বিধানসভা ভোটে না লড়েও হিরো যারা
সিনেমায় যেমনটা হয়, রাজনীতিতে তেমনটা হয় না। পরিষ্কার ও স্পষ্ট ভাবে বলা সিনেমার পরিচালক আর রাজনীতির নেপথ্য নায়করাই বাস্তবের আসল বাজিগর। মানুষ দেখছেন, খেলায় নেই, অথচ খেলার ম্যাজিকটা তাঁর হাতের তালুবন্দি। পরিচালক যেমন চিত্রনাট্যে অভিনেতাকে দিয়ে নায়ক কিংবা ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করিয়ে নেন, রাজনীতির নেতারাও কিন্তু তাই, নিজে কখনও সামনে থেকে লড়েন না তবে, লড়াইটা তাঁরই মগজ প্রসূত। রাজনীতির অভিধানে এই গেম প্ল্যানারদের বলা হয় 'চাণক্য'।
ওয়েব ডেস্ক: সিনেমায় যেমনটা হয়, রাজনীতিতে তেমনটা হয় না। পরিষ্কার ও স্পষ্ট ভাবে বলা সিনেমার পরিচালক আর রাজনীতির নেপথ্য নায়করাই বাস্তবের আসল বাজিগর। মানুষ দেখছেন, খেলায় নেই, অথচ খেলার ম্যাজিকটা তাঁর হাতের তালুবন্দি। পরিচালক যেমন চিত্রনাট্যে অভিনেতাকে দিয়ে নায়ক কিংবা ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করিয়ে নেন, রাজনীতির নেতারাও কিন্তু তাই, নিজে কখনও সামনে থেকে লড়েন না তবে, লড়াইটা তাঁরই মগজ প্রসূত। রাজনীতির অভিধানে এই গেম প্ল্যানারদের বলা হয় 'চাণক্য'।
তৃণমূল কংগ্রেস, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস, বিজেপি-প্রত্যেক যুযুধান রাজনৈতিক দলেরই এমন কিছু মাস্টার মাইন্ড রয়েছেন যারা নিজের দলের হয়ে ঘুঁটি সাজিয়েছেন এবং লড়াই হয়েছে সেই তত্ত্বেই।
এই 'নেপথ্য নায়ক'দের কথা বলার আগে, বলে রাখি খেলাটা কী! বিধানসভা ভোট ২০১৬। পশ্চিমবঙ্গ এমন একটা রাজ্য যেখানে বরাবরই মেরুকরণের ভোট দেখেছে রাজ্য। বাম জামানার একচেটিয়া জয়, জয় আর জয়, এটা ছিল রাজ্যের চেনা ছবি। লালে লাল আর লাল দূর্গ-এই দুই শব্দ রাজনৈতিক মিথে পরিণত হয়েছিল। পরিবর্তন এল ২০১১ সালে। হৈ হৈ করে তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস জোটে বাম একেবারে 'ধুয়ে মুছে সাফ'। তারপর আবার একই ছবি। পঞ্চায়েত একচেটিয়া জয় তৃণমূলের। পুরসভা, পাহাড় থেকে সমতল ঝুলি ভোরে ভোট পেয়ে ক্ষমতায় তৃণমূল। আর লোকসভায় জন্মলগ্নের পর থেকে ২০১৪ নির্বাচনে সব থেকে ভালো ফল করেছে তৃণমূল। ৩৪ টা আসনে জয়ী হয়েছিল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল। তবে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে রাজনীতির বিরল ছবি দেখল মানুষ। হাতে হাতুড়ি, বাম-কংগ্রেস জোট করে লড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আর এই জোটের কাণ্ডারীদের তালিকা দিনে দিনে দীর্ঘ হলেও প্রথম যে 'নায়ক'রা 'ধাক্কা' দিতে শুরু করেন তাঁদের মধ্যে এক নম্বর অবশ্যই গৌতম দেব। পরে গোটা রাজ্যেই জোটের হয়ে সওয়াল শুরু করে বামেরা। অন্দরে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল গৌতম দেব ও তাঁর পল্টনকে। কিন্তু মাস্টারের ম্যাজিকে একই মঞ্চে 'রাহুল-বুদ্ধ'-এই ছবিও দেখল গোটা দেশ।
'দেবাদি দেব গৌতম'
কংগ্রেস-সিপিএম এক সঙ্গে লড়বে, রাজ্যে এই বিরল রাজনৈতিক রসায়ণের প্রথম অধ্যায় তাঁর নিজের হাতের লেখাই। ২০১১ সালে শেষ ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। গোহারান হেরেছিলেন তৃণমূলের ব্রাত্য বসুর কাছে। এরপরই 'অজ্ঞাতবাস' ভোটের লড়াই থেকে, কিন্তু রাজনীতির নক্ষত্রদের মধ্যে তাঁর উজ্জ্বলতা সব থেক বেশি। এখন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর নিতি নির্ধারকদের মধ্যেও 'গৌতম দা' ফেভারিট।
