রামকে চাপে ফেলতে কৃষকদের পর বিশেষভাবে সক্ষমদের নিয়ে রাস্তায় বামেরা
বিশেষভাবে শারীরিক সক্ষমদের দাবিদাওয়া নিয়ে কলকাতা স্তব্ধ করার হুঁশিয়ারি দিলেন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
মৌমিতা চক্রবর্তী
সিঙ্গুর থেকে কলকাতা পর্যন্ত কৃষক জাঠা করে লোকসভা ভোটের মুখে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে বামেরা। লাল পতাকা হাতে লোক দেখে বিস্মিত রাজনৈতিক মহল। বিজেপির উত্থান নিয়ে যখন চর্চা ঠিক তখনই নিজেদের শক্তি জানান দিল রাজ্যের বামশক্তি। তবে এটা যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, তা প্রমাণ করতে মরিয়া বাম নেতৃত্ব। আর সে কারণেই লোকসভা ভোটের আগে একের পর কর্মসূচি নিয়ে ফের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে চাইছেন নেতৃত্ব। কৃষকদের পর এবার রাস্তায় নামতে চলেছেন এবার বিশেষভাবে শারীরিক সক্ষমরা।
রাজ্যে পরপর কয়েকটি উপনির্বাচনে (ব্যতিক্রম সবং) বিকল্পশক্তি হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। গোটা দেশের মতো এরাজ্যেও হিন্দুত্বের উত্তরে হাওয়া ঢুকে পড়েছে। রাম নবমী, হনুমান জয়ন্তীকে কেন্দ্র করে গেরুয়া পতাকার এমন সমাহার আগে কখনও পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দেখা যায়নি। তা আরও স্পষ্ট হয়েছে সদ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে। বিরোধী হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি (দ্বিতীয় স্থানে অবশ্য বিক্ষুব্ধ তৃণমূল)। লোকসভার আগে রথযাত্রারও ডাক দিয়েছে বিজেপি। সেই রথ ডিসেম্বরেই রাজ্যের তিনটি প্রান্ত থেকে গড়াতে শুরু করবে। তার ঠিক আগেই সিঙ্গুর থেকে কৃষক জাঠা করে ঝটকা দিয়েছে আলিমুদ্দিন। লাল পতাকা হাতে 'মেহনতি' মানুষ এমন মিছিল দীর্ঘদিন বাদে দেখেছে শহর। মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেখে উচ্ছ্বসিত সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ডাক দিয়েছেন ব্রিগেড সমাবেশের। যে ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে কয়েকদিন আগেও উত্কণ্ঠা ভুগছিলেন বাম নেতৃত্ব। শুধু ঘোষণাই নয়, কর্মীদের সূর্যকান্ত নির্দেশ দিয়েছেন, তৃণমূল-বিজেপির ব্রিগেডে যে লোক হবে, তা মিলিয়ে বামেদের সভা ভরাতে হবে।
কৃষক জাঠা যে শুধুই 'ফ্লুক' নয়, তা দেখাতে একাধিক কর্মসূচি নিতে শুরু করেছেন বাম নেতৃত্ব। ৩ ডিসেম্বর, অর্থাত্ সোমবার বেলা ১১টায় 'কলকাতা চলো'র ডাক দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী। রানি রাসমনি রোডে সমাবেশ ও মিছিল হবে। আর এই সংগঠনের আড়ালেই মূল হোতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। সংগঠনের দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসবেন হাজার জন শারীরিকভাবে সক্ষম মানুষ। ২০১৬ সালে শারীরিকভাবে সক্ষমদের জন্যে সংসদে পাস হয়েছে বিল। সেই বিলের নিয়মগুলি কার্যকর করা ও আন্তর্জাতিক পরিচিতিপত্রের দাবি তাঁদের। এব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করেও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতা অবরুদ্ধ হবে বলেও দাবি তাঁর। তারপরও দাবিপূরণ না হলে আইনভঙ্গ আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
লোকসভার আগে একের পর এক কর্মসূচি নিয়ে নিজেদের কর্মীদের চাঙা করতে চাইছেন বাম নেতৃত্ব। অনেকেই মনে করছেন, লোকসভার আগে বামেরা তেঁড়েফুঁড়ে ওঠায় স্বাভাবিকভাবেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের ভরসা রথ, সেখানে সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে নিজেদের গুছিয়ে নিতে চাইছেন বাম নেতৃত্ব। আন্দোলনের মাধ্যমেই মানুষের নজরে আসার পরিকল্পনা করছে আলিমুদ্দিন।
আরও পড়ুন- বিরোধী পরিসরের লড়াইয়ে রামকে চাপে ফেলল এই বাম ভিড়? দেখুন ছবি