বদলাচ্ছে আবহাওয়া, ব্রঙ্কাইটিসের হাত থেকে শিশুকে বাঁচান উপযুক্ত শতর্কতায়

যে কোনও বয়সেই ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে। তবে বয়স্ক মানুষ বা শিশুদের ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেকটা বেশি।

Updated By: Oct 14, 2019, 04:25 PM IST
বদলাচ্ছে আবহাওয়া, ব্রঙ্কাইটিসের হাত থেকে শিশুকে বাঁচান উপযুক্ত শতর্কতায়
—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন: ঘরে ফিরছে মৌসুমী বায়ু। ফলে বর্ষার মেঘ কেটে গিয়ে একটু একটু করে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। আর এই আবহাওয়া বদলের সময় ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা মাথা চাড়া দিতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের গায়ে ঘাম শুকিয়ে গিয়ে চট করে সর্দি-কাশির প্রবণতা রয়েছে বা যারা হাঁপানির সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা ঠান্ডা-গরমে এই ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা থেকে রেহাই পান না।

ব্রঙ্কাইটিস হল ফুসফুসের এক ধরনের সংক্রমণ। ব্রঙ্কাইটিস হলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করার টিস্যুটি (ব্রঙ্কিয়াল ট্রি) ফুলে ওঠে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা ভাইরাসের জন্য হলেও কিছু ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া কারণেও হতে পারে। কেউ যদি বেশ কয়েকবার ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তার ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। এই ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসেরই অপর নাম ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ বা সংক্ষেপে সিওপিডি। তবে ‘অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিস’ ফুসফুসের তেমন কোনও সমস্যা না থাকলেও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত ভাব কয়েকবার ব্রঙ্কাইটিসের অ্যাটাক হয়।

ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণ:

যে কোনও বয়সেই ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে। তবে বয়স্ক মানুষ বা শিশুদের ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেকটা বেশি। ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম হল কাশি। ব্যাকটেরিয়া থেকে ব্রঙ্কাইটিস হলে কফের রং হলুদ বা হালকা সবুজ হতে পারে। আবার ভাইরাল হলে সাদা কফ হতে পারে। কফযুক্ত কাশি, কাশতে গেলে বুকে ব্যথা, সঙ্গে জ্বর— এ সবই ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণ। এই সমস্যায় মাঝে মধ্যে নিঃশ্বাস নিতেও সমস্যা হতে পারে। হাঁপানি বা অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে ব্রঙ্কাইটিসের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। এ ছাড়াও চারপাশের ধুলাবালি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই সমস্যায় স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ক্লান্ত লাগে। এ ছাড়াও অনেকের এ ক্ষেত্রে পা, পায়ের পাতা বা গোড়ালি ফুলে উঠতে পারে। বুকের ভেতর সাঁই সাঁই শব্দও হতে পারে। এ লক্ষণগুলি দেখলে দেরি না করে চিকিত্‍সকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

ব্রঙ্কাইটিসের চিকিত্‍সা:

ব্রঙ্কাইটিস নিরাময়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন সময়মতো চিকিত্‍সা শুরু করা। ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার ঠিক কতদিনের মধ্যে রোগী সেরে উঠতে শুরু করবে, তা নির্ভর করে সংক্রমণ কতটা গুরুতর তার ওপর। ব্রঙ্কাইটিসের চিকিত্‍সায় ওষুধের মধ্যে প্রধানত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। তবে ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক তেমন ভাবে কার্যকরী না-ও হতে পারে। এ ছাড়া রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিত্‍সকেরা অন্যান্য ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। সাধারণত, অ্যাকিউট ব্রঙ্কাইটিসের ক্ষেত্রে এক সপ্তাহের মধ্যে ইনফেকশন চলে যায়। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা অবশ্যই এ সময় বন্ধ রাখা উচিত। প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা উচিত। আর এর সঙ্গেই চাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম।

ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা ঠেকানোর উপায়:

ব্রঙ্কাইটিস রুখতে করতে চাইলে নিতে হবে কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ। যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এই সময় শিশুদের সামনে ধূমপান যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। বাইরের ধুলাবালি থেকে যতটা সম্ভব বাঁচিয়ে চলুন। সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। যোগাসনও খুব ভাল উপায়। নিয়মিত প্রাণায়াম ফুসফুসের সমস্যা দূর করে, রক্ত চলাচল বাড়িয়ে তোলে। তবে শিশুদের জন্য প্রাণায়ামের প্রয়োজন নেই। কারণ, সঠিক পদ্ধতিতে প্রাণায়াম না করলে উলটে বিপদ আরও বাড়বে। ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধু ওষুধের ওপর ভরসা না করে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন অত্যন্ত জরুরি।

.