Subimal Mishra: প্রয়াত অ্যান্টি-আখ্যানের অবিমিশ্র মুখ 'গোদার অফ লিটারেচার' সুবিমল মিশ্র...
Subimal Mishra: সব ধরনের মহত্ত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে হয়ে ছিলেন এক স্বরাট লড়াকু, নিজের 'অ্যান্টি-গল্প' ও 'অ্যান্টি-উপন্যাস'-এর মতোই আদিগন্ত অ্যান্টিত্বে ভরপুর স্রষ্টা। চলে গেলেন সদ্য। 'প্রতিষ্ঠানবিরোধী' সাহিত্যিক হিসেবেই বরাবর পরিচিত থেকেছেন। আর কে না জানে, না-মহত্ত্বের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বরাবরেরই আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক?
সৌমিত্র সেন: নিজের প্রথম বইসংগ্রহের ভূমিকায় তিনি লিখেছিলেন, 'তোমার লেখা যেন কোনওভাবেই মহৎ না হয়ে যায়।' বলতে গেলে এই চেষ্টারই ইতিহাস তাঁর লেখকজীবন তাঁর লেখকজীবনযাপন। শুধু লেখা কেন, নিজেকেও কোনও দিন 'মহৎ' হতে দেননি! সব ধরনের মহত্ত্ব থেকেই মুখ ফিরিয়ে তিনি বরাবর হয়ে ছিলেন এক স্বরাট একক লড়াকু, নিজের 'অ্যান্টি-গল্প' ও 'অ্যান্টি-উপন্যাস'-এর মতোই আদিগন্ত অ্যান্টিত্বে ভরপুর এক স্রষ্টা। চলে গেলেন ৮ ফেব্রুয়ারি। 'প্রতিষ্ঠানবিরোধী' সাহিত্যিক হিসেবেই বরাবর পরিচিত থেকেছেন। আর কে না জানে, না-মহত্ত্বের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বরাবরেরই আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক!
১৯৪৩ সালের ২০ জুন জন্ম সুবিমলের। ১৯৬৭ সালে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত ‘হারান মাঝির বিধবা বৌ এর মড়া অথবা সোনার গান্ধীমূর্তি' সুবিমল মিশ্রের লেখা এই ছোটগল্পটি বাংলা সাহিত্যজগতে প্রথম আলোড়ন ফেলে। অর্ধশতকের বেশি দীর্ঘ তাঁর সাহিত্যজীবনে কখনও নামী সংবাদপত্র বা সাহিত্যপত্রে লেখেননি। কার্যত স্রোতের উলটো পথেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম দুই বাংলার মননশীল 'লিটল ম্যাগাজিনে'ই মূলত প্রকাশিত ও সমাদৃত হয়েছে বরাবর।
প্রথম জীবনে শিক্ষকতা করতেন সুবিমল। দক্ষিণ কলকাতার শম্পা মির্জানগরের বাসিন্দা তিনি। সাহিত্যের চেনা স্রোতে ভাসতে না-চাওয়া পাঠকেরা আজও খোঁজে তাঁর 'তেজস্ক্রিয় আবর্জনা, 'আসলে এটি রামায়ণ চামারের গল্প হয়ে উঠতে পারতো', 'নাঙা হাড় জেগে উঠেছে', 'রঙ যখন সতর্কীকরণের চিহ্ন', 'কন্ঠ পালক ওড়া', 'হাড়মটমটি', 'ওয়ান পাইস ফাদার মাদার', 'চেটে চুষে চিবিয়ে গিলে'-র মতো লেখা। সারা জীবন ধরে লিখেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ। বেশিরভাগ বই নিজের দায়িত্বেই সম্পাদনা, প্রকাশ ও বিক্রি করেছেন।
তার প্রায় সমস্ত লেখাতেই তাঁকে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতি দ্বিধাহীন চাবুক কষাতে দেখা গিয়েছে। যৌনতা নিয়ে মধ্যবিত্ত সমাজের ধরি-মাছ-না-ছুঁই-পানির বিরুদ্ধে তাঁর বরাবরের তীব্র জেহাদ। রাষ্ট্রব্যবস্থা, শোষণ, সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রতি ব্যঙ্গ, সামাজিক দ্বন্দ্বের কড়া সমালোচনাই তাঁর লেখার একান্ত অভিমুখ ছিল। সেই কারণেই হয়তো বাণিজ্যিক পত্রিকাতে কখনো লেখেননি।
তাঁর সাহিত্যভাবনা তাঁর সাহিত্য-আদর্শ তৈরি হয়েছে চিত্র পরিচালক জাঁ-লুক গোদার, লুই বুনুয়েল, আন্দ্রেই তারকভস্কি, ঋত্বিক ঘটকের প্রভাবে; তৈরি হয়েছে জঁ-পল সার্ত্র, জেমস জয়েস, স্যামুয়েল বেকেটের প্রভাবেও।
শোনা যায়, একদা পাশ্চাত্য-সিনেমার নবতরঙ্গের মুখ 'ব্রেথলেস' জাঁ লুক গোদার চিঠি লিখেছিলেন সুবিমল। সেই চিঠিতে গোদারের কাজের প্রতি তাঁর মুগ্ধতা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সঙ্গে নিজের লেখার কিছু স্যাম্পেলও গোদারকে পাঠিয়েছিলেন। গোদার নাকি উত্তরও দিয়েছিলেন। সুবিলকে তিনি লিখেছিলেন-- 'গোদার অফ লিটারেচার'!