Kolkata Sky: ঘোর আষাঢ়ে কলকাতার আকাশ হঠাৎ HD কেন?
বর্ষাকালে দিনভর মুখ ভার করা আকাশ, সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টির জেরে প্যাচপ্যাচে শহর দেখতেই বেশি অভ্যস্ত কলকাতাবাসী। এবার যেন উলটপুরাণ।
মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য: আষাঢ় মাসের বৃষ্টিভেজা দিনের চেনা ছবি যেন এই দু'লাইন-- 'নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে/ তিল ঠাঁই আর নাহি রে।' ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশ। দিনেও যেন আঁধার। শনশন ভিজে হাওয়া। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া। বর্ষা বলতে এই জানি আমরা।
কিন্তু এবার বাইরের আকাশ ভুলিয়ে দিচ্ছে এটা আষাঢ় মাস। মাঝে-মধ্যে এক-আধ পশলা বৃষ্টি আসছে বটে। কিন্তু, তার পরেই ফের ঝকঝকে আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা। সন্ধ্যা ঘনানোর পরেও ধোঁয়াশা নেই, বরং দিব্যি হাসি-হাসি মুখে চাঁদ আকাশে দৃশ্যমান। গত কয়েকদিনে এমনই 'এইচডি', মানে, 'হাইডেফিনিশন' কলকাতা তাক লাগাচ্ছে আমাদের। সোশ্যাল মিডিয়া ভরে উঠছে শহরের আকাশের এই ছবিতে।
কেন হঠাৎ এই পরিস্থিতি?
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আবহাওয়ার তারতম্য আর পুরসভার যৌথ উদ্যোগেই এই শহরের বাতাসের মান ভালো হয়ে উঠেছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে তাই রীতিমতো 'গুড বয়' কলকাতার বাতাস। অতঃপর ঝকঝকে হয়েছে কলকাতা। বর্ষাকালে দিনভর মুখ ভার করা আকাশ, সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টির জেরে প্যাচপ্যাচে শহর দেখতেই বেশি অভ্যস্ত কলকাতাবাসী। এবার যেন উলটপুরাণ। বৃষ্টির পরিমাণ যে আগের বছরগুলির তুলনায় অনেকটাই কম, তা মোটামুটি বোঝাই যাচ্ছে। যেটুকু বৃষ্টি হচ্ছে, তা-ও খুব স্থানীয়ভাবে। কেন এমন হচ্ছে? কী বলছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরা?
বোস ইনস্টিটিউটের এয়ার কোয়ালিটি এক্সপার্ট অ্য়াসোসিয়েট প্রফেসর অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টির সুন্দর ব্যাখ্য়া করেন। তিনি জানান, জুলাই মাসে সাধারণত যেরকম বৃষ্টি হয়, তার চেয়ে এখনই ৬০-৭০ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। আকাশে মেঘের পরিমাণও অনেক কম থাকছে। আগে বর্ষাকালে যেমন অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টি হত বা টানা দু-তিন ধরে বৃষ্টি হত, সেটা এবারে হচ্ছে না। আগে যেমন শর্টার ডিউরেশনে হেভি রেনফল দেখা যেত এবার তেমনও হচ্ছে না। এখন দেখা যাচ্ছে সকালের দিকে বা দুপুরে বা সন্ধেবেলায় ছোট ছোট স্পেলে বৃষ্টি হচ্ছে।
এর ফলে পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম বাতাসে কম থাকছে। আসলে বাতাসের ধুলোকণা বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়। দুটি বৃষ্টির স্পেলের মধ্যে সময়ের ব্যবধান বেশি থাকলে এই ধুলো জমতে পারে। তখন আকাশ তার স্বচ্ছতা হারায়। কিন্তু এবারে এই ডাস্ট বাতাসে জমতেই পারছে না। এবারে বৃষ্টিটা হচ্ছেও পিক আওয়ার্সে, যেমন সব চেয়ে বেশি গাড়ি থাকে রাস্তায়, ফলে দূষণ ঘটে। এই বৃষ্টি সেই দূষণকে বাড়তে দিচ্ছে না।
এর পাশাপাশি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, এবার কলকাতা পুরসভার কিছু প্রকল্পও শহরের বাতাসের মান ভালো রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। চলছে স্বচ্ছ বায়ু প্রকল্প। এরই মধ্যে রোড ডাস্ট কমানো বা বাতাসের ধুলোর পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে কিছু কর্মসূচি নিয়েছে তারা। একদিকে জলবায়ুর পরিবর্তন পাশাপাশি পুরসভার কিছু পরিকল্পনা-- সব মিলিয়ে শহরের বাতাস হয়েছে দূষণহীন, আকাশ হয়েছে উজ্জ্বল।
কলকাতার বাতাসের মান বা এয়ার কোয়ালিটির একটি পরিসংখ্যানও রইল:
১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত গড়ে কলকাতার এয়ার কোয়ালিটি ছিল ৫০-এর নীচে
২০২১ সালে এই সময়ে সেটাই ছিল ৫১-১০০র ঘরে
১-১২ জুলাই বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২.৫ ধূলিকণার পরিমাণ গড়ে ১৬
২০২১ সালে সেটাই ছিল প্রায় ৩০-এর কাছাকাছি (২৯.২)
এ থেকে বোঝাই যাচ্ছে, কেন এবার কলকাতাবাসী 'নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে/ তিল ঠাঁই আর নাহি রে'র চেনা ছবি দেখতে পাচ্ছেন না।