স্তন ক্যান্সারের তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা কতটা? জেনে নিন...
জেনে নিন এ বিষয়ে কী বলছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ (অঙ্কোলজিস্ট) ডঃ শুভদীপ চক্রবর্তী। আজ প্রথম পর্ব...
সুদীপ দে: বর্তমানে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মহিলাদের কাছে স্তন ক্যান্সার একটি মারাত্মক আতঙ্কের নাম। ইদানীং চরিত্র বদলে বিপুল আগ্রাসী হয়ে উঠছে স্তন ক্যানসার। স্তন ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় ভয়ের দিক হল, এক বার সেরে যাওয়ার এক থেকে দু’বছরের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ আবার ফিরে আসছে রোগীর দেহে! অক্টোবরে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস পালিত হচ্ছে গোটা বিশ্বে। অক্টোবর মাস জুড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে চলছে স্তন ক্যান্সারের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে নানা কর্মকাণ্ড। এই উপলক্ষে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে বেশ কয়েকটি জরুরি বিষয়ে আলোকপাত করলেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ (অঙ্কোলজিস্ট এমসিএইচ সার্জিক্যাল) ডঃ শুভদীপ চক্রবর্তী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-এর একটি সমীক্ষায় প্রকাশিত তথ্যের উল্লেখ করে ডঃ চক্রবর্তী জানান, প্রতি ২২ জন ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে ১ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। গোটা বিশ্বে যেখানে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তদের গড় বয়স প্রায় পঞ্চাশ বছর, সেখানে ভারতে ২০-৩০ বছরের মহিলারাও আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সারে। এই বয়সের মহিলাদের বিকিরণের ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় ম্যামোগ্রাম টেস্টের পরামর্শ দেন না চিকিত্সকেরা। ফলে বিপদ ক্রমশ বেড়েই চলেছে! অর্থাৎ, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে স্তন ক্যানসার অনেক বেশি আগ্রাসী এবং ভয়ঙ্কর গতিতে ছড়াচ্ছে!
ডঃ চক্রবর্তী জানান, সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হল, প্রায় ৫০ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলা এর তৃতীয় পর্যায়ে (থার্ড স্টেজ) চিকিত্সকের কাছে আসেন। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রোগী একেবারে অন্তিম পর্যায়ে (ফোর্থ/লাস্ট স্টেজ) চিকিত্সা শুরু করেন। ফলে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশেরই মৃত্যু হচ্ছে এই রোগে। অর্থাৎ, স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে বা এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি চিনতে না পারার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর চিকিত্সা শুরু করতে অনেকটাই দেরি হয়ে যাচ্ছে, আর তার ফলে প্রায় ৫০ শতাংশ আক্রান্তের মৃত্যু হচ্ছে স্তন ক্যান্সারে।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় (গ্লোবোক্যান ২০১৮) জানা গিয়েছে, ভারতে বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার মহিলা নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডঃ চক্রবর্তী বলেন, “দুঃখের বিষয় হল, সচেতনতার অভাবে ভারতের প্রায় ৭৫ শতাংশ মহিলা সময় মতো স্তন ক্যান্সারের চিকিত্সা করান না। তাছাড়া অনেকেই মনে করেন, মায়ের স্তন ক্যান্সার হলে পরবর্তীকালে মেয়েরও এই রোগ হতে পারে। ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে বংশানুক্রমে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এখনও পর্যন্ত সামনে এসেছে। আর এই সমস্ত ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষণ বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা ‘জেনেটিক কাউন্সেলিং’-এর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।”
ডঃ চক্রবর্তী বলেন, “মনে রাখবেন, স্তন ক্যান্সার মোটেই ছোঁয়াচে বা সংক্রামক কোনও রোগ নয়। শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে শরীরে এই রোগ বাসা বাঁধে। উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ডায়েট, স্থূলতা, দেরিতে বিয়ে, অপর্যাপ্ত স্তন্যপান করানো ইত্যাদি একাধিক কারণে স্তন ক্যান্সার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। শহরে বসবাসকারী মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাটা গ্রাম্য মহিলাদের তুলনায় অনেকটাই বেশি।”
স্তন ক্যান্সার মানে কি অবধারিত মৃত্যু?
ডঃ চক্রবর্তী বলেন, “প্রাথমমিক (ফার্স্ট স্টেজ) বা দ্বিতীয় পর্যায়ে (সেকেন্ড স্টেজ) ধরা পড়লে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। তৃতীয় পর্যায়ে (থার্ড স্টেজ) চিকিত্সা শুরু করতে পারলেও প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। এমনকি একেবারে অন্তিম পর্যায়ের শুরুতেই (ফোর্থ/লাস্ট স্টেজ) চিকিত্সা শুরু করতে পারলে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। তাই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া মানেই রোগীর বাঁচার আর কোনও আশা নেই— এমনটা ভেবে নেওয়ার কিন্তু কোনও কারণ নেই!”