জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে অবস্থান বদল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ড নিয়ে নিজের অবস্থান বদল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস নাশকতার ঘটনায় তিনি সিপিআইএমের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছিলেন।
জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ড নিয়ে নিজের অবস্থান বদল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস নাশকতার ঘটনায় তিনি সিপিআইএমের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছিলেন। আজ গান্ধী মূর্তির পাদদেশে, পুরুলিয়ার বলরামপুরে নিহত কর্মীদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান তিনি। এরপর একশ আশি ডিগ্রি ঘুরে জ্ঞানেশ্বরী নাশকতার জন্য তিনি মাওবাদীদেরই দায়ী করেন। উনত্রিশে মে, দুই হাজার দশ। জ্ঞানেশ্বরী নাশকতা যেদিন ঘটে, সরডিহায় সেদিনই পৌঁছে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন তিনি রেলমন্ত্রী। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর তাঁর বক্তব্য ছিল বেশ তাত্পর্যপূর্ণ। কারণ, রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা বাম সরকারের প্রধান শরিক দল সিপিআইএমের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। ঘটনার দুদিন পর তিরিশে মে ছিল কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ড সেদিন যথেষ্ট আলোড়ন ফেলেছিল দেশ জুড়ে। প্রত্যেকেই জানতে আগ্রহী ছিলেন, এই ঘটনার পিছনে কারা যুক্ত। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য এবং অন্যদিকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ঘটনার পরই জানান, জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের পিছনে রয়েছে মাওবাদীদের গণসংগঠন পুলিসি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি। ক্যাবেনিটের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মধ্যে ভিন্ন সুর নিয়ে সে সময়েই প্রশ্ন ওঠে রাজনৈতিক মহলে। প্রশ্ন ওঠে, দেশের মধ্যে অন্যতম বৃহত্ রেল নাশকতার পিছনে সিপিআইএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কী ভোট বৈতরণী পার করতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এরপর থেকে ছোট হোক কিংবা বড়, দল কিংবা রেল প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠান, বারবারই জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে সিপিআইএমকেই দায়ি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু তারপর রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে গেছে। এখন রাজ্যে ক্ষমতায় তখনকার বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে মাওবাদীদের হাতে নিহত দলীয় কর্মীদের শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে, গান্ধী মূর্তির পাদদেশে আগের অবস্থান থেকে একশ আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জঙ্গলমহলে এখন মাওবাদীদের হিটলিস্টে তৃণমূল নেতা এবং কর্মীরা। শান্তি প্রক্রিয়াও ভেস্তে গিয়েছে। জঙ্গলমহলে শুরু হয়েছে যৌথবাহিনীর জোরদার অভিযান। এই প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতার কারণেই প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সুর বদল করতে বাধ্য হয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।