কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কি নির্বাচন কমিশনের ছিল না?
প্রথমে সাহস দেখিয়েও পরে ডিগবাজি। শাসকের চাপে নতজানু নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কি তাঁর ছিল না? সংবিধান বলছে, আছে।
একরাতেই ডিগবাজি। শাসকদলের সঙ্গে মাত্র চার ঘণ্টার বৈঠক। আর তাতেই বাঘ নিমেষে কেঁচো। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, কোনও চাপেই মাথা নোয়ানোর প্রয়োজন নেই কমিশনের। প্রয়োজন ছিল না। কারণ, কমিশনের হাতে রয়েছে ব্রহ্মাস্ত্র। সংবিধানের দুশো তেতাল্লিশের ZA ধারা। তাতে বলা হয়েছে, পুরভোটের পরিচালনায়, তদারকি, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের সব ক্ষমতা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকবে।
রাজ্যের প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেও বলেছেন, 'কমিশন নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কেউ তাকে কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না।' কী করতে পারতেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার? সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিধাননগর পুরভোটে যে হারে সন্ত্রাসের ছবি ধরা পড়েছে তাতে নির্বাচন বাতিলের পথেও যেতে পারতেন তিনি। কোন কোন পরিস্থিতিতে নির্বাচন বাতিল হতে পারে? তা তো বলা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুরভোট আইনেই।
পুরভোট আইনের বাষট্টি নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ব্যালট বাক্স বা ইভিএম লুঠ বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে মিউনিসিপ্যাল রিটার্নিং অফিসারের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচন বাতিল হতে পারে। ওই আইনেরই তেষট্টি নম্বর ধারায় বলা হয়েছে বুথ দখলের ঘটনা ঘটলে মিউনিসিপ্যাল রিটার্নিং অফিসারের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচন বাতিল হতে পারে। শনিবার বিধাননগর পুরনিগমের একুশ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একাধিক ওয়ার্ডের একাধিক বুথে বুথ দখল-ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছে। সংবাদমাধ্যমে ধরা পড়েছে সেসব ছবিও। মিউনিসিপ্যাল রিটার্নিং অফিসারের রিপোর্টে এগুলির উল্লেখ থাকলেই ভোট বাতিল হওয়ার কথা। বিধাননগর পুরসভার ক্ষেত্রে মিউনিসিপ্যাল রিটার্নিং অফিসার হচ্ছেন বিধাননগরের SDO। কিন্তু, তাঁর রিপোর্টে যদি অস্বাভাবিক কিছুর উল্লেখ না থাকে তাহলেও কি কমিশনের কিছুই করার নেই? না একেবারেই নয়। একাধিক মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বারবার জানিয়েছে,
সংবিধানের দুশো তেতাল্লিশের ZA ধারা হচ্ছে ক্ষমতার আধার
-------
সেই আধার থেকে ক্ষমতা সংগ্রহ করে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন পরিচালনার স্বার্থে কমিশন যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
--------
ভোটারদের আস্থা অর্জনের জন্য কমিশনকে যে কোনও পদক্ষেপ করার অধিকার সংবিধানে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অবশ্য সেই ঝুঁকির পথে হাঁটেননি। বিরোধীদের দাবি, কয়েকটি বুথে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত আসলে চাপের মুখে মুখরক্ষার মোটামুটি একটা ব্যবস্থা। সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় আসলে ফের একবার প্রমাণ করেছেন, তিনি অনুগত। বশংবদ।