বৃষ্টিতে কলকাতা যেন কবিতার দুপুর। দুপুরেই আজ সন্ধে, লোডশেডিংয়ে সন্ধে যেন রাত
গ্রীষ্মের দুপুরটা হঠাত্ অন্য রকম হয়ে গেল কলকাতার। ভর দুপুরে কখন যেন ঝপ করে সন্ধ্যা নেমে এল। তার মধ্যে আবার শহরজুড়ে লোডশেডিং। সব মিলিয়ে তিলোত্তমা দেখলে ভিন্ন একটা দুপুরের। একটা অচেনা দুপুরের। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে এমন কতগুলো ছবি তৈরি হল যা দেখে বলতেই হয় কলকাতা আজ যেন কবিতার দুপুর।
পার্থ প্রতিম চন্দ্র
গ্রীষ্মের দুপুরটা হঠাত্ অন্য রকম হয়ে গেল কলকাতার। ভর দুপুরে কখন যেন ঝপ করে সন্ধ্যা নেমে এল। তার মধ্যে আবার শহরজুড়ে লোডশেডিং। সব মিলিয়ে তিলোত্তমা দেখল ভিন্ন একটা দুপুরের ছায়াছবি। একটা অচেনা দুপুরে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে এমন কতগুলো ছবি তৈরি হল যা দেখে বলতেই হয় কলকাতা আজ যেন কবিতার দুপুর।
জানাল খুলে দেখতেই চোখ কপালে। একটু আগেই ঠাঁ ঠাঁ রোদে গা পোড়ানো শহরে তখন চারিদিক কালো করে আসা বৃষ্টি।
বৃষ্টি কারও কাছে চোখের জল মোছার, আবার কারও কাছে ঘাম মোছার। যেভাবে আপনি নেবেন। এই কথাটা আজ যেন আরও বেশি করে সত্যি মনে হল। একদিকে যখন সামান্য লোডশেডিংয়ে বিরক্তি, ভোগান্তি। তেমন আবার অন্যদিকে অন্যরকম একটা দুপুরকে চেটেপুটে খাওয়ার আনন্দ। কাজের মাঝে লোডশেডিংয়ের সুযোগ ছাদে যাওয়া, পার্কে বসা প্রেমিক-প্রেমিকের ছাতা খুলে যাওয়া...কিংবা ফোন, ফেসবুকে 'তুমি বৃষ্টিতে ভিজলে'?এমন একটা সুক্ষ্ম রোমান্টিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা। কথায় বলে গরম যদি ব্যবধান বাড়ায়, বৃষ্টি কমায় দূরত্ব। সেটাই যেন বেশি করে সত্যি হল আজ। ঘেমো দুপুরের ঝগড়া মিটিয়ে দিল হঠাত্ বৃষ্টি।
তবে কী কলকাতা তো এখনও কলকাতায় রয়েছে। দাদা,দিদিরা যতই বলুন লন্ডনও এখন আমাদের শহর থেকে ৮ হাজার কিলোমিটার দূরেই পড়ে আছে। তাই আর কী... আধ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই নাজেহাল দশা। গাছ পড়ে চক্ররেল বন্ধ, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত, রাস্তায় লম্বা জ্যাম, বাসের অপেক্ষা আরও দীর্ঘতর। বাড়ি ফেরাটা আরও কঠিন মনে হচ্ছে।
কবিতা দুপুরটা সন্ধ্যার কাছাকাছি এসেই কেমন যেন গদ্যময় হয়ে গেল। যতই হোক কবে কবিতা লেখা হয়ে গিয়েছে, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। ধার করে বলতে হচ্ছে, এ শহরের যা হাল তাতে বৃষ্টি গদ্যময়, বৃষ্টিমাখা রোমান্টিক দুপুর, বেলা গড়াতেই যেন ঝামেলার পুকুর।
ভনিতা ছেড়ে এবার খবরের মত খবর যা-- মাত্র আধ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই বিপর্যস্ত হল কলকাতার জনজীবন। গাছ পড়ে ব্যাহত হল যানচলাচল। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে ঘটল বিদ্যুত্ বিপর্যয়। ব্যাহত হল যানচলাচল। কালীঘাটে ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এবং মধ্য কলকাতার কিছু জায়গা বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়ে। প্রায় দশ মিনিট পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কালবৈশাখীর জেরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার ট্রেন চলাচল।
ঝোড়ো হাওয়ায় দাপটে কলকাতার সাতটি জায়গায় ভেঙে পড়ে গাছ। মিলেনিয়াম পার্কের কাছে ওভারহেড তারের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় চক্ররেল পরিষেবা।
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে মধ্য কলকাতাতেও। লালবাজারের সামনে বেন্টিংক স্ট্রিটে গাছ ভেঙে পড়ে বিপত্তি। বজ্রপাতে ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যায় কালীঘটে। এর জেরে তিনটে আটান্ন থেকে চারটে সাত মিনিট পর্যন্ত মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুত্হীন হয়ে পড়ে।
বিদ্যুত্ না থাকায় এমার্জেন্সি গ্রিড ট্রান্সফার লাইনে বিদ্যুত্ সরবরাহের মাধ্যমে চালু রাখা হয় মেট্রো রেল। তবে ঝোড়ো হাওয়ার এই দাপটকে কালবৈশাখী বলতে নারাজ আবহাওয়া দফতর। আবহাওয়াবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগরের ওপর থাকা ঘূর্ণাবর্তের জেরেই দমকা হাওয়ার এই দাপট । তবে বৃষ্টি হলেও এখনই কমছে না তাপমাত্রা। বরং পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ।