রাজ্য কমিটি থেকে সরানো হচ্ছে রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে
কলকাতা: রাজ্য কমিটি থেকেও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। গত তিন মাস ধরে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধায়কে সাসপেন্ড রাখার পর এমনই সিদ্ধান্ত নিল আলিমুদ্দিন। দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা সাংসদ মহম্মদ সেলিম, দলের সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য মৃদুল দে এবং মদন ঘোষকে নিয়ে গঠিত কমিশন এদিন তরুণ সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সিদ্ধান্তই নিয়েছে। রাজ্য কমিটির বৈঠকে ঋতব্রতর বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য কমিশনের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দিয়েছেন, বলে সূত্রের খবর।
বিগত কয়েক বছর ধরে ঋতব্রতর দৈনন্দিন জীবন নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠছিল সিপিএমের অন্দরেই। কয়েকমাস আগে 'কলম কাণ্ড' সামনে আসতেই অবশেষে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় বঙ্গ সিপিএম। দলের তরুণ মুখ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গঠিত হয় তিন সদস্যের কমিশন। প্রাথমিক পর্যায়ে দল থেকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ডও করা হয় তাঁকে। এরপরই যারা ঋতব্রতর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে শুর করে কমিশন। তিন মাসের আলোচনা এবং পর্যালোচনার পর অবশেষে দলের 'প্রোজেক্টেড' মুখ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণের পথেই হাঁটল দল।
'কলম কাণ্ড' প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ধারণের 'উচ্চমান' ইঙ্গিত করে ঋতব্রতরই পোস্ট করা ছবিতে 'সমালোচনা মূলক' কমেন্ট করেন এক আইটি কর্মী। এরপরই নিজের সাংসদ পরিচয় দিয়ে ওই সমালোচক যে সংস্থায় চাকরি করেন তার শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে একটি 'হুমকি মেল' পাঠান ঋতব্রত, অভিযোগ ছিল এমনই। সেখানে ওই আইটি কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও নাকি করেন তিনি। এরপরই গোটা ঘটনা সংবাদ শিরোনামে আসে। শুরু হয় বিতর্ক।
উল্লেখ্য, গত বছরই রাজ্য সন্মেলনের মধ্য দিয়ে স্টেট কমিটিতে এসেছিলেন প্রাক্তন ছাত্রনেতা ঋতব্রত। শোনা যায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের 'প্রিয়পাত্র' ঋতব্রতকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ইচ্ছেতেই রাজ্যসভায় পাঠাতে উদ্যোগী হয় দল। এরপর সাংসদ হয়ে সংসদেও 'বাকপটু' হিসাবে পরিচিত হন ঋতব্রত। খবরের শিরোনাম তো বটেই, দলের মধ্যেও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে চর্চা কম হয় না। কিন্তু গণ্ডগোল বাঁধে 'কলম কাণ্ড' নিয়েই। দামী কলম, দামী ঘড়ি আর বৈভবের জীবন নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই বিপাকে সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের একাংশ অবশ্য এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত। অনেকে মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত পার্টির পক্ষেও বর ধাক্কা। তরুণ মুখকে প্রোজেক্ট করে তাঁকেই শাস্তির কোপে ফেলে দেওয়ায় দলের ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে পড়বে।
রাজ্য সভায় 'ভালো পারফর্ম' করেছেন ঋতব্রত। কিন্তু তাঁর বৈভব নিয়ে দল তাঁকে একাধিকবার সতর্কও করেছে। এতেও কাজ না হওয়ায় অবশেষে কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিল। রাজ্য কমিটি থেকে সরানো হচ্ছে সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এবিষয়ে দলের অন্দরে গুঞ্জন চললেও এখনও প্রকাশ্যে কোনও নেতাই কিছু বলেননি। মুখে কুলুপ এঁটেছেন ঋতব্রত নিজেও। উল্লেখ্য, গতকাল রাজ্য কমিটির বৈঠকে বঙ্গ সিপিএমের তাবড় নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের শাস্তির দাবিতেও সরব হয় দলেরই একাংশ। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই 'গৌতম দেবের পক্ষে থাকা' ঋতব্রতকে রাজ্য কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল দল। এই ঘটনা অনেকের কাছেই বেশ তাত্পর্যপূর্ণ।