যথাযথ সতর্কতা আর উপযুক্ত পদ্ধতিতে কাটা পড়া অঙ্গকেও জুড়ে দেওয়া সম্ভব!
আসুন এ বিষয়ে সবিস্তারে জেনে নেওয়া যাক...
নিজস্ব প্রতিবেদন: বছর পয়ত্রিশের শঙ্কর সাহা দিন সাতেক আগে হয়তো ভাবতেও পারেননি যে, ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন তিনি। কারণ, একটি দুর্ঘটনায় দু’টি হাতের কব্জি থেকেই কেটে পড়ে গিয়েছিল হাতের পাঞ্জা। কিন্তু নজিরবিহীন ভাবে অসাধ্যসাধন করে দেখালেন এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা। দুই হাতের কাটা পড়া পাঞ্জা ফের কব্জির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল কয়েক ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে। ভারতীয় শল্য চিকিৎসার ইতিহাসে ওড়িশা পর কলকাতায় এই রকম জটিল অস্ত্রোপচার হল। মিলল সাফল্যও।
বেলঘরিয়ার বাসিন্দা শঙ্কর সাহা সরস্বতী প্রেসে কাজ করেন। মঙ্গলবার ভোরে পেপার কাটিং মেশিনে ছাপা সামগ্রীর পেপার কাটিং কাজ করছিলেন শংকর। মুহূর্তের অসাবধানতায় কাটিং মেশিনের দুটি হাতে ঢুকে যায়। পেপার কাটারের ধারালো ব্লেডে মুহুর্তের মধ্যে দুটি হাত হাতের কব্জি থেকে বাকি অংশ কেটে পড়ে যায়। প্রথমে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতাল, পরে সেখান থেকেই তাঁকে পাঠানো হয় এসএসকেএম-এ। অস্ত্রোপচারের ৭ দিনের পর থেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন শংকর। আঙুলও নাড়াতে পারছেন দিব্যি। তবে আরও বেশ কয়েকদিন শংকরকে পর্যবেক্ষণে রাখতে চাইছেন চিকিৎসকেরা।
এই ঘটনা এসএসকেএম হাসপাতালের নজিরবিহীন সাফল্যের প্রমাণ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, কোনও দুর্ঘটনায় শরীরের কোনও অঙ্গ বাদ পড়ে গেলে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আর জোড়া লাগানো যায় না। কিন্তু এসএসকেএম হাসপাতালের এই ঘটনা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের শল্য চিকিৎসকদের মতে, সঠিক পদ্ধতি জানা থাকলে বা কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করলে চিকিৎসকেরা দুর্ঘটনায় বাদ পড়া কোনও অঙ্গ ফের জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করার সুযোগ পেতে পারেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক দুর্ঘটনায় বাদ পড়া কোনও অঙ্গ ফের শরীরের সঙ্গে সফল ভাবে জুড়ে দেওয়ার জন্য কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা জরুরি...
আরও পড়ুন: দু-টুকরো দু-হাত, কয়েকঘণ্টায় জোড়া লাগিয়ে নজির SSKM-এর
কাটা পড়া অঙ্গ সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি:
১. কেটে পড়ে যাওয়া অংশ দ্রুত স্যালাইন জলে ভেজানো গজ ও তুলো নিংড়ে তা মুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. কেটে পড়ে যাওয়া অংশ ধুলো বালি কাদা মাখামাখি হলেও তা পরিষ্কার করা উচিত নয়। যেভাবে তা উদ্ধার হবে সেভাবেই ওই গজ বা তুলো দিয়ে মুড়ে ফেলতে হবে। এতে ওই কাটা অংশের নার্ভ টিস্যু ধুতে গিয়ে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচবে।
৩. কাটা অংশ এরপর বরফের কন্টেনার বা প্যাকেটে ঢুকিয়ে রাখতে হবে।
৪. দুর্ঘটনার সময় থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ‘গোল্ডেন টাইম’।
৫. বরফ যেন কাটা অংশের সরাসরি সংস্পর্স এ না আসে। তাতে স্নায়ু কোষ (নার্ভ টিস্যু), শিরা-উপশিরা নষ্ট হতে পারে।
৬. যে অংশ কেটে গিয়েছে সেখানে রক্তপাত বন্ধ করাটা প্রাথমিক কাজ। টাইট ব্যান্ডেজ ওষুধ দিতে হবে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে।
৭. তারপর প্লাস্টিক সার্জারি, সিটিভিএস বিভাগ থাকা হাসপাতালে ৬ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে হবে।