করোনায় মৃত্যুর হার ৪১% কমাতে সক্ষম ডেক্সামেথাসোন; রয়েছে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও!

জেনে নিন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (মেডিসিন) ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অরিন্দম পাণ্ডে...

Reported By: সুদীপ দে | Updated By: Jun 22, 2020, 03:47 PM IST
করোনায় মৃত্যুর হার ৪১% কমাতে সক্ষম ডেক্সামেথাসোন; রয়েছে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও!
—প্রতীকী চিত্র।

সুদীপ দে: সম্প্রতি করোনার চিকিৎসায় সস্তার ‘জীবনদায়ী’ ওষুধের খোঁজ দিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। করোনার চিকিৎসায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি স্টেরয়েড ‘ডেক্সামেথাসোন’ (Dexamethasone)-এর ‘জীবনদায়ী’ প্রভাবের প্রমাণ পেয়েছেন ব্রিটিশ গবেষকরা।

অক্সফোর্ডের গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ‘ডেক্সামেথাসোন’ (Dexamethasone) প্রয়োগ করে রোগীদের মৃত্যুর হার কমিয়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ। এই ওষুধের প্রয়োগে অক্সিজেনের সাহায্য নেওয়া গুরুতর অসুস্থ করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর হার কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ এবং স্থিতিশীল করোনা রোগীদের মৃত্যুর হার প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে।

ভারতীয় মূল্যে মোটামুটি ২০ টাকা দামের ডেক্সামেথাসোন ১৯৬০ সাল থেকেই বাতজনিত সমস্যা, চর্মরোগ, মারাত্মক অ্যালার্জি, হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু কতটা নিরাপদ এই ওষুধ? এই স্টেরয়েডের সুফল সামনে এলেও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক করে দিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (মেডিসিন) ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস এবং হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অরিন্দম পাণ্ডে

এ বিষয়ে ডঃ বিশ্বাস জানান, রোগীকে স্টেরয়েড দেওয়ার ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার একটা ঝুঁকি থাকেই। বিশেষ করে যে কোনও স্টেরয়েডই বড়জোড় ২১ দিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। তার বেশি প্রয়োগের ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এই ২১ দিনের মধ্যে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বুঝে স্টেরয়েডের ডোজ ক্রমশ কমিয়ে এনে ধরে ধীরে বন্ধ করতে হয়।

Dr. Arindam Biswas

ডঃ বিশ্বাস বলেন, “স্টেরয়েডের একটি অত্যন্ত সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল, এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে ভবিষ্যতে খুব সাধারণ ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে শরীর। ‘ডেক্সামেথাসোন’ (Dexamethasone) প্রয়োগের ক্ষেত্রেও এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাছাড়া, যাঁদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই স্টেরয়েডের প্রয়োগ বিপজ্জনক হতে পারে! তবে মরনাপন্ন করোনা রোগীর জীবন বাঁচাতে এই ওষুধ সত্যিই অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে, যা এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

Dr Arindam Pande

‘ডেক্সামেথাসোন’ (Dexamethasone) সম্পর্কে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অরিন্দম পাণ্ডে জানান, এই ওষুধ সকলকে নির্বিচারে প্রয়োগ করা যাবে না। তাতে হিতে বিপরীত ফল হতে পারে। এ বিষয়ে ডঃ পাণ্ডে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “ডায়াবেটিস বা হার্টের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগ না করাই ভাল। কারণ, এই স্টেরয়েড প্রয়োগের ফলে হঠাৎ করেই বেড়ে যেতে পারে রক্তের সুগার লেভেল যা ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া, স্টেরয়েড প্রয়োগের সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে শরীরে ফ্লুইডের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। সাধারণ রোগীদের ক্ষেত্রে এতে তেমন কোনও সমস্যা না হলেও হার্টের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হাত-পা ফোলা, হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।”

আরও পড়ুন: করোনার চিকিৎসায় নতুন ‘অস্ত্র’ হাতে পেল ভারত! শক্তিশালী ওষুধ Cipremi বাজারে ছাড়ল Cipla

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘ডেক্সামেথাসোন’ (Dexamethasone) একটি যুগান্তকারী প্রাপ্তি। তবে এটি কখনওই নির্বিচারে প্রয়োগ করা যাবে না। বিশেষত, যাঁদের কিডনির বা হার্টের সমস্যা রয়েছে বা যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে ‘ডেক্সামেথাসোন’ প্রয়োগ বিপজ্জনক হতে পারে!

.