একুশের আগে রাজ্যজুড়ে ঘাসফুল ছাঁটতে বিজেপির দাওয়াই 'ভাটপাড়া' মডেল
২০১১ সালে পরিবর্তনের আগে শুরু হয়েছিল রংবদলের রাজনীতি। পরিবর্তনের সরকার আসার পর তার গতি আরও বাড়ে।
অঞ্জন রায়
মডেল ভাটপাড়া। সেই মডেলেই ২০২১ সালের আগে রাজ্যে ঘাসফুল ছাঁটার পরিকল্পনা করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। স্পষ্টভাবে বললে, পঞ্চায়েত-পুরসভা থেকে তৃণমূলের ঘটি ওল্টায়। তাতে শাসক দলকে ধাক্কা দেওয়া যাবেই, টলানো যাবে আত্মবিশ্বাসও। সেই সঙ্গে বাড়বে বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি।
২০১১ সালে পরিবর্তনের আগে শুরু হয়েছিল রংবদলের রাজনীতি। পরিবর্তনের সরকার আসার পর তার গতি আরও বাড়ে। একের পর এক পুরসভা হাতে আসতে থাকে তৃণমূলের। ২০১৯ সালে কি সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চলেছে বিজেপি? লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন নিয়ে শাসক দলকে ধাক্কা দিয়েছে বিজেপি। লোকসভা ভোট মেটার পর পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবার পুরসভায় ক্ষমতায় এসেছে গেরুয়া ব্রিগেড। আর এই পুরোটাই হয়েছে শুধু দল বদলের খেলায়। প্রথমে অর্জুন সিংয়ের বিজেপিতে নাম লেখান। পরে তাঁর হাত ধরেন তৃণমূলের অধিকাংশ কাউন্সিলর। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই মঙ্গলবার ২৬জন কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গঠন করে বিজেপি। এখান থেকেই নতুন সমীকরণ তৈরি করেছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা।
বলে রাখি, ভাটপাড়া পুরসভা হাতে রাখতে চেষ্টার কসুর করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। প্রশাসক বসানোর চেষ্টা করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু আইনি প্যাঁচে তা ব্যর্থ হয়। তাতে বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই হালিসহর, নৈহাটি ও কাঁচরাপাড়া পুরসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর যোগ দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। দার্জিলিং পুরসভাও বিজেপির হাতে যেতে চলেছে। সবমিলিয়ে রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভার দখল নিতে চলেছে বিজেপি। তবে এখানেই শেষ হয়, রাজ্যে ক্ষমতা বদলের লক্ষ্য পূরণের প্রথম ধাপে তারা নজর দিচ্ছে স্থানীয় নির্বাচিত সংস্থাগুলির রং বদলে। কিন্তু অধিকাংশ পুরসভাতেই তো ভোটের দেরি আছে। তাহলে রং বদল হবে কী করে? হাতের কাছেই রয়েছে 'ভাটপাড়া মডেল'।
ভাটপাড়া মডেল কী?
রাজ্যে ১৮টি লোকসভা আসনে এখন বিজেপির সাংসদ। চল্লিশেরও বেশি পুরসভা রয়েছে এই লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে।
প্রথম লপ্তে সেখানেই বদল চাইছে বিজেপি। যেমনটা হয়েছে ভাটপাড়ার ক্ষেত্রে। এই কৌশলে প্রথমে এলাকার প্রভাবশালী নেতাকে দলে টানার পরিকল্পনা করেছে গেরুয়া শিবির। ওই নেতার সঙ্গেই তাঁর অনুগামী কাউন্সিলরাও শিবির বদলে ফেলবেন। তারপর সুযোগ বুঝে অনাস্থা এনে পুরসভার দখল।
রাজনৈতিক লাভ?
২০২১ সালের আগে লোকসভা ভোটে তৃণমূলকে 'হাফ' করে ধাক্কা দিয়েছেন দিয়েছেন দিলীপ, মুকুলরা। কর্মীদের মনোবল বাড়াতে মমতাকে ফি দিনই বলতে হচ্ছে, ইভিএমের ভোটারদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়া আসনগুলিতে তৃণমূল জিতবে। গতকালও নেত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, গতবারের চেয়ে ৫ শতাংশ ভোট বেড়েছে তৃণমূলের। বাংলার রামের টিআরপি কমছে। এহেন পরিস্থিতিতে শাসক দলকে আরও দুর্বল করতে চাইছে বিজেপি। এতটাই দুর্বল যে যুদ্ধের আগেই মাটি ছেড়ে দেয় শত্রুপক্ষ। সে কারণে তৃণমূলের হাতে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রগুলি শীঘ্রই পকেটে পুরে ফেলা জরুরি। এর ফলে বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়বে তৃণমূলের আত্মবিশ্বাস। একইসঙ্গে হাওয়া মোরগ নেতাদের ঝাঁকও চলে আসবে গেরুয়া শিবিরে। রাজনৈতিক মহলের মতে, সংগঠন ছাড়া বাংলায় ভোট সম্ভব নয়। সেটা বুঝেছে বিজেপি। শুধু হাওয়ার উপরেই নির্ভর করতে চাইছেন না অমিত শাহ। পোক্ত সংগঠনও চাই তাঁর। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ পেয়ে তৃণমূল ভাঙতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি।
আরও পড়ুন- বিজেপিতে যোগদানকারী অঞ্জু ঘোষ কি বিদেশি নাগরিক? কী বলছেন অভিনেত্রী?