হাতিবাগানের সুশীল বাবুর ঘরে লুকিয়ে অন্য কলকাতা, রোজ দেখেন তাঁর প্রিয় বাইনোকুলারে
কাউকে ছুঁতে দেন না। কেউ এলে ঘরের তালা খুলে দেখতে দেন বড়জোর। আর প্রতিদিন নিয়ম করে কম্পিত হাতে, অশক্ত নুয়ে পড়া শরীরে সন্তানের মতো সেগুলোর যত্ন করেন নিজের হাতে
অয়ন ঘোষাল: হাতিবাগানের গলি তস্য গলি পেরিয়ে ৭/বি শ্যাম মিত্র লেন। এই বাড়িতেই ৯৫ বছরের সুশীল কুমার চট্টোপাধ্যায়ের বাস। বেতার যন্ত্রী সুশীল বাবু ব্রিটিশ পুলিস ও গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে নিজের তৈরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি মডিউলার বেতার যন্ত্রে এই ছোট্ট ঘরে বসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দেশবাসীর উদ্দেশে সিঙ্গাপুর থেকে দেওয়া ভাষণ শুনেছিলেন। প্রায় তিন দিন পর খবর পেয়ে লালবাজার থেকে লালমুখো সাহেব পুলিস সেই যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। আর ফেরত দেয়নি। এটুকু বললে অবশ্য কিছুই বলা হয় না।
শ্যাম মিত্র লেনের এই জরাজীর্ণ বাড়িতে দোতলার দশ ফুট বাই দশ ফুট ঘরে সুশীল বাবুর আস্ত একটা সংগ্রহশালা আছে। যা ছিল কলকাতায়, তা আছে এই সংগ্রহে। আদ্যিকালের কলের গান। ভারতে প্রচলিত প্রথম মার্কনি রেডিয়ো, জার্মান শেফার ক্যামেরা, চিনা পর্সেলিনের হ্যাজাক বাতি, ভ্যাম্পায়ার বাইনোকুলার, রাস্তার সিনেমা ওয়ালার ম্যাজিক বাক্স, দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম সিনেমা প্রোজেক্টর থেকে টুকিটাকি প্রায় সাড়ে ৬ হাজার প্রাচীন সামগ্রী তার এই ব্যাক্তিগত কালেকশনে।
কাউকে ছুঁতে দেন না। কেউ এলে ঘরের তালা খুলে দেখতে দেন বড়জোর। আর প্রতিদিন নিয়ম করে কম্পিত হাতে, অশক্ত নুয়ে পড়া শরীরে সন্তানের মতো সেগুলোর যত্ন করেন নিজের হাতে। স্মৃতি এখনও টানটান। দৃষ্টি কিছুটা ক্ষীণ। শহরবাসী তাঁর এই বিরল সংগ্রহের খোঁজ রাখেন না। বিদেশ থেকে মাঝে মাঝে কলকাতার অ্যান্টিক কালচার নিয়ে পড়াশোনা বা গবেষণা করা কিছু হাতে গোনা মানুষ আসেন।
আরও পড়ুন- স্নায়ুর লড়াইয়ে মিলল ফল, গালওয়ান থেকে ২ কিলোমিটার পিছিয়ে গেল চিনা সেনা
নিজের এই দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহ কোনো মিউজিয়ম এর হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী নন সুশীল বাবু। কবিগুরুর নোবেল পদক চুরি হয়ে যাওয়ার পর তো আরও নয়। বলতে গেলে একাই যখের ধনের মতো এগুলি পরম মমতায় আগলে রাখেন তিনি। পুরনো কলকাতা এবং তার উপকরণ নিয়ে এই তো গত বছর কলকাতার এক নামজাদা পুজো কমিটি তাদের থিম রচনা করেছিল। নাম দিয়েছিল, দেখি কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই। তাও দায়িত্ব নিয়ে বলা যায় মিনি কলিকাতা আছে এই বাড়িতেই।