'বুদ্ধং শরণং'
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনীতিতে সাদা চুল, সাদা ধুতি, সাদা পাঞ্জাবীর 'হোয়াইট পলিটিশিয়ান'। ভোটে হেরেই ইস্তফা। তারপর বিশেষ বিশেষ 'কল' ছাড়া তাঁকে পাম অ্যাভিনিউর বাইরে দেখা না গেলেও সিপিআইএমের কলকাঠি নড়াচড়া করে তাঁর কথাতেই। মার্কেজ প্রেমী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যাদবপুর কেন্দ্রে হারার পর থেকেই কিছুটা আড়ালেই। তবে জোট রাজনীতির 'মহানায়ক' তিনিই। জীবনে প্রথমবার নিজের লড়াইয়ের প্রতীকে নয়, ভোট দিয়েছেন চির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতীকে, প্রকাশ্যেই ধরেছেন হাতের হাত ।
'দাবাং অধীর'
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সাংসদ। ভোটে লড়ছেন না, তবে কংগ্রেসের দাবাং ম্যান এখন তিনিই। কপ্টার সফরে জেলা থেকে জেলা, মঞ্চে বিমান বসু এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরী, একই ফ্রেমে, তারপর মালাবদল- অধীর নায়কোচিতই ছিলেন রাজনীতির চিত্রনাট্যে।
'সাহেব সেলিম'
মহম্মদ সেলিম। বর্তমান বাম রাজনীতির 'পোস্টার বয়'। বাংলা, হিন্দি, উর্দু-তিন ভাষায়ই সাবলীল। স্টার বক্তা। শুধু সংসদেই নয়, রাজ্যেও 'কমরেড সেলিম'- আনসাং হিরো।
'শাহ-জাহান অমিত'
উত্তর প্রদেশে পদ্ম ফুটিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি, শ্রী অমিত শাহ্। বিজেপির সভাপতি রাজ্যের ভোটের তদারকি করেছেন দিল্লি থেকেই। রাজ্যে 'কমল ফুল' ফোটাতে বিজেপির মাস্টার প্ল্যানার তিনিই।
শাসকের পক্ষে একটা, দুটো নাম বেছে নেওয়া খুবই কঠিন কাজ, তবে দুই ভোটের নায়কের নাম না করলেই নয়। প্রথম জন 'তৃণমূলের চাণক্য' মুকুল রায় আর দ্বিতীয় জনের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরই সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে, 'কেষ্ট'।
'গ্রীষ্মে মুকুল'
এমন রাজনীতিবিদ বঙ্গের মানুষ শেষ কবে দেখেছেন, তা মাথা চুলকেও বলা মুশকিল। মমতা-মুকুল জুটি। দলের সর্ব ভারতীয় 'অ-সাধারণ' সম্পাদক। দলের সব গেম প্ল্যানেই অলিখিত ক্যাপ্টেন তিনিই। মাঝে দুরত্ব বেড়েছিল, তবে মহামিলনের পর্বে মমতার কাছে এখনও একান্ত আপন মুকুল রায়। নিজে ভোটে দাঁড়ান না, বলা বাহুল্য ইনিই ঠিক করেন কে ভোটে দাঁড়াবেন আর কোথা থেকে ভোটে দাঁড়াবেন। শ্রীমান মুকুল রায়। ভীষণ ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের মানুষ এবং দলের সেকেন্ড ম্যান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই।
'কেষ্ট নামে রাজ্য কাঁপে'
২০১৬ নির্বাচনে যার বিরুদ্ধে সবথেকে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে, তিনি বীরভূমের 'মুখ্যমন্ত্রী' অনুব্রত মণ্ডল। ডাকবুকো নেতার এক এক তত্ত্ব এক একটা অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুড় বাতাসা তত্ত্ব, ঢাক বাজবে তত্ত্ব-এই সবের স্রষ্টা তিনিই। নিজে ভোটে লড়েন না কখনই, কিন্তু তাঁর কথা ছাড়া বীরভূমে পাতাও নড়ে না, জলও পড়ে না।