তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করার আগে সাবধান, নির্দেশ সিপিএমের

বিজেপিকে রোখার জন্য তৃণমূলের হাত ধরা নিয়ে সিপিএম নেতাদের একাংশ যে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে চলেছেন তাঁর বিরোধিতা করেন সদস্যরা। প্রশ্ন ওঠে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দলের অভ্যন্তরে আলোচনা করার আগেই প্রকাশ্যে মুখ খোলা কি শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল নয়?

Updated By: Jul 17, 2019, 11:29 PM IST
তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করার আগে সাবধান, নির্দেশ সিপিএমের

নিজস্ব প্রতিবেদন: তন্ময় ভট্টাচার্যের বয়ান নিয়ে ধুন্ধুমার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে। সরাসরি ভত্সনা না করলেও রীতিমতো বিবৃতি জারি করে এই প্রবণতায় রাশ টানার চেষ্টায় আলিমুদ্দিন। বুধবার বৈঠকের পর এক বিবৃতি জারি করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাতে দলীয় কর্মীদের সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত শক্ত হতে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন তিনি।

 

গত রবিবার Zee ২৪ ঘণ্টাকে একান্ত সাক্ষাত্কারে সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনীতিতে কেউ অস্পৃশ্য নয়। বিজেপিকে ঠেকাতে দরকারে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পাশে দাঁড়াতেও রাজি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যদি মধ্যমগ্রাম মোড়ের মাথায় জয় শ্রী রাম না বলায় কাউকে আক্রান্ত হতে দেখি তখন কি আমি সেই ব্যক্তিকে রক্ষা করতে এগিয়ে যাব না? পাশেই তৃণমূলের জেলা সদর দফতর। তখন যদি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতিও সেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে আসে আমি কি সেখান থেকে চলে যাব? 

শুধু তাই নয়। তন্ময়বাবু বলেন, দলের আগে দেশ বড়। যা দলের আদর্শবিরোধী বলে দাবি করছেন সিপিএম নেতাদেরই একাংশ। 

তন্ময়বাবুর এই বক্তব্য প্রকাশ পেতেই সিপিএমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দলে বাগ্মী নেতা হিসাবে পরিচিত তিনি। সেই তন্ময়বাবুর প্রকাশ্যে তৃণমূলের পাশে থাকার মন্তব্য মেনে নিতে পারেননি দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অনেক সিপিএম নেতা - কর্মীই। সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা শুরু করেন তাঁরা। 

সমর্থকদের সমালোচনায় ক্ষুব্ধ তন্ময়বাবু পরদিন ফের ফেসবুকে বিবৃতি দেন। গোটা প্রেক্ষিত বর্ণনা করে তিনি বলেন, চাইলে এখনো গালাগাল দিন, মত বদলাবে না। 

বুধবার বিষয়টি রাজ্য কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত হয়। তাতে বিজেপিকে রোখার জন্য তৃণমূলের হাত ধরা নিয়ে সিপিএম নেতাদের একাংশ যে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে চলেছেন তাঁর বিরোধিতা করেন সদস্যরা। প্রশ্ন ওঠে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দলের অভ্যন্তরে আলোচনা করার আগেই প্রকাশ্যে মুখ খোলা কি শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল নয়? এর পরই সিপিএম নেতাদের সংবাদমাধ্যমের সামনে সাবধানে মুখ খুলতে নির্দেশ দেয় রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। 

যত খুশি গালাগালি দিন, তৃণমূলের পাশে থাকা নিয়ে মত বদলাবে না, বললেন তন্ময়

বিবৃতি জারি করে সূর্যবাবু বলেন, সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু মৌলবাদের বিপদের বিরুদ্ধে সমস্ত শান্তিপ্রিয় ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সকলকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। এই লড়াইকে দুর্বল করার জন্য বিজেপিকে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে বিজেপর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক বিপজ্জনক প্রবণতা চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তির ক্ষেত্রে এর গুরুতর প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে তা গুরুতর বিপদ। এই প্রবণতা প্রতিহত করতে সাম্প্রদায়িকতার ক্রমবর্ধমান বিপদের মোকাবিলায় ব্যাপকতম ঐক্য গড়ে তুলতে বামপন্থীদের দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। 

লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই পরস্পরের হাত ধরা নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন সিপিএম ও তৃণমূল নেতারা। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বিজেপিকে রুখতে সিপিএম ও কংগ্রেসের তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলা উচিত।' পরে যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে বলে দাবি করে তৃণমূল। একই সুর শোনা যায় সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য, গৌতম দেব ও সীতারাম ইয়েচুরির গলায়। তিন জনের মন্তব্যে একটা অংশ মিলে যায় অবিকর। রাজনীতিতে কেউ অচ্ছুৎ নয়। 

Tags:
.