Hikikomori: গভীর অসুখ? এক অনন্ত 'ভাল্লাগে না'র মর্মান্তিক বিষাদে ক্রমশ ডুবছে বিশ্ব...
Hikikomori in Japan: ঘরের কোণে মুখ লুকিয়ে বসা? হ্যাঁ, সে তো যুগ যুগ ধরেই হয়ে আসছে। সব সময়ের জন্যই একটা টানা 'ভাল্লাগে না'র শিকার তাঁরা। কিচ্ছু করতে ইচ্ছে করে না, কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। কবি শিল্পীদের এমন হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের হলে?
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: 'আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই!' সুমনের গান বটে, তবে এখন এটা আর শুধু সুমন বলছেন না, বলে উঠছে সারা বিশ্ব। এই মুহূর্তে বলে উঠছে বিশেষ করে জাপানের মানুষ। এক শেষহীন 'ভাল্লাগে না'র শিকার তাঁরা! গভীর অসুখ? তা বইকি! নাম তার 'হিকিকোমোরি'। কোভিড অতিমারির পরে জাপান জুড়ে ব্যাপক হারে বাড়ছে এই রোগের সংক্রমণ। সম্প্রতি এক সমীক্ষা হয়েছে জাপানে। তাতে দেখা গিয়েছে, দেশের একটা বড় অংশ সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এটাকেই জাপানি ভাষায় বলা হচ্ছে হিকিকোমোরি (Hikikomori)।
কোথা থেকে এল শব্দটি? ১৯৯৮ সালে জাপানি মনস্তত্ত্ববিদ তামাকি সাইতো তাঁর 'সোশ্যাল উইথড্রয়াল-- অ্যাডোলেসেন্স উইদাউট এন্ড' বইয়ে 'হিকিকোমোরি' শব্দবন্ধের কথা প্রথম উল্লেখ করেছিলেন। ২৫ বছর পর রোগ হয়ে বাস্তবে তা ফিরল! শব্দটির অর্থ সোশ্যাল উইথড্রয়াল। অর্থাৎ, সমাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ধীরে-ধীরে সকলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আইসোলেশনে চলে যাওয়া। জানা গিয়েছে, জাপানের ১৫ লক্ষ মানুষ এই মুহূর্তে বিরল এই রোগে আক্রান্ত।
কেন জাপানে এই মুহূর্তে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অনীহায় আক্রান্ত?
আরও পড়ুন: World Health Day: সাতেই সমাধান! হার্ট ভালো রাখে, ওজন কমায়, ট্রেসও; কোন খাবার করবে এই ম্যাজিক?
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এর জন্য অনেকাংশে দায়ী অতিমারি। বিষাদ বা একাকিত্বের সমস্যা ছিলই জাপানে, তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে অতিমারি ও তার সঙ্গে আসা নিভৃতবাস। হিকিকোমোরি এমন এক সমস্যা, যাতে মানুষ সম্পূর্ণ ভাবে সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। এ রোগের প্রথম ও প্রধান উপসর্গই হল-- সকলের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর নিজেকে বাড়ির চৌহদ্দিতে আটকে রাখা, কারও সঙ্গে দেখা না করা, কথা না বলা। শুধু নিজের বিষাদের ভিতরে ডুবে থাকা।
শুধু অতিমারি নয়, আধুনিক সমাজব্যবস্থার চাপও এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য দায়ী। বিশাল প্রত্যাশা, ভয়ানক প্রতিযোগিতার চাপ নিতে পারছে না মানুষ। সঙ্গে অর্থনৈতিক জটিলতা, বেকারত্বের জ্বালা, ভেতরে-ভেতরে তৈরি-হয়ে-ওঠা উদ্বেগ-- আর সব মিলিয়ে সমাজের প্রতি তৈরি হচ্ছে একটা আতঙ্ক! রিপোর্ট অনুযায়ী, টোকিয়োতে অন্তত ৯ হাজার মানুষ হিকিকোমোরি আক্রান্ত। এর মধ্যে অনেক পড়ুয়াও রয়েছে, যারা স্কুল-কলেজ যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে!
আজ যা ব্যক্তির সংকট, কাল তা দেশের সমস্যায় পরিণত হবে। এখনই বিশেষজ্ঞেরা বলে দিচ্ছেন, ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া এই 'হিকিকোমোরি'র জেরে আগামী দিনে জাপানে জন্মহার ভয়ানক কমবে, বার্ধক্য লাফিয়ে বাড়বে, অর্থনীতিও ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হবে!