Feludar Goyendagiri: 'ফেলুদাকে নিয়ে এত ঘৃণা! সৃজিত পাতে দেওয়ার অযোগ্য?'

 বেশ কিছু মানুষ জোরের সঙ্গে দাবি করছেন যে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের গত কয়েকটা কাজ নাকি পাতে দেওয়ার অযোগ্য। অথচ তাঁরা সেই অযোগ্য কাজগুলোই যে কেন পরপর দেখছেন সেই রহস্যের সমাধান করতে হয়তো ফেলুদাকেই ডাকতে হবে! :টোটা

Updated By: Jun 28, 2022, 03:22 PM IST
Feludar Goyendagiri: 'ফেলুদাকে নিয়ে এত ঘৃণা! সৃজিত পাতে দেওয়ার অযোগ্য?'

নিজস্ব প্রতিবেদন: গত সপ্তাহের শেষে মুক্তি পেয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়(Srijit Mukherji) পরিচালিত ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি: দার্জিলিং জমজমাট’। ফেলুদার(Feluda) চরিত্রে অভিনয় করেছেন টোটা রায়চৌধুরী(Tota Roychowdhury)। ছয় পর্বের এই সিরিজ নিয়ে অনেকদিন ধরেই অনুরাগীরা প্রতীক্ষায় ছিল। মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ওয়েবসিরিজ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সৃজিতের পাশাপাশি ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করার জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছেন টোটাও। সেই সমালোচনা নিয়েই মুখ খুললেন অভিনেতা। 

মঙ্গলবার টোটা লেখেন,'দার্জিলিং জমজমাট স্ট্রিমিংয়ের দশদিন অতিক্রান্ত হয়ে গেল। এই দশদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন একটা ঝড় বয়ে গেছে। কখনও ভালোবাসার জোয়ারে ভেসেছি তো কখনো ঘৃণার বাক্যবাণে বিদ্ধ হয়েছি। এর মধ্যে আমরা একটা রেকর্ডও সৃষ্টি করেছি। বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দর্শক এই সিরিজটি দেখেছেন। এর পেছনে সব দর্শকেরই অবদান আছে। তাই আপনাদের জঘন্য লেগে থাকুক বা ভালো, আমি আমাদের টিমের তরফ থেকে আপনাদের প্রত্যেককেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

সাধারণত, সমালোচনাকে আমি স্বাগত জানাই। অবজেক্টিভ ও কনস্ট্রাকটিভ (বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক) সমালোচনা থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। এবারও যেমন শিখেছি। তবে এবারে একটা নতুন অভিজ্ঞতা হল। বেশ কিছু সমালোচনা গঠনমূলক তো নয়ই, অসম্ভব ঘৃণা মিশ্রিত, যার প্রধান উদ্দেশ্যই হল পরিচালককে বা অভিনেতাদের হেয় করা। বেশ কিছু মানুষ জোরের সঙ্গে দাবি করছেন যে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের গত কয়েকটা কাজ নাকি পাতে দেওয়ার অযোগ্য। অথচ তাঁরা সেই অযোগ্য কাজগুলোই যে কেন পরপর দেখছেন সেই রহস্যের সমাধান করতে হয়তো ফেলুদাকেই ডাকতে হবে! 

ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি যে সৃজিতের মত পরিশ্রমী, কাজের প্রতি সমর্পিত ও কাজপাগল পরিচালক আমি আমার পুরো কেরিয়ারে (প্রায় পঁচিশ বছরে) দুটি দেখিনি। আমি কিন্তু বেশ কিছু বড়মাপের পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছি এবং ভেবেচিন্তেই কথাটা লিখলাম।  দুম করে আবার বলে বসবেন না যে পরের ছবিতে চান্স দিচ্ছে নাকি! ও কিন্তু ছবিতে আমাকে কোনোদিন নেয়নি এবং বাংলা হিন্দি মিলিয়ে আগামীতে যে ছবিগুলো করছে সেগুলোতেও আমার স্থান নেই। আর ইদানিং মুম্বইয়ে কিঞ্চিৎ কাজ করছি বলে এটা জোরের সাথে বলতে পারি যে বাংলা থেকে সৃজিতই একমাত্র পরিচালক যাকে ওঁরা চেনেন এবং যাঁর কাজের সম্বন্ধে ওঁদের সম্যক ধারণা আছে। তা সে করণ জোহর হোক, রণবীর সিং বা আলিয়া ভাট হোক বা শাবানা আজমি। রকি রানী কি প্রেম কাহানি-তে এই অধম একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করছে এবং সেটে যেদিন সৃজিত এসেছিল সেদিন সেটা প্রত্যক্ষ করেছি বলেই লিখছি। গেঁয়ো যোগী যে ভিখ পায়না সেটা আমার থেকে ভালো আর কে জানবে।

