বামে উত্সাহ হারাচ্ছেন মহিলারা, গোপন চিঠিতে স্বীকারোক্তি সিপিএমের

একুশের কঠিন লড়াইয়ে মহিলাদের কাছে পৌঁছতে চাইছে সিপিএম।

Reported By: মৌমিতা চক্রবর্তী | Updated By: Feb 19, 2020, 10:57 PM IST
বামে উত্সাহ হারাচ্ছেন মহিলারা, গোপন চিঠিতে স্বীকারোক্তি সিপিএমের

নিজস্ব প্রতিবেদন: 'যেদিন কমিউনিস্ট পার্টি তোমায় বিশ্বাস করবে, সেদিন আমিও করব।' তেভাগা আন্দোলনে জেল খেটে আসা স্বামী অমিয়কে বলেছিল বুধাখালির ১৯ বছরের পাখি। অমিয়ের দোষ, সে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছিল। তেভাগা, নকশাল আন্দোলন থেকে ৩৪ বছরের বাম শাসনকালে লালের দিকে ঝুঁকেছে রাজ্যের সিংহভাগ মহিলা। ছয়ের দশকে ক্রিয়াশীল পুরুষতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে পাখিরাই হয়ে উঠেছিল বাম-প্রতিরোধের মুখ। সেই সিপিএম শাসন থেকে সরার পর মহিলা সংগঠনে ভাটা। সেটা যে আরও প্রকট হয়েছে, তা প্রকাশ পেল দলের গোপন চিঠিতে। সে কারণে বিভিন্নস্তরের কমিটিতে মহিলাদের সংরক্ষণের কথাও বলা হয়েছে তাতে।

পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর ধরে সিপিএমের সংগঠন ধরে রাখার মূলে রয়েছে বিভিন্ন গণসংগঠন।  লাল পার্টির সৌজন্যেই বাড়ির চৌকাট পেরিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন বাংলার মেয়েরা। শুধু আসাই নয়, তেভাগার মতো গণআন্দোলনেও তাঁরা ছাপ ফেলেছেন। সেই সিপিএমেই উত্সাহ হারিয়েছেন রাজ্য়ের মহিলারা। তার একটা কারণ দল আর ক্ষমতায় নেই। লোকসভা ভোটের পর বিরোধী পরিসরের রাশ চলে গিয়েছে বিজেপির হাতে। বিভিন্ন ইস্য়ুতে তাদের মহিলা মোর্চাকেও মাঠে-ময়দানে নামতে দেখা গিয়েছে। তুলনামূলকভাবে সিপিএমের মহিলা সংগঠন কিছুটা ফ্যাকাসেই থেকেছে। 

সিপিএমের গোপন চিঠিতে বিভিন্ন রাজ্য়ে দলের মহিলা সদস্যদের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে তা সর্বাধিক ৩২ শতাংশ। যদিও ভোটে তার প্রভাব পড়েনি। নোটার চেয়েও কম ভোট পেয়েছে সিপিএম। কেরলে মহিলা সদস্য ২০১৪ সালে ১৫.৯ শতাংশ থেকে ২০১৯-এ বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছে ১৮.৫৩ শতাংশে। তবে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় কমেছে মহিলা সদস্য সংখ্যা। এরাজ্যের মহিলা সদস্য ২০১৫ সালে ১০.৪ থেকে কমে হয়েছে ১০.৩ শতাংশ।  ত্রিপুরায় ২০১৫-র  ২৪.৬% থেকে ২০১৯ সালে হয়েছে ২৩.৭৪ শতাংশ।

এহেন পরিস্থিতিতে সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছে, দলের সর্বস্তরে মহিলা ক্যাডারদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ''পার্টি সম্মেলন থেকে বিভিন্ন পার্টি কমিটিকে মহিলাদের কোটা নির্ধারণ করতে হবে। মহিলা ক্যাডারদের উন্নীত করার ব্য়াপারে নজর দেওয়ায় ঘাটতি রয়েছে। যেখানে মহিলা পার্টি সদস্যার সংখ্যা সর্বাধিক, সেখানে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে মহিলা সদস্য নেই। প্রতিটি স্তরের কমিটিকে মহিলাদের কোটা স্থির করতে হবে।''            

একুশের কঠিন লড়াইয়ে মহিলাদের কাছে পৌঁছতে চাইছে সিপিএম। তার রাজনৈতিক অভিসন্ধিও রয়েছে। বাঙালি পরিবারে হেঁসেল থেকে ঘর সামলানোর দায়িত্ব থাকে মহিলাদের উপরে। গ্যাস সিলিন্ডারের দরবৃদ্ধি থেকে নিত্য়প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চড়া দাম ঘরণীরাই টের পান। বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির মোকাবিলায় কার্যকরী হতে পারেন মহিলারা।

আরও পড়ুন- আরএসএসের সঙ্গে যুঝতে সঙ্ঘের মতোই কমরেডদের কসরতের নিদান সিপিএমের!         

.