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পুলিসকে তিনি জানিয়েছেন, একবছরে অরবিন্দ দে ও অরুণ দে-র মধ্যে বহুবার কথা হয়েছে। সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়া নিয়েই নাকি দুজনের আলোচনা হত। অরুণ দের দাবি, পার্থ'র অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে তাঁর কাছে দুঃখও করেছেন অরবিন্দ দে। আমেরিকায় থাকাকালীনই নাকি অবসাদের ওষুধ খেতে হত পার্থকে।
তবে পুলিসের সন্দেহ, অরুণ দে ও তাঁর ছেলে অর্জুন এখনও বেশ কিছু তথ্য লুকিয়ে যাচ্ছেন। যেমন, অরবিন্দ দে, সত্যিই আত্মহত্যা করেছেন কিনা তা নিয়ে এখন সন্দেহ করতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। কারণ, অরবিন্দ দে'র অগ্নিদগ্ধ হওয়ার সময় বাড়িতে শাবল ও স্ক্রু ড্রাইভার মিলেছিল। দে পরিবারে সাধারণত ওই জাতীয় জিনিস থাকার কথা নয়। নিশ্চিত হতে সেদিন আগুন নেভাতে যাওয়া দমকল অফিসারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিস।