জমি জটে আটকে বিদ্যুত্ থেকে বঞ্চিত রাজ্য
জমিনীতির জটে রাজ্যের বিদ্যুত উত্পাদন শিল্পের ভবিষ্যত রীতিমতো অনিশ্চয়তার মুখে। রাজ্যে বিদ্যুত্প্রকল্প করার কথা দিয়েও শেষপর্যন্ত ফিরে যাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা লার্সেন অ্যান্ড টুবরো। সরকারের জমিনীতির কারণেই ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি প্রকল্প রাজ্য থেকে সরিয়ে নিচ্ছে তারা।
জমিনীতির জটে রাজ্যের বিদ্যুত উত্পাদন শিল্পের ভবিষ্যত রীতিমতো অনিশ্চয়তার মুখে। রাজ্যে বিদ্যুত্প্রকল্প করার কথা দিয়েও শেষপর্যন্ত ফিরে যাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা লার্সেন অ্যান্ড টুবরো। সরকারের জমিনীতির কারণেই ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি প্রকল্প রাজ্য থেকে সরিয়ে নিচ্ছে তারা। অন্যদিকে, কাটোয়ায় বিদ্যুত্ প্রকল্পের জন্য এখনও প্রয়োজনীয় জমি কিনে উঠতে পারেনি ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন।
২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে দুটি ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বেসরকারি সংস্থা লার্সেন অ্যান্ড টুবরো। ১১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতির শর্ত ছিল একটাই। জমি তারা কিনবে না। ১২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে দিতে হবে সরকারকে। সেখানেই হোঁচট খেয়েছে সরকার। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের অধিগ্রহণ করা দুটি জমি লার্সেন অ্যান্ড টুবরোকে দেখিয়েছিল বর্তমান সরকার। একটি পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে এবং অন্যটি উত্তরবঙ্গে। কিন্তু, এল অ্যান্ড টি-র বক্তব্য ওই দুটি জমিতে বিদ্যুত প্রকল্প গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আর তাই শেষপর্যন্ত রাজ্যে প্রস্তাবিত বিদ্যুত্ প্রকল্প দুটি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লার্সেন অ্যান্ড টুবরো। এল অ্যান্ড টি-র সংস্থার মতে রাজ্যের জমিনীতির বদলের প্রয়োজন রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন বেসরকারি সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। কিন্তু, বিদ্যুত প্রকল্পের জন্য এই নীতি প্রযোজ্য হতে পারে না। তাই, ইচ্ছে থাকলেও প্রয়োজনীয় জমির অভাবে এরাজ্যে বিদ্যুত উত্পাদন কেন্দ্র আর করছে না লার্সেন অ্যান্ড টুবরো। ফলস্বরূপ ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাজ্য। সেইসঙ্গেই হাতছাড়া হচ্ছে
১১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগও।
অন্যদিকে একেবারে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলেও, গত একবছরে কাটোয়া বিদ্যুত প্রকল্পের জন্য কোনও জমিই কিনে উঠতে পারেনি এনটিপিসি। কাটোয়ায় তাদেরও ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি বিদ্যুত প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বিনিয়োগের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রেও পূর্বতন সরকারের অধিগৃহীত ৫৫৬ একর জমিই এখন ভরসা এনটিপিসির। কিন্তু, ওই জমিতে ৮০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র গড়া আদৌ লাভজনক নয়। দুটি বিদ্যুত উত্পাদন কেন্দ্র করতে গেলে প্রয়োজন আরও ৫২৬ একর। এনটিপিসি অবশ্য জানিয়েছিল, তারা নিজেরাই সরাসরি কৃষকদের থেকে জমি কিনবে। কিন্তু, গত একবছরে একচিলতে জমিও কিনে উঠতে পারেনি তারা। তবে, এখনও হাল ছাড়তে নারাজ এনটুপিসি কর্তৃপক্ষ। এই মুহূর্তে, কীভাবে জমি কেনা হবে, তার রোডম্যাপ তৈরি করতে ব্যস্ত তারা। কিন্তু এভাবে সরাসরি জমি কেনার ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এনটিপিসি। একলপ্তে জমি পাওয়া থেকে শুরু করে দাম নিয়ে জমিমালিকদের অবাস্তব চাহিদা, দালালচক্রের দৌরাত্ম্য এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সময় বেরিয়ে যাওয়ায় বাড়ছে প্রকল্পের প্রস্তাবিত খরচও। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, শুধুমাত্র সরকারি সংস্থা হওয়ার কারণেই এখনও হতাশহয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি এনটিপিসি। কিন্তু, বেসরকারি সংস্থা হলে এইসময়ের মধ্যে যে হাত গুটিয়ে নিত, তার প্রমাণ দিয়ে গেল লার্সেন অ্যান্ড টুবরোই।
প্রতিনিয়তই যেখানে রাজ্যে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। সেখানে এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র জমিনীতির কারণে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ থেকে বঞ্চিত হয়ে কার্যতই বিশাল ক্ষতির মুখে রাজ্য। এমনকী প্রশ্ন থেকে গেল বাকি ১৬০০ মেগাওয়াট নিয়েও।