জলের অভাবে জতুগৃহ বাগরি! এদিকে ছাদেই ছিল ৫০০০ লিটারের ২৪টি ট্যাঙ্ক

দীর্ঘ প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস জলশূন্য হয়ে পড়েছিল ট্যাঙ্কগুলি। কোনও রক্ষণাবেক্ষণ-ই হয়নি।

Updated By: Sep 20, 2018, 02:37 PM IST
জলের অভাবে জতুগৃহ বাগরি! এদিকে ছাদেই ছিল ৫০০০ লিটারের ২৪টি ট্যাঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদন : ছাদের উপর ট্যাঙ্কের সারি। একটি-দুটি নয়, একেবারে ২৪টি ট্যাঙ্ক। প্রতিটি ট্যাঙ্কের জলধারণ ক্ষমতা ৫০০০ লিটার করে। কিন্তু, শনিবার গভীর রাতে আগুনের লেলিহান শিখা যখন বাগরি মার্কটকে গ্রাস করছে, তখন কোনও ট্যাঙ্ক-ই কাজে এল না। কারণ, দীর্ঘ ৬ মাস ধরে জলশূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে ট্যাঙ্কগুলি।

শনিবার রাতে বাগরি মার্কেটে আগুন লাগার পর ছাদের মধ্যে থাকা ট্যাঙ্কগুলি থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে যান দমকলকর্মীরা। কিন্তু ছাদে পৌঁছে ট্যাঙ্কের ভালভ খুলতে গিয়ে দেখা যায়, কোনও ভালভ খুলছে না। হাতলে মরচে ধরে গেছে। এরপর কাটার দিয়ে  ট্য়াঙ্ক কেটে জল বের করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দেখা যায়, ট্যাঙ্কগুলি সবকটাই জলশূন্য। ২৪টি ট্যাঙ্কে ৫০০০ লিটার করে যেখানে মোট ১ লাখ ২০ হাজার লিটার জল থাকার কথা, সেখানে কোনও ট্যাঙ্কেই জলের ছিঁটেফোঁটাও ছিল না।

আরও পড়ুন, ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীর 'কুরুচিকর' ছবি পোস্টের অভিযোগে ধৃত বিজেপি কর্মী

ছাদের উপরেই রয়েছে মেশিনঘর। দেরি না করে সেদিকে ছুটে যান দমকলকর্মীরা। মেশিনঘরে ঢুকে পাম্প চালানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু দমকলকর্মীদের সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। কারণ পাম্প খারাপ। পাম্পে কোনও বিদ্যুত্সংযোগ-ই ছিল না। তড়িঘড়ি এক ইলেকট্রিশিয়ানকে ডেকে আনা হয়। কিন্তু, ততক্ষণে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। 'জতুগৃহে' পরিণত হয় বাগরি।

শনিবার রাত ২টো নাগাদ আগুন লেগেছিল বাগরিতে। ৩ দিন পেরিয়ে এখনও জ্বলছে বাগরি মার্কেট। ক্যানিং স্ট্রিটের দিকে মার্কেটের একাংশে এখনও ফায়ার পকেট রয়েছে। ফাটল দেখা দিয়েছে ছাদে। জানা গেছে, আগুন মোকাবিলায় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের ৫ জন করে সদস্য এবার বাগরি মার্কেটের প্রতিটি তলায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু, কেন এভাবে 'আগ্নেয়গিরি'তে পরিণত হল বাগরি?

আরও পড়ুন, বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে লাগাতার ভাইঝিকে 'ধর্ষণ' কাকার

এই প্রশ্নের উত্তরে একটা কথা স্পষ্ট যে, চূড়ান্ত গাফিলতি-ই এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী। দোকানদার থেকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাগরি মার্কেটের সম্পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল রাধা বাগরি, বরুণ বাগরি ও বরুণ কোঠারির উপর। কিন্তু, ছাদের উপর জলশূন্য ট্যাঙ্কের সারি থেকে এটা ছবির মতো পরিষ্কার যে, মার্কেটের কোনও রক্ষণাবেক্ষণ করাই হয়নি। দীর্ঘ প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস জলশূন্য হয়ে পড়েছিল ট্যাঙ্কগুলি। কারণ পাম্প খারাপ ছিল। এরফলে ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিপদের সময় কোনও কাজেই আসেনি ২৪টি ট্যাঙ্ক।

শুধু কি তাই, বাগরি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে দায় এড়াতে পারে না কলকাতা পুরসভাও। বাগরি মার্কেটের ঠিক পিছনে-ই আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে রয়েছে একটি ভূগর্ভস্থ জলাধার। কিন্তু বাম আমলে তৈরি সেই জলাধারের কথা জানা-ই ছিল না দমকল বা বর্তমান পুর আধিকারিকদের। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই জলাধারগুলিরও হালও বেহাল। সব মিলিয়ে ব্যবস্থা থাকলে শুধমাত্র রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই বাগরি মার্কেটের আগুনের মোকাবিলায় কাজে এল না কোনও পরিকাঠামো-ই।

.