Molestation in Kolkata Hospital: শহরের নামী হাসপাতালের ওটি'তেই শ্লীলতাহানি! শরীরে মিলল একাধিক কালশিটে দাগ
হাসপাতালের তরফে কোনও প্রতিকার না পেয়ে ওই রোগিণী ফুলবাগান থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ওই রোগিণীর মেডিক্যাল টেস্ট ও ফরেন্সিক টেস্ট হয়েছে। রোগী নিজে যখন তাঁর চিকিত্সকে ওই ঘটনার কথা বলেন তখন তিনি অবাক হয়ে যান
মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য: অপারেশন থিয়েটারেই মহিলা রোগীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে। গত ৫ জানুয়ারির ঘটনা। অভিযোগকারী মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। এনিয়ে ফুলবাগান থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছে রোগীর পরিবার। বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় ওই মহিলার গলব্লাডারের অস্ত্রোপচার হয়। তার পরেই ওই মারাত্মক ঘটনা।
আরও পড়ুন-ছাঁটাইয়ের পরও কামব্যাক! রোহিতদের নির্বাচক হিসেবে ফিরলেন সৌরভ ঘনিষ্ঠ চেতন শর্মা
অভিযোগকারী রোগী যে অভিযোগ করেছেন সেটি হল, ওটির দিন যখন তাঁর অ্যানাস্থেসিয়ার ঘোর ধীরে ধীরে কাটছে তখন তিনি টের পান তাঁর পাশে ২ জন পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের কন্ঠ তিনি শুনতে পান। চোখ খোলার মতো বা শরীর নড়ানোর মতো পরিস্থিতিতে তিনি ছিলেন না। কিন্তু বুঝতে পারেন তাঁর বুকে খুব জোরে চাপ দেওয়া হচ্ছে। সেই যন্ত্রণা এতটাই যে তার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। পাশাপাশি তাঁর গোপনাঙ্গেও হাত দেওয়া হয়।
এদিকে, ওটির দিন কোনও কিছু করার বা নড়াচড়া করার ক্ষমতা ছিল না। পরদিন অর্থাত্ ৬ জানুয়ারি তিনি একজন নার্সকে সঙ্গে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে নিজের দেহ পরীক্ষা করে দেখেন শরীরে বেশকিছু কালশিটে দাগ রয়েছে। এরপরই তিনি একজন মহিলা চিকিত্সকদের ডাকেন। তিনি না আসলেও ওই মহিলার যিনি চিকিত্সক তিনি এসে ওই কালশিটে দাগ দেখে চমকে ওঠে। হাসপাতালের ম্যানেজমেন্টের লোকজনও আসেন। তাঁরা এসে আশ্বাস দেন ১৫ মিনিটের মধ্যে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। ম্যানেজমেন্টের রোগীরা এমনটাও জানান যে ওই নামজাদা হাসাপাতালে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।
জি ২৪ ঘণ্টাকে ওই রোগিণী বলেন, ৫ তারিখ সাড়ে সাতটার সময়ে আমাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। অ্য়ানাস্থেসিয়া দেওয়ার পর আমার কোনওকিছু মনে নেই। অপারেশন হয়ে যায়। এগারোটা থেকে বারোটা-ঠিক সময়টা আমি বলতে পারব না, আমি অনেককিছু বুঝতে পারছিলাম বা শুনতে পারছিলাম। কিন্তু নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। আমার ডানদিকে একজন দাঁড়িয়েছিলেন আমাকে চোখ খুলতে বলছিলেন। তার থেকেও উনি আমার শরীরের ডান দিকে জোর জোর চাপ দিচ্ছিলেন। এমনটি আমার গোপনাঙ্গেও হাত দেওয়া হয়। কিন্তু আমার বাঁদিকে দাঁড়ানো লোকটি বলে ওঠে, রোগীর জ্ঞান ফিরে আসছে। এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এরকম একটা বড় জায়গায় একজন মেয়ের সঙ্গে এরকম ব্যবহার করা হল আর ম্যানেজমেন্ট কিছু করল না! একটা ওটির ভেতরে এরকম হলে আরও অনেক কিছু হতে পারে। ওরা পনের মিনিট চেয়ে এখনও ব্যবস্থা নেয়নি। এটা চাপা দেওয়ার চেষ্টা নয়তো কি?
হাসপাতালের তরফে কোনও প্রতিকার না পেয়ে ওই রোগিণী ফুলবাগান থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ওই রোগিণীর মেডিক্যাল টেস্ট ও ফরেন্সিক টেস্ট হয়েছে। রোগী নিজে যখন তাঁর চিকিত্সকে ওই ঘটনার কথা বলেন তখন তিনি অবাক হয়ে যান। মেডিক্যাল রিপোর্টে কালশিটে দাগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এনিয়ে কোনও সিদ্ধান্তের উল্লেখ না করে ফরেন্সিক তদন্তের কথা বলা হয়েছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় যেসব নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন তা তাঁরা করেছেন। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে ওই মেডিক্যাল টেস্ট হয়। ফলে ওই কালশিটে দাগ কোথা থেকে এল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ওটি থেকে বেডে আনার সময় হয়তো হাত বা পা ধরে সরানো হতে পারে কিন্তু দাগ অন্য কোথায় কেন? আরও একটি বিষয় হল রোগী যখন বলছেন তিনি ২ পুরুষ কন্ঠ শুনেছেন। তাহলে কি সেই সময় ঘরে কোনও মহিলা ছিলেন না?
ওই অভিযোগ নিয়ে বিশিষ্ট চিকিত্সক কুণাল সরকার বলেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, খারাপ ঘটনা। তবে প্রত্যেকতা সেক্টরেই এরকম অনভিপ্রেত ঘটনা হয় বা হতে পারে। ঠিক কী হয়েছিল তা জানি না তবে অল্প হলেও বিভিন্ন হাসপাতালে এমন ঘটনা দেখা গিয়েছে। হাসপাতাল মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে , কোনও বিবৃতি দিচ্ছে না এটা অত্যন্ত অনভিপ্রেত। হাসপাতালেরও তো এটি চিন্তার ব্যাপারে। তারা মুখ খোলা মানেই তো দোষ স্বীকার করে নেওয়া নয়!