লড়াই চলছে, লড়াই চলবে, ২৪ ঘণ্টার শপথে, সঙ্কল্পে দামিনী

ঠিক এক বছর আগের একটা রাত। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। দিল্লির মুনিরকায় চলন্ত বাসে ঘটেছিল চরম নির্মম এক ঘটনা। কলঙ্কের ইতিহাসে তার পরিচয় দিল্লি ধর্ষণ কাণ্ড। তা দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। জেগে উঠেছিল আসমুদ্র হিমাচল। বদলাতে হয় আইন। সময়ের চাকায় ভর করে, লজ্জার সেই দিন আজ এক বছর পূর্ণ করল। সামনেই নিউ ইয়ার। নতুন বছর ঘিরে জেগে উঠছে অসংখ্য সঙ্কল্প। তার কিছু ব্যক্তিকেন্দ্রিক। আবার অনেক সঙ্কল্পই সামাজিক। অর্থাত্ সমষ্টিকে নিয়ে। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ সঙ্কল্পে সামিল চব্বিশ ঘণ্টাও।

Updated By: Dec 16, 2013, 03:49 PM IST

ঠিক এক বছর আগের একটা রাত। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। দিল্লির মুনিরকায় চলন্ত বাসে ঘটেছিল চরম নির্মম এক ঘটনা। কলঙ্কের ইতিহাসে তার পরিচয় দিল্লি ধর্ষণ কাণ্ড। তা দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ। জেগে উঠেছিল আসমুদ্র হিমাচল। বদলাতে হয় আইন। সময়ের চাকায় ভর করে, লজ্জার সেই দিন আজ এক বছর পূর্ণ করল। সামনেই নিউ ইয়ার। নতুন বছর ঘিরে জেগে উঠছে অসংখ্য সঙ্কল্প। তার কিছু ব্যক্তিকেন্দ্রিক। আবার অনেক সঙ্কল্পই সামাজিক। অর্থাত্ সমষ্টিকে নিয়ে। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ সঙ্কল্পে সামিল চব্বিশ ঘণ্টাও।

সিনেমার নাম ছিল লাইফ অফ পাই। তা দেখে ফেরার পথে লাইফই যে গভীর সঙ্কটে পড়বে, তা ভাবতে পারেননি দুজনের কেউই। দামিনী আর তাঁর বন্ধু সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার জন্য উঠেছিলেন একটি চার্টার্ড বাসে। তারপরের ঘটনা এখনও স্মৃতিতে দগদগে।

চলন্ত বাসে চুরাশি মিনিটের নির্মম নির্যাতন। এক নাবালক সহ ছজন মিলে গণধর্ষণ। রড দিয়ে খুঁচিয়ে বাইরে বের করে আনা হয় শরীরের ভিতরের দেহাংশ। তারপর দামিনী ও তাঁর বন্ধুকে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় চলন্ত বাস থেকে শীতের রাতে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। দুজনের ঠাঁই হয় দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে।

শুরু হয় শোরগোল। লজ্জা, ব্যথা, অপমান আর প্রতিবাদে পথে নামেন অসংখ্য মানুষ। ঘটনার অভিঘাত যেন ভেঙে দিয়েছে সকলেরই জীবনপাত্র।

