কীভাবে উত্থান ভুয়ো ডাক্তার নরেন পান্ডের? কেমন করে ফেঁদে বসেছিলেন রমরমা কারবার?
নরেন পান্ডে। হাঁপানি ও অ্যালার্জির নামজাদা চিকিত্সক। বছরের পর বছর মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে লোক ঠকানোর কারবার ফেঁদেছিলেন এই ভুয়ো ডাক্তার। কিন্তু কীভাবে উত্থান নরেন পান্ডের? আর কেমন করে তিনি ফেঁদে বসেছিলেন রমরমা কারবার? ২৪ ঘণ্টার এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট।
ওয়েব ডেস্ক: নরেন পান্ডে। হাঁপানি ও অ্যালার্জির নামজাদা চিকিত্সক। বছরের পর বছর মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে লোক ঠকানোর কারবার ফেঁদেছিলেন এই ভুয়ো ডাক্তার। কিন্তু কীভাবে উত্থান নরেন পান্ডের? আর কেমন করে তিনি ফেঁদে বসেছিলেন রমরমা কারবার? ২৪ ঘণ্টার এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট।
২০০৪ থেকে ২০১৭। দীর্ঘ ১৩ বছর। মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে রমরমা কারবার ফেঁদে বসেছিলেন নরেন পাণ্ডে।
সূত্রের খবর, ইউনানি ডিগ্রি করার পর একজন অ্যালোপ্যাথ চিকিত্সকের কম্পাউন্ডার হিসেবে জীবন শুরু। এরপর অ্যালোপ্যাথি চিকিত্সার ডিগ্রি ছাড়াই নিজেই দিব্যি প্র্যাকটিশ শুরু করেন নরেন পান্ডে। ২০০৪ এর পয়লা মে যোগ দেন বেলভিউ নার্সিংহোমে।
টরেন্টো থেকে ভ্যাঙ্কুভার। বিভিন্ন দেশে চর্মরোগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কনফারেন্সে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন নরেন পান্ডে। সেখানে বক্তৃতাও দেন তিনি। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তাবড় নেতা-মন্ত্রী, বিধায়ক, প্রভাবশালীদের সঙ্গে ছবি তুলে তাঁদের অজান্তেই ছবি পোস্ট করতেন নরেন। প্রমাণের চেষ্টা করতেন প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার গভীর যোগাযোগ রয়েছে। সূত্রের খবর, সবসময়ই নিজেকে প্রভাবশালী তকমায় মুড়ে রাখতেন এই ভুয়ো চিকিত্সক। আরও প্রতিষ্ঠার জন্য চিকিত্সক অসীম সরকারের সঙ্গে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি ম্যাগাজিনও শুরু করেন নরেন পান্ডে। নাম স্কিন ডক্টরস কমিউনিক। অসীম সরকার জোকা ইএসআই হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের প্রধান এবং রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সদস্য। ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় ৩০, এস এন ব্যানার্জি রোড এই ঠিকানা থেকে। নরেন পান্ডের চেম্বারের ঠিকানাও এটাই। ম্যাগাজিন চালানোর পুরো টাকাই যেত তাঁর পকেট থেকে।
সূত্র বলছে, প্রভাবশালী মহলের একাংশের সঙ্গে ভাল যোগাযোগ ছিল ভুয়ো চিকিত্সকের । রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল, আইএমএ ও স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসা ছিল নরেন পান্ডের। সেই প্রভাব খাটিয়েই ২০০১-২০০৩ এর মধ্যে ভুয়ো রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে এক কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন নরেন পান্ডে। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলকে তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর যাচাইয়ের জন্য চিঠি দেয় ওই বেসরকারি ব্যাঙ্ক। সূত্রের খবর, কোনও যাচাই ছাড়াই ওই ব্যাঙ্ককে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট ইস্যু করে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। টাকা খরচের ক্ষেত্রেও ওই চিকিত্সক ছিলেন দরাজহস্ত। প্রভাবশালীদের পেছনে জলের মত টাকা খরচ করতেন নরেন।
চিকিত্সকদের সেমিনার, কনফারেন্স, কলকাতায় একটি চিকিত্সক সংগঠনের দফতর তৈরির জন্যও মোটা টাকা ডোনেশন দিয়েছেন এই ভুয়ো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ। চিকিত্সকদের যে কোনও অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া তাঁর কাছে ছিল জলভাত।
২৬ শে মে নরেনের চেম্বারে হানা দেয় সিআইডির তদন্তকারী দল। খোঁজ মেলে নরেন পাণ্ডের ঝাঁ চকচকে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবেরও। এই ল্যাবে গিয়ে তাজ্জব বনে যান সিআইডির তদন্তকারী অফিসারেরা। পর্দা ফাঁস হয় ভুয়ো চিকিত্সকের।