রাজনৈতিক স্বার্থে সিআইডিকে ব্যবহার, উঠছে প্রশ্ন
গার্ডেনরিচ কাণ্ডের তদন্তভার কলকাতা পুলিসের হাত থেকে কেড়ে সিআইডি-কে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর গুড়িয়া কাণ্ডের তদন্তে কলকাতা হাইকোর্টের তীব্র ভর্তসনার মুখে পড়তে হল সেই সিআইডি-কেই। ইতিমধ্যেই তাদের হাতে থাকা বিভিন্ন তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে অভিযোগ উঠছে, রাজনৈতিক স্বার্থে সিআইডি-কে ব্যবহার করছে রাজ্য সরকার।
গার্ডেনরিচ কাণ্ডের তদন্তভার কলকাতা পুলিসের হাত থেকে কেড়ে সিআইডি-কে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর গুড়িয়া কাণ্ডের তদন্তে কলকাতা হাইকোর্টের তীব্র ভর্তসনার মুখে পড়তে হল সেই সিআইডি-কেই। ইতিমধ্যেই তাদের হাতে থাকা বিভিন্ন তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে অভিযোগ উঠছে, রাজনৈতিক স্বার্থে সিআইডি-কে ব্যবহার করছে রাজ্য সরকার।
গার্ডেনরিচে পুলিসকর্মী তাপস চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিস। তীব্র রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও গ্রেফতার করা হয় মূল অভিযুক্ত দুজন-সহ বারো জনকে। এমনকী মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার নাম এফআইআরে রাখে কলকাতা পুলিস।
কিন্তু ঘটনার দুদিন পরে আচমকাই কলকাতার পুলিস কমিশনারকে সরানোর পাশাপাশি তদন্তভার সিআইডি-র হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশ্ন উঠেছিল তখনই। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডকে সাজানো ঘটনা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই ঘটনাতেই কার্যত খড়ের গাদা থেকে সূচ খোঁজার মতো অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগ বুঝিয়েছিল ঘটনাটা মোটেই সাজানো ছিল না।
তার মাসুল হিসেবে অবশ্য সরে যেতে হয় গোয়েন্দা প্রধান দময়ন্তী সেনকে। এবং তার পরিণতিতেই এখনও অধরা ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে সফল কলকাতা পুলিসের হাত থেকে কেড়ে নিয়েই গার্ডেনরিচ কাণ্ডের তদন্তভার সিআইডি-কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেটা বৃহস্পতিবারের ঘটনা। আর সোমবার গুড়িয়া কাণ্ডের তদন্তে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় সেই সিআইডি-কে তীব্র ভর্তসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট। এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সাম্প্রতিক সময়ে সিআইডি-র হাতে থাকা বিভিন্ন তদন্তের গতিপ্রকৃতি।
ফেব্রুয়ারি ২০১১-সিবচুতে মোর্চার জমায়েতে পুলিসের গুলি
সিপচুতে পুলিসের গুলিতে একাধিক মোর্চা সমর্থকের মৃত্যুর ঘটনার পরে দুবছর পেরিয়ে গেলেও চার্জশিট জমা দিতে পারেনি সিআইডি।
অক্টোবর ২০১১-বগুলায় পুলিসের গুলিতে মহিলা কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু
এই ঘটনাতেও এখনও চার্জশিট দিতে পারেনি সিআইডি।
ডিসেম্বর ২০১১-মগরাহাটে পুলিসের গুলিতে মৃত্যু
সিআইডি-র হাতে থাকা এই মামলাটি এখন বিচারাধীন।
ফেব্রুয়ারি ২০১২-প্রদীপ তা কমল গায়েন হত্যা
বর্ধমানে প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা এবং সিপিআইএম নেতা কমল গায়েনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুনের তদন্তভার পায় সিআইডি। বর্তমানে জামিনে মুক্ত অভিযুক্তেরা। নিহত সিপিআইএম নেতা প্রদীপ তায়ের পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
নভেম্বর ২০১২-তেহট্টে পুলিসের গুলি
তেহট্টে পুলিসের গুলিতে একজনের মৃত্যুর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। এখনও চার্জশিট তৈরি হয়নি।
যদিও এরমধ্যেই, বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে সেরে ফেলা হয়েছে দুটি তদন্তের কাজ। চার্জশিটও জমা পড়েছে। প্রথমটি, নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলা।
নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলা
এই মামলায় গ্রেফতার করা হয় সিপিআইএম নেতা লক্ষ্ণণ শেঠকে। চার্জশিটও জমা পড়ে। দ্বিতীয়টি, বেনাচাপড়া কঙ্কাল উদ্ধার মামলা।
বেনাচাপড়া কঙ্কাল মামলা
এই মামলায় গ্রেফতার করা হয় সিপিআইএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষকে। এক্ষেত্রেও চার্জশিট জমা পড়েছিল।
নতুন সরকার সিআইডিকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের করছে বলে ওঠা অভিযোগটা আরও জোরাল করছে সিআইডি-র এই পারফরম্যান্স রিপোর্ট।
গার্ডেনরিচে পুলিসকর্মী তাপস চৌধুরীর হত্যাকাণ্ডে ইতিমধ্যেই পুরমন্ত্রী-সহ একাধিক তৃণণূল নেতার নাম জড়িয়েছে। পুলিস সূত্রে খবর, তৃণমূল নেতৃত্বের কথা মতো মামলা সাজাতে নারাজ হওয়াতেই সরে যেতে হয়েছে কলকাতার নগরপালকে। আর সে কারণেই তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে সিআইডি-র হাতে। পুলিস মহলের খবর, সিআইডি প্রধান মুখ্যমন্ত্রীর কাছের লোক বলেই পরিচিত।