২২ ডিসেম্বর ২০১২--প্রতিবাদের এক অন্য চেহারা দেখল সারা দুনিয়া। যাকে কেউ চেনে না, কেউ জানে না, এমন এক মেয়ের জন্য বুক চিতিয়ে রাজপথে দাঁড়াল দিল্লির মানুষ। যত বড় রাজধানী, তত বিখ্যাত নয় এ হৃদয়পুর। ঘুচে গেল এই বদনাম। বারুদে আগুন লেগেছে। একথা বুঝতে পেরে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি প্রশাসন। প্রতিবাদীর ছাতিতে আছড়ে পড়েছে জলকামানের দুর্বার স্রোত। পুলিসের লালচোখ। র‌্যাফ এর পলিকার্বোনেটেড স্টিক। ধাতব ফেন্সিং। একশো চুয়াল্লিশ ধারা। কাঁদানে গ্যাস।গ্রেফতারি। বাদ থাকেনি কিছুই। বিক্ষোভে রাশ টানতে দিল্লিতে মেট্রো স্টেশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তবু ইন্ডিয়া গেট, রাইসিনা হিলসের সামনে থেকে ভিড় পাতলা হয়নি। বরং তা উত্তোরত্তোর বেড়েছে। দামিনীর জন্য মোমবাতি হাতে রাত জেগেছে অসংখ্য তরুণ প্রাণ। বুকের ভিতরে কিছু পাথর থাকা ভাল। ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় বুকের ভিতর শোকের পাথর থাকলে, প্রতিবাদ যে এভাবে ঠিকরে বেরোয়, তা দেখিয়েছে দিল্লি কাণ্ড। শান্ত থাকার আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ঘনঘন বৈঠক। রাজধানীর গণ্ডি ছাড়িয়ে বিক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। তারপর সীমান্ত পেরিয়ে তা পৌছে যায় নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এমনকি ফ্রান্সেও। প্রতিক্রিয়া আসে রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকেও।

২৯ ডিসেম্বর ২০১২- সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে জীবনযুদ্ধে হেরে যান দামিনী। ক্লান্তির কফিনে দেহ পৌছয় এদেশে।

৩০ ডিসেম্বর ২০১২- ভোরের আলো উজ্জ্বল হওয়ার আগেই শেষকৃত্য হয়ে যায় দামিনীর। অসংখ্য মোমবাতির শিখায় দেশ ডুবে যায় শোকের অন্ধকারে। কিন্তু মোমের আলোয় নরম হয়নি প্রতিবাদ।

আন্দোলনের আঁচ মন্থন করে উঠে এসেছে এক অনামীর অসংখ্য নাম। জাগৃতি, জ্যোতি, আমানত, নির্ভয়া, দামিনী। আরও কত কী! সারা দেশ জুড়ে যখন কিছু হয়, ইতিহাস বলে তখনই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বদল আসে। দিল্লি কাণ্ডের রেশ ধরে তা এলও। বিচারবিভাগীয় পদ্ধতির দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে দেশ দেখল এক ব্যতিক্রমী মামলা। গণরোষের চাপে ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে চার্জশিট পেশের প্রতিশ্রুতি দেয় পুলিস। প্রশাসন ও বিচারবিভাগের তত্পরতায় পাঁচটি ফাস্টট্র্যাক কোর্ট তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়।

৩১ অগাস্ট ২০১৩

জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে দোষী সাব্যস্ত দিল্লি কাণ্ডে অভিযুক্ত নাবালক

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩

বাকি চার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করল বিশেষ আদালত। ততদিনে তিহার জেলে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে আরেক অভিযুক্ত রাম সিংয়ের।

এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি নারীর নিরাপত্তা রক্ষায় নতুন আইন। মহিলাদের যৌন হয়রানি সংক্রান্ত ১৯৭৩ সালের অপরাধ আইন সংশোধন করে আরও কড়া আইন আনে কেন্দ্র।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বাধীনতা উত্তর ভারতে কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন অখণ্ড ঐক্য রচনা দেশের ইতিহাসে বিরল। সমষ্টি যখন জাগে, তখন দেশ জিতে যায়। দিল্লির ঘটনাতেও তাই হয়েছে। আক্ষেপ এটাই প্রাপ্তি এসেছে মর্মান্তিক প্রাণ বিয়োগের মধ্যে দিয়ে। তাই সঙ্কল্পে থাক দামিনী। আমাদের কাজে, পৃথিবীর ধুলোয় অম্লান হয়ে থাক তাঁর অনামী নামের জ্যোতি।

দিবসগুলো পালিত হয়, শপথগুলো নয়... নির্ভয়ার ১৩ দিনের লড়াইয়ে আপনিও শপথ নিন
"RESPECT WOMEN"

.