এবার আসি আমার বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের ক্ষেত্রে। জঘন্যতম ফেলুদা, আড়ষ্ট, কেতাবাজ, চিবিয়ে কথা বলে আরো নানান বিশেষণে আমায় ভূষিত করা হয়েছে। আমি নিজে যতবারই অনুরোধ বা বিনতি করি না কেন যে সৌমিত্রবাবু বা সব্যসাচীবাবু হিমালয় সম, ওঁদের সঙ্গে আমার তুলনা করা আর সৌরভ বা ধোনির সঙ্গে ক্যাম্বিস বলের পাড়ার ক্রিকেটারের তুলনা করা, একই পর্যায়ের, তাই দয়া করে তুলনা টানবেন না। কিন্তু তারপরেও কিছু বস্তুনিষ্ঠতা বিসর্জন দেওয়া মানুষ তুলনা টানবেনই কারণ মানুষকে ছোট করে যে অনাবিল আনন্দ আরোহণ করা যায় এবং নিজের ক্ষুদ্রতা থেকে যে ক্ষণিকের  মুক্তি পাওয়া যায় তা থেকে কিছু মানুষ কেন নিজেদের বঞ্চিত করবেন! তাই বারবার তুলনা টানা এবং ট্রোল করে  পৈশাচিক আনন্দে লিপ্ত হওয়া, তা বেশ। এটাও তো একপ্রকার বিনোদন।

আমার চোখে ফেলুদা এক অনমনীয় চরিত্রের দৃঢ়চেতা মানুষ। সে যতই রাত জাগুক না কেন ভোরে বা সকালে ঠিক যোগব্যায়াম করবেই। মার্শাল আর্টেও সে পারদর্শী। এই ধরনের মানুষদের পশ্চার সম্বন্ধে কি ধারণা আছে? যদি না থাকে তাহলে খেয়াল করবেন যে তারা স্ট্রেট ও স্কোয়ার কাঁধের হন। রায় সাহেবের আঁকা ফেলুদার স্কেচগুলো আরেকবার দেখার জন্য অনুরোধ করছি। সটান শিরদাঁড়া, উচ্চ শির। আমি সেগুলোই অনুসরণ করেছি।  এঁদের হাঁটাচলা, মুভমেন্ট খুব কন্ট্রোলে থাকে। তাঁদের মানসিক দৃঢ়তা তাঁদের শারীরিক দার্ঢ্যে  প্রকাশ পায়। যাঁরা বলছেন আমাকে আড়ষ্ট লেগেছে তাঁরা কি একটু ভেবে দেখেছেন যে ওই একই সময় তো আমি শ্রীময়ী সিরিয়ালে রোহিত সেনের রোলে অভিনয় করেছিলাম, প্রায় দেড় বছর ধরে। রোজই তো টিভির পর্দায় দেখা যেত। তখন তো কেউ বলেননি যে আমি ওই দোষে দুষ্ট। তাহলে নিশ্চই কিছু একটা ভেবেই এই চরিত্রায়নটা করেছি, তাই না? কিন্তু তলিয়ে ভাবার সময় কোথায়! মোবাইল চিৎকার করে ডাকছে, ওরে পৃথিবীতে কত কিছু ঘটছে, FOMO FOMO!!! 

তবে আনন্দের বিষয় হল যে, সমবেত ফিডব্যাক অনুযায়ী ৮০% মানুষ আমাদের এই সম্মিলিত প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়েছেন। সেটা তাঁরা মুক্তকন্ঠে স্বীকার করেছেন এবং তাঁদের মুগ্ধতা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা নোটবই কলম নিয়ে দেখতে বসা বিদগ্ধ চলচ্চিত্র বোদ্ধা নন, মূলত বিনোদনের জন্যই চলমান-চিত্র প্রত্যক্ষ করে থাকেন, তা সে বড়পর্দা, ছোটপর্দা বা অনু-পর্দাই হোক না কেন। তাঁদের আমি  আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও বুকভরা ভালোবাসা জানাই। আগামীতে, অন্তত ব্যক্তিগতভাবে, আমি শুধু তাঁদের কথা মাথায় রেখেই কাজ করব।

একটি উপমা দিয়ে শেষ করছি। আমি অনেকটা পাড়ার সেই ছোট্ট মিষ্টির দোকানের মত। এক চিলতে ঘর, টিমটিম করে আলো জ্বলছে, শো কেসে মোটে ৮-১০ টা আইটেম রাখা। বড় রাস্তার মোড়ে, ঝকঝকে বড়, ব্র্যান্ডেড দোকান আছে। বিপুল মিষ্টির সম্ভার। তবুও পাড়ার মুষ্টিমেয় কিছু বাসিন্দা আমার এই ক্ষুদ্র দোকানে আসেন, জলখাবার সারতে। কোন ফ্লায়িং কাস্টমার খেয়ে যদি বলেন যে; ওহে ময়রা, মিষ্টিটা ঠিক জমল না। তুমি এই ভাবে বানাও। তাহলে আমি বিনীতভাবে ওঁকে জবাব দেব যে আপনি ওই বড় দোকানে যান। বেশ দামী তবে আপনার মনের মত মিষ্টি পাবেন। কিন্তু সন্দেশে কতটা চিনি দেব বা সিঙ্গাড়াতে কতটা আলু পুরবো সেটা আমি ঠিক করব। খদ্দের নয়। পছন্দ হলে খাবেন না হলে...